সাম্প্রতিক ব্যাংক নিউজ

মুখ বন্ধ হয়ে গেছে আর ব্যাংকও কেমন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে!

ব্যাংকে টাকা তোলার লাইনে দাড়িয়ে আছেন এক ভদ্রলোক। ভদ্রলোক হলো সেই ধরনের মানুষ যারা ভি‌ড়ের ম‌ধ্যে বা যেখানে কিছু লোক জড়ো হয়েছে সেখানে উচ্চ স্বরে কথা বলে নিজের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে। নিজে একজন অভিজ্ঞ এবং অনেক জানাশোনা আছে- এমন ধারনা দিয়ে অন্যদেরকে মুগ্ধ করার চেষ্ঠা করে!

ভদ্রলোক লাইনে দাড়িয়ে উসখুস করছেন। লাইন এগুচ্ছে না। এক সময় মৃদুস্বরে বললেন, দুনিয়ার কোথাও লাইন নাই, ব্যাংকে এলেই লাইন।কয়েকজন লোক তার দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল, কিন্তু কেউ তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাল না।

এ ধরনের লোকেরা উপস্থিত লোকদের পক্ষে কথা বলে কিভাবে বাহবা নিতে হয় ভালো করেই জানে। তিনি এবার বললেন, সাধারণ পাবলিকের ক্ষেত্রেই লাইন। ভেতরে ভেতরে ষ্টাফদের পরিচিত কত লোক লাইনে না দাড়িয়ে টাকা উঠিয়ে নিচ্ছে! এদেশে সব আইন দূর্বলদের জন্য!

এবার উপস্থিত জনতার মধ্যে গুঞ্জন শুরু হলো। কেউ কেউ হাসিমুখে তার দিকে তাকাল। একজন বলে উঠল, ঠিক বলেছেন ভাই। সামান্য কিছু টাকা উঠাব, এক ঘন্টা ধরে দাড়িয়ে আছি। সারাটা দিন যদি ব্যাংকেই কাটাতে হয় আর কাজ করব কিভাবে?

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

জনতার সমর্থন পেয়ে ভদ্রলোক গলা আরও চড়ালেন। যতো অঘা-মঘা লোককে ডেস্কে বসিয়ে রেখেছে। একজনকে টাকা দিতেই যদি এক ঘন্টা লাগে, পাবলিক যাবেটা কই? এরা চাকরিতে কিভাবে যে ঢুকছে? খোঁজ নিয়ে দেখেন, এদের পেছনে টাকা বা মামা-খালুর জোর আছে।

পাশ থেকে এক লোক উৎসাহিত গলায় বলল, হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি কথা বলেছেন। আমার এক আপন ভাগ্নে চারটাই ফাস্ট ক্লাস, তিন বছর ধরে অফিসের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে, চাকরি হচ্ছে না।

❏ ভদ্রলোক বললেন, পকেটের জোর বা মামার জোর না থাকলে এদেশে কিছুই হয় নারে ভাই!
❏ একলোক বাইরে থেকে এসে হঠাৎ লাইনের আগে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। সবাই চেঁচিয়ে উঠল।
❏ ভদ্রলোক উঁচু গলায় বললেন, লাইনে এসে দাড়ান। আমরা সকাল থেকে লাইনে দাড়িয়ে আছি… আর উনি এসেই…

অফিসের মধ্যে বেশ হট্টগোল। যে অফিসার ডেস্কে বসে পেমেন্ট দিচ্ছিল, সে এক মুহুর্তের জন্য বসে নাই। এক নাগাড়ে কাজ করে গলদঘর্ম হচ্ছিল। ম্যানেজার চেম্বার থেকে পুরো পরিস্থিতি লক্ষ্য করছিলেন। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে ক্যাশ কাউন্টারে ঢুকলেন। ভদ্রলোককে ডাকলেন।

❏ আপনি কি টাকা তুলবেন, না টাকা জমা দেবেন?
❏ ভদ্রলোক বলল, টাকা তুলবো।
❏ কত টাকা?
❏ বিশ হাজার।
❏ দেন চেক দেন।
❏ ভদ্রলোক ম্যানেজারকে চেকটি দিলেন।

লাইন থেকে গুঞ্জন উঠল। ‘আগে নেবেন কেন? সিরিয়াল মেনটেন করেন!’ ভদ্রলোক আগে চেক দিতে পারায় মনে মনে বেশ খুশি। তিনি বিড় বিড় করে বললেন, আরে চেক দেখাচ্ছি… লাইনেই তো আছি… এতো অস্থির হচ্ছেন কেন…।

❏ ম্যানেজার কম্পিউটারে চেক পরীক্ষা করে গম্ভীর মুখে বললেন, আপনার একাউন্টে তো এত টাকা নেই!
❏ ভদ্রলোক বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
❏ বলেন কী! কদিন আগেই তো আমি এক লাখ টাকা জমা দি‌য়ে গে‌ছি।
❏ সরি, আপনার ব্যালেন্স নাই।
❏ ম্যানেজার ভদ্রলোককে চেক ফেরত দিয়ে দিলেন।

❏ ভদ্রলোকের মাথা ঘামতে শুরু করেছে। মুখ পাংশু হয়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, তাহলে কত টাকা আছে?
❏ এক হাজার টাকার কাছাকাছি।
❏ ভদ্রলোকের প্রায় অজ্ঞান হবার দশা।
❏ দেখেন আপনাদের কোথাও ভুল হয়েছে?
❏ কোনো ভুল হয়নি। আপনার এক লাখ টাকার জমা ভাউচার কোথায়? সেটা দেখান।
❏ ভদ্রলোক বললেন, ওটা তো সাথে করে নিয়ে আসিনি।

❏ ঠিক আছে। আপনি ঐ সোফায় গিয়ে বসেন। আমরা চেক করে দেখছি। আমাদেরকে এক ঘন্টা সময় দিতে হবে।
❏ ভদ্রলোক হড়বড় করে বললেন, হ্যাঁ… হ্যাঁ… আপনারা ভালো করে চেক করেন। আমি বসছি। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! এমন হলে ব্যাংকে টাকা রাখবো কিভাবে?

ভদ্রলোক সোফায় গিয়ে বসলেন। কনকনে ঠান্ডা এসির মধ্যেও তিনি কুলকুল করে ঘামছেন। তার সামনে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দেয়া হয়েছে। তিনি ছুয়েও দেখলেন না। চোখে ফাঁকা দৃষ্টি। মনে হচ্ছে কিছুই দেখছেন না। লাইনের লোকজন তার দিকে কৌতুহলী চোখে তাকাচ্ছে। সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। মুখের কথা একদম বন্ধ হয়ে গেছে!

ম্যানেজার তার চেম্বারে ফিরে গেলেন। এক ঘন্টার মধ্যে লাইনের সব লোকের পেমেন্ট দেয়া শেষ হয়ে গেল। ম্যানেজার আবার চেম্বার থেকে উঠে ধীরেসুস্থে ক্যাশ কাউন্টারে এলেন। ভদ্রলোককে চেক নিয়ে আসতে বললেন। সাথে সাথে চেক পোস্টিং দিয়ে টাকা দিয়ে দিলেন।

❏ ভদ্রলোক স্তম্ভিত হয়ে বললেন, আপনি কী আমার সাথে মজা করলেন?
❏ ম্যানেজার মিষ্টি হেসে বললেন, জি আপনার সাথে একটু মজা করলাম! নিশ্চয়ই আপনি লক্ষ্য করেছেন আপনার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে! ব্যাংকও কেমন ঠাণ্ডা হয়ে গেছে!

কার্টেসিঃ এ.এস. রিপন, ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button