ব্যাংকিং প্রফেশন চ্যালেঞ্জিং কেন?

মোঃ আমিনুল ইসলামঃ ব্যাংকিং প্রফেশন চ্যালেঞ্জিং কেন? ব্যাংকিং পেশা আমাদের দেশের অন্যতম সম্মানজনক ও কাঙ্ক্ষিত পেশাগুলোর একটি। অনেকেই মনে করেন ব্যাংকে চাকরি মানেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চেয়ার-টেবিলে বসে আরামদায়ক কাজ। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই পেশা শুধু মানসিক চাপ নয় বরং সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই, লক্ষ্যমাত্রার বোঝা ও নানাবিধ ঝুঁকি নিয়েই এগিয়ে চলে। ব্যাংকারদেরকে প্রতিদিনই মোকাবেলা করতে হয় কঠিন পরিস্থিতি, নৈতিকতা রক্ষা এবং গ্রাহকসেবায় নিখুঁত থেকে নিজের অবস্থান ধরে রাখার লড়াই।
কেন ব্যাংকিং পেশা চ্যালেঞ্জিং?
ব্যাংকিং পেশা চ্যালেঞ্জিং কারণ এতে উচ্চ প্রতিযোগিতা, কঠোর আইন-কানুন মানা, ঋণ ঝুঁকি ও সাইবার হুমকি মোকাবিলা করতে হয়। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহার, গ্রাহক সেবা, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ও টার্গেট পূরণের চাপ কর্মীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তাই ব্যাংকিংয়ে দায়িত্ব, ঝুঁকি ও দক্ষতার সমন্বয় অপরিহার্য। ব্যাংকিং পেশা কেন চ্যালেঞ্জিং তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকার বিষয়ক লেখা সমূহ
লক্ষ্যমাত্রার চাপ (Target Pressure):
প্রতিটি ব্যাংকারকে মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয়— যেমন: ডিপোজিট সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ বা ক্রস সেল। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে কর্মস্থলে চাপ, প্রতিবেদন ও প্রমোশন বন্ধের শঙ্কা থাকে।
| ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
গ্রাহকসেবা ও মানসিক চাপ:
প্রতিদিনই ব্যাংকারদের শত শত গ্রাহকের বিভিন্ন চাহিদা, জিজ্ঞাসা ও অভিযোগের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত আবদার বা রূঢ় ব্যবহার সহ্য করে যেতে হয়। এতে মানসিক চাপ তৈরি হয়, যা ঘরে ফিরে যাওয়ার পরেও থেকে যায়।
লেনদেনজনিত ঝুঁকি ও সতর্কতা:
একটি ছোট ভুল, যেমন- টাকা কম দেওয়া, বেশি দেওয়া বা ভুল অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা—ব্যাংকারের চাকরি ও সুনামের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। তাই প্রতিটি কাজ করতে হয় চূড়ান্ত সতর্কতায়।
দীর্ঘ সময় কাজ:
অনেক সময় নির্ধারিত ৫টা বা ৬টার পরে কাজ শেষ হয় না। বিশেষ করে মাস শেষ, বছরের শেষ বা অডিটের সময় অতিরিক্ত সময় কাজ করতে হয়। পারিবারিক জীবন ও ব্যক্তিগত সময় ব্যাহত হয়।
প্রযুক্তিগত ঝুঁকি ও সাইবার নিরাপত্তা:
ব্যাংকিং এখন অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর। এর ফলে ব্যাংকারদেরকে সাইবার ঝুঁকি, সফটওয়্যার বিভ্রাট বা হ্যাকারদের আক্রমণের সম্ভাবনার মুখেও কাজ করতে হয়।
জাল নোট ও প্রতারণা:
অনেক সময় জাল নোট শনাক্ত করা যায় না কিংবা কৌশলে প্রতারকরা ভুয়া কাগজে ঋণ নিতে চায়। এসব প্রতারণা রোধ করতে গিয়ে ব্যাংকারদেরকে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তা ও সতর্কতার সাথে কাজ করতে হয়।
রেগুলেটরি ও কমপ্লায়েন্স চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিয়ম-কানুন প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়ম মেনে কাজ করাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই:
যেখানে সুযোগ আছে, সেখানে অনৈতিকতা আসার সম্ভাবনাও থাকে। কিন্তু একজন সৎ ব্যাংকারকে সবসময় এই ফাঁদ থেকে নিজেকে দূরে রেখে শতভাগ সততার সাথে কাজ করতে হয়।
সব চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকি ও মানসিক চাপের মধ্যেও অসংখ্য ব্যাংকার আছেন যারা নিঃস্বার্থভাবে সততা, নৈতিকতা ও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও জনগণের সঞ্চয় সুরক্ষায় ব্যাংকারদের অবদান অনস্বীকার্য। একদিকে তাঁরা গ্রাহকের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করেন, অন্যদিকে জাতির অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তোলার পেছনে নিরব শ্রম দেন।
ব্যাংকিং পেশা যতটা গ্ল্যামারাস মনে হয়, বাস্তবতা কিন্তু ততটাই কঠিন ও সংগ্রামী। এই পেশার সাথে যুক্ত মানুষগুলো প্রতিদিন যে চ্যালেঞ্জ, চাপ ও ঝুঁকির মধ্য দিয়ে যান, তা আমরা বাইরে থেকে বুঝি না। তবে সত্যি হলো—যদি একজন ব্যাংকার সততা, আন্তরিকতা ও দক্ষতা নিয়ে কাজ করেন, তবে তিনি কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নয় বরং একটি জাতির অর্থনৈতিক ভিত গঠনের সৈনিক হয়ে ওঠেন।
লেখকঃ মো: আমিনুল ইসলাম, ব্যাংকার



