ব্যাংকার

নিরবে একজন ব্যাংকারের চলে যাওয়া

কর্মক্ষেত্রে কষ্টের সীমাবদ্ধতা মানুষকে চাপিয়ে রাখে। কিন্তু; জীবন ঝুঁকির সীমাবদ্ধতা সবকিছু পাল্টে দিতে পারে। এমনকি পুরো পরিবারকে প্রভাবিত করে। কর্মক্ষেত্রের মাঝে দেখা দেয় বিষাদময়তা।

বিষাদময়তার মাঝেই শুনতে পেলাম রূপালী ব্যাংকের ডিজিএম শহীদুল ইসলাম খাঁন করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার মৃত্যুবরণ করেন। অনেকদিন যাবৎ তিনি সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়েছিলেন।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই উনার শারীরিক অবস্থার খবরটুকু নিতে চেষ্টা করতাম। দিন কয়েক আগে শুনি, উনার শারীরিক অবস্থা উন্নতির জন্য রক্তের প্রয়োজন। তখনই ভিতরটা কেমন যেন নাড়া দিয়ে উঠল। একটু আতঙ্ক এসে ভর করেছিলো।

তবে রেখে গেলেন দু:সহ স্মৃতিতে কিছু অমোঘ বার্তা। কঠিন সময়ে চলে যাওয়া মানে মনের মাঝে শুধুই দাগ কাটা নয় সকলকে নিস্তব্ধতায় ভাসিয়ে দিয়ে যাওয়া। নিয়তির অমোঘ ধারা পেরিয়ে আসা সম্ভব ছিল না বলেই হয়তো ফিরে আসা হল না। উনি রূপালী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন বলে আমরা যারা রূপালী ব্যাংকে চাকরি করি তাদের কাছে ছিলেন অতি আপনজন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

প্রাণসঞ্চারকালে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে উঠে আসে মহামারীর প্রকোপ। কখনো ভাবা হয়নি, সারা পৃথিবীকে এমন আতঙ্কের শেষ সীমানায় নিয়ে যাবে। কর্মময় জীবনকে প্রাণচাঞ্চল্য করে রাখতে কর্মক্ষেত্রে সঙ্কটকালীন সময়েও তিনি অফিসে আসতেন। সেবা প্রদানের নিমিত্তে আবদ্ধ ছিলেন বলেই সবসময় কর্মক্ষেত্রে চষে বেড়িয়েছেন। মহামারীর সময়েও এতটুকু পিছপা হতে দেখা যায়নি।

জনগণের সেবার কথা বিবেচনা করেই অফিসে কাজ করতেন। উনার তরেই বুঝতে পেরেছি, কর্মস্পৃহা কিংবা কর্ম চাঞ্চল্যের বৈচিত্র্যময়তা। কখনো কেউ যদি সেবাদানে ব্রতী থেকে প্রাণপণ যুদ্ধ করে যান তবে তার সেবার মাঝে আশ্চর্য কিছু লুকিয়ে থাকে যা আমরা শুধু অনুভব করতে পারি। উনি চলে গেলেও উনার কর্মময় জীবন বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে উনার উপস্থিতি।

সঙ্কটকালীন সময়ে আমরা যারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছি তাদের একজন যদি এভাবে কাঁদিয়ে চলে যায় তবে আমাদের ভগ্ন হৃদয়টুকু আরও দুর্বল হয়ে আসবে। ফিরে পাবো না প্রাণে স্পন্দন। মহামারীর এই সঙ্কটময় মুহূর্তে আপনাদের মত ভালো মানুষেরা পাশে থাকতেন বলে কর্সস্পৃহায় উদ্যম ছিল। কঠিন সময়ে সাহস যোগাবার মতো একজন চলে গেলে জায়গাটুকু পূর্ণ হওয়ার নয়।

প্রতিটা খারাপ খবর আরও দু:সহ যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে আসে যদি সেটা হয় সময়ের কঠিন মুহূর্তে। নিজেকে সামলে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা আর ফিরে পাব না উনার উপস্থিতি। অনুভব করবো শুধু ভালবাসার স্পন্দনটুকু।

অফিসে সহকর্মীদের কেউ কেউ দেখবেন উনার ডেস্কটি খালি পড়ে আছে। ডেস্কটি হয়তো কিছুদিন খালি পড়ে থাকবে। ডেস্কের ওপাশ থেকে চিরচেনা হাসি দিয়ে এখন কেউ বলতে আসবে না কেমন আছেন? অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে উনার হাতের লিখা চোখে পড়লে হয়তো আবারো ভেসে আসবে চিরচেনা মুখখানা। আর দেখা যাবে না ব্যাংকের ডেস্কে বসে কিছু লিখে যাচ্ছেন।

কর্মস্থলের আনন্দটুকু বিলিন হয়ে আসবে। নিস্তব্ধতার আঁধারে দু’একজন আবারো খুঁজে ফিরবে উনাকে। হয়তো এভাবেই মলিন হৃদয়ে কেটে যাবে দিন সকল। তারপর একদিন ঠিক হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে উনার ডেস্কে অন্য একজন লিখতে আসবে। কিন্তু, এ ঘোরটোপের মাঝে তাড়া করে বেড়াবে দু:সহ স্মৃতিতে জেগে থাকা বিষাদময় যন্ত্রণা। হয়তো কেউ কেউ স্মৃতির কাতরতায় দু:সহ যন্ত্রনায় দিনগুলো এভাবেই অতিবাহিত করবেন।

মাঝে মাঝে তাকিয়ে না বলা কথাটুকু খুঁজে ফিরবে উনার পরিবার। কারো কারো নিরানন্দে কেটে যাবে অনেকগুলো বেদনা ভরা দিন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে প্রতিটি মুহূর্ত। তবে, কর্মক্ষেত্রে যারা প্রথম থেকেই উনার সহযোদ্ধা ছিলেন, তাদের মনকে কি বলে সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাবেন!

অনজন কুমার রায়, ব্যাংক কর্মকর্তা ও লেখক। প্রিন্সিপাল অফিসার, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, বন্দর বাজার শাখা, সিলেট। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button