ব্যাংকার

করোনাকালীন সময়ে ব্যাংকারদের সেবা

এপ্রিল-মে মাসের সাধারণ ছুটিতে অন্যান্য জরুরি সেবা, যেমন: হাসপাতাল, থানা, সরকারি বিভিন্ন কন্ট্রোলিং অফিস, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মতো ব্যাংকও খোলা ছিল। দেশের এই ক্রান্তিকালেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংকাররা সাগ্রহে সেবা দিয়েছেন। মানুষের জমায়েত কম যেন হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ব্যাংক খোলা ছিল সপ্তাহের বিশেষ বিশেষ দিনে, কর্মঘণ্টাও ছিল কম। ব্যাংকে তো সব ধরনের মানুষের প্রবেশ ঘটে; সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। কে করোনা আক্রান্ত নন, বুঝতে পারা যাবে না। সাধারণ ছুটিতে অফিস করা একজন ব্যাংকারের জন্য কঠিন ছিল কারণ, একে তো গণপরিবহন বন্ধ; তারপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বারবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই জানতেন না, ব্যাংক খোলা রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে। এরপর তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হয়। যাতায়াতের সমস্যা দূরীভূত হলেও বিশেষ সমস্যায় পড়েন নারী ব্যাংকাররা। রাস্তায় গণপরিবহন বন্ধ, খুব সীমিত আকারে চলত রিকশা, যার ভাড়াও অনেক বেশি এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও দেশের কথা, দশের কথা ভেবে আমরা সেবা দিয়েছি। বিশেষত, অর্পিত দায়িত্ব যা একজন ব্যাংকার চাকরির শুরুতে মেনে নিয়েই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। আর এই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই নীরব ঘাতক করোনার শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ ফিরে আসেননি, চলে গেছেন অজানা মায়ার টানে। করোনা জয় করে অনেক ব্যাংকার আবার নীরবে জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মিডিয়ায় খুব বেশি আসেনি ব্যাংকারের করোনা জয়ের গল্প। ব্যাংকাররা অনেকটা নিভৃতেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

দেশের এই মহামারিতেই শুধু নয়, অন্যান্য সময়েও, যেমন: বন্দরের পণ্য খালাস বা ঈদের সময়ে গার্মেন্টকর্মীদের বেতন-বোনাস পরিশোধ, নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার প্রয়োজনে ছুটির দিনে ব্যাংক কর্মকর্তারা অফিসে কাজ করেন। তখন তাদের কোনো কর্মঘণ্টা থাকে না। এ ছাড়া ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়সহ সরকার নির্ধারিত অন্য সময়েও শুক্র-শনিবার ব্যাংকার অফিসে হাজির হয়ে থাকেন। ব্যাংকিং সেবাকে যুগোপযোগী করা, সেবার পরিধি বৃদ্ধি এবং গ্রাহকের সুবিধার জন্য কিছু কিছু ব্যাংক সান্ধ্যকালীন ব্যাংকিং ব্যবস্থা, অফশোর ব্যাংকিং চালু করেছে। কিছু ব্যাংক নিয়মিত সরকার নির্ধারিত বয়স্ক-বিধবা ভাতাসহ দুস্থদের অন্যান্য ভাতা প্রদান করে, বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করে, সরকারি বিভিন্ন চালান গ্রহণের কাজ করে থাকে।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতাদিও ব্যাংকের মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাদের ব্যয় নির্বাহ করার পর অতিরিক্ত মুনাফা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে নিজস্ব ফান্ড থেকে বিভিন্ন সময়ে শীতার্তদের কম্বল বিতরণ, বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণসহ অন্যান্য সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে। করোনাকালেও বিতরণ করেছে পিপিই, মাস্কসহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী। আর দেশের সাধারণ মানুষের টাকা জমা করা ও টাকা উত্তোলনের আস্থাশীল ও নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো ব্যাংক।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

করোনার সময়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা দ্বিধাহীনভাবে সেবা দিয়েছেন। সম্প্রতি কিছু বেসরকারি ব্যাংক তাদের কর্মীদের বেতন কমানোসহ অন্যান্য সুবিধা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ কাজ করছে। তাই বিষয়টিতে সঠিক সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আবার হাসপাতালগুলোতে করোনার সময়ে রোগীদের বেশ ভিড় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা ও করোনাকালীন দায়িত্ব পালনকারী করোনায় আক্রান্ত ব্যাংকারদের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষ বিবেচনায় বেড, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর প্রাপ্তিসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদান করা হলে ব্যাংককর্মীদের করোনাকালীন দায়িত্ব পালনে মনোবল বৃদ্ধি পাবে।

করোনার ভয়াল থাবা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে; এ থাবা থেকে বাংলাদেশও বাদ পড়েনি। সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকার তাগিদে সাধারণ ছুটি তুলে নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী নির্দেশনায় চিকিৎসকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ করোনাযুদ্ধে শামিল হয়েছেন। ব্যাংকাররাও করোনাযুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে দেশের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের অংশ হিসেবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে অত্যুষ্ণভাবে কাজ করছেন। স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হলেও করোনাযুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।

লেখকঃ ফাত্তাহ তানভীর রানা
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কর্মরত
ইমেইলঃ fattahtanvir@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button