ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার নতুন নীতিমালা জারি

ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণার নতুন নীতিমালা জারি – দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার নীতিমালা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালায় ব্যাংকগুলো আগের পুঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোন নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা থেকে কার্যকর হবে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ, ২০২৫) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন এ তথ্য জানায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট চাপ মোকাবিলা করে ব্যাংকগুলো যাতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে, সে উদ্দেশ্যে ব্যাংকগুলোর মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন কাঠামো অধিকতর শক্তিশালী ও সুসংহত করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় ২০২১ সালে মার্চে এক সার্কুলারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার নীতিমালা জারি করে। যা অদ্যাবধি কার্যকর রয়েছে।
বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যাংকসমূহের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নতুন নীতিমালায় লভ্যাংশ বিতরণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলো হলো
ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ২২ ও ধারা ২৪ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত এ সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। কেবলমাত্র বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা হতে নগদ লভ্যাংশ প্রদান করা যাবে। পূর্বের পুঞ্জীভূত মুনাফা হতে কোন নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করা যাবে না।
| ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সিআরআর ও এসএলআর ঘাটতিজনিত আরোপিত দণ্ডসুদ ও জরিমানা অনাদায়ী থাকা যাবে না। ব্যাংকের শ্রেণীকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের হার মোট ঋণ ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের অধিক হবে না। ঋণ, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে কোন প্রকার সংস্থান ঘাটতি থাকা যাবে না।
প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে কোন প্রকার ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ করা হলে প্রদত্ত ডেফারেল সুবিধা বহাল থাকা অবস্থায় কোন প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে না।
ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও
নতুন নীতিমালার শর্তগুলো সম্পূর্ণ পরিপালনকারী ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও এর হার দ্বারা নির্ধারিত হবে। এক্ষেত্রে, ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও বলতে ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ এবং ব্যাংকের কর পরবর্তী মুনাফা অনুপাতকে নির্দেশ করে।
নতুন নীতিমালার শর্তগুলো সম্পূর্ণ পরিপালনকারী ব্যাংকগুলো নিচের শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে। তবে ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনক্রমেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের অধিক হবে না। যে সকল ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে।
সেক্ষেত্রে, তাদের ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের অধিক হবে না এবং লভ্যাংশ বিতরণ পরবর্তী মূলধন পর্যাপ্ততার হার (ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার) কোনভাবেই ১৩.৫ শতাংশের নিচে নামতে পারবে না। যে সকল ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটান কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২.৫ শতাংশের অধিক কিন্তু ১৫ শতাংশের কম মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সে সব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে।
সেক্ষেত্রে, তাদের ডিভিডেন্ড পেআউট রেশিও সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশের অধিক হবে না এবং লভ্যাংশ বিতরণ পরবর্তী মূলধন পর্যাপ্ততার হার (ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার) কোনভাবেই ১২.৫ শতাংশের নিচে নামতে পারবে না। প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর যে সকল ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের হার ১২.৫ শতাংশের কম তবে ন্যূনতম রক্ষিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি হবে সে সকল ব্যাংক, তাদের সামর্থ্য অনুসারে কেবলমাত্র স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে।
নীতিমালা অনুসারে লভ্যাংশ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক/সিইও’র স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।


