ব্যাংকার

সহকর্মী: অফিসের ভেতরের আত্মীয়

প্রণব চৌধুরীঃ সহকর্মী: অফিসের ভেতরের আত্মীয় – সহকর্মীকে কিভাবে সজ্ঞায়িত করা যায়? একই বসের রাগ ভাগ করে নেওয়া কিছু মানুষ? কিংবা সহকর্মী কি শুধুই পাশের চেয়ারে বসা কেউ? কতভাবেই তো ব্যাখ্যা করা যায়, তাই না? কিন্তু আমার কাছে সহকর্মী হচ্ছেন সেই মানুষ, যার সঙ্গে আপনার ক্লান্তি, হাফডে, কর্তৃপক্ষের রাগ, কাস্টমারের জ্বালাতন, সব ভাগ করা যায়! অফিসে ঢোকার পর প্রথমে যার দিকে তাকান, তিনিই তো আপনার সহকর্মী।

আমাদের একেকজন সহকর্মী একেক রকম। কেউ রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেন দ্রুত, কিন্তু চা খেতে নিচে নামেন তিনবার! কেউ কাজ কমপ্লিট না হতেই বলে, “ভাই, সিস্টেম স্লো!” আবার কেউবা কম্পিউটারের স্ক্রিণের সামনে বসে থাকেন ঠিকই যেন কাজে খুবই মনোযোগ, অথচ মনটা ফেসবুকে! কেউ আছেন, যিনি সব জানেন, কিন্তু কাউকে বলেন না। আবার কেউ আছেন, নিজে না জানলেও এমনভাবে বোঝান, মনে হয় গভর্নর স্যারও উনার কাছে শিখেন!

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকিং নিয়মাবলী: সচেতন গ্রাহক ও সুশৃঙ্খল সেবা

কেউ একজনের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হন, কেউবা সেটা নিজের সাফল্যই মনে করে বসেন। কারও হাসি আমাদের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়, কেউ আবার নিজের ছুটি বাদ দিয়ে আমাদের কাজটা করে দেয়। কিন্তু যেটা সত্য সেটা হলো, এই মানুষগুলোই আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

পদ-পদবী আলাদা হতে পারে, বেতনেও হেরফের হয়, তবুও অফিসে একেকজন সহকর্মী যেন একেকটা সাপোর্ট সিস্টেম। কারও মুখে হয়তো কৃতজ্ঞতার ভাষা নেই, তবু আচরণে থাকে মমতার ছায়া। কোনো ক্লান্ত দুপুরে হয়তো নিঃশব্দে এগিয়ে আসে এক কাপ গরম চা, যা শুধু শরীর নয়, মনকেও জাগিয়ে তোলে। আবার কখনো টেবিলের নিচে পড়ে থাকা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিঃশব্দে টেনে তুলে নেয় কেউ, যেন বোঝাতে চায় “আপনি একা নন”।

চাপের সময় হয়তো কেউ সরাসরি কিছু বলে না, কিন্তু চোখে মুখে, আচরণে, হাসিতে এমনকি চুপচাপ পাশের চেয়ারটা বসার মধ্যেও থাকে এক ধরনের মানসিক সাপোর্ট। যারা অফিসের নিরব বন্ধু, তারা জানে কখন পাশে দাঁড়াতে হয়, আর কখন শুধু চুপ করে পাশে বসেই উপস্থিতি জানাতে হয়।

সহকর্মী মানে শুধু টার্গেট, রিপোর্ট আর কাজের মাঝে ডুবে থাকা মানুষ নয়। অনেক সময় তারা হয়ে ওঠে দিনের সবচেয়ে বড় ভরসা। যাদের ছোট্ট একটি ইঙ্গিত, হাসি, কিংবা এক কাপ চা, সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দিতে পারে। যখন একজন ক্লান্ত হয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে, তখন পাশের সহকর্মীর “চিন্তা করবেন না, আমি আছি”—এই কথাটাই সবচেয়ে বড় সহায় হয়ে থাকে। এই তো… এটাই তো সহকর্মিতা।

প্রতিযোগিতা থাকে, ভুল বোঝাবুঝিও হয়, তবু দিনশেষে আমরা একে অন্যের ছায়া হয়ে থাকি। শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা—সকল সহকর্মীর জন্য, যারা নিজের ক্লান্তিকে আড়াল করে, অন্যকে শক্তি দেন। রাগ হয়, ঝগড়া হয়, চায়ের কাপে ঝড় তোলা হয়, কিন্তু দিনশেষে সহকর্মী মানে অফিসের ভেতরের আত্মীয়। শুভকামনা আমার সকল সহকর্মীর প্রতি।

লেখকঃ প্রণব চৌধুরী, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সোনালী ব্যাংক পিএলসি, প্রিন্সিপাল অফিস, সিলেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button