মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা ব্যাংকাররাও ঝুঁকি ভাতা ও প্রণোদনা প্রার্থী

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চরম আর্থিক মন্দার দিকে ধাবমান গোটা বিশ্ব। বস্তুত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে করোনার প্রভাব।
এ পরিস্থিতি উত্তরণে এখন থেকেই নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। সম্ভাব্য ক্ষতি প্রশমনে ১৬ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা তহবিল চূড়ান্ত করেছে বিশ্বব্যাংক। করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও। প্রধান রফতানি খাত গার্মেন্ট শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, পর্যটন শিল্পসহ প্রায় সব ধরনের বাণিজ্য খাত। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঁচটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পদক্ষেপগুলো হল- উন্নয়ন ব্যয় কমানো, নজরদারি বাড়িয়ে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করা, স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ জোর দেয়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানো এবং ব্যবসায়ীদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা। আমরা আশা করি, সরকার অবিলম্বে এ বিষয়গুলোয় নজর দেবে।
পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংকট এবং আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছে, এটি সত্য। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির মতো অবস্থা তৈরি হয়নি গত কয়েকশ’ বছরেও। কাজেই এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিটি দেশের সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের সরকারও এদিকে দৃষ্টি দেয়া শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তবে এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।
| ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা ব্যাংকাররাও ঝুঁকিভাতা ও প্রণোদনা প্রার্থী। কেন এবং কি কারণে আমরা ব্যাংকাররাও এই ঝুঁকি ভাতা ও প্রণোদনা প্রার্থী তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
০১ ঈদকে কেন্দ্র করে অফিস খোলা:
ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ, ব্যবসায়ীদের দাবি উঠল পশু বিক্রির অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। সার্কুলার হল চাঁদ রাত অবধি ব্যাংকের বিশেষ বিশেষ শাখা খোলা থাকবে। ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ব্যাংকাররা অফিস করছে। নিজেদের কোরবানীর গরু কেনার সময় নেই অথচ গ্রাহকদের গরু কেনার অর্থ ও গরু বিক্রির অর্থ জমা উত্তোলন নিয়ে ব্যস্ত। ডাকাত পড়লো, ব্যাংক লুট হলো, আবারও দায়ী সেই ব্যাংকাররা। ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করতে পারার অভিযোগ। চাকুরি গেল, সন্তান ও পরিবার নিয়ে অসহায় জীবনযাপন। অন্য ব্যাংক ও চাকরি দেয়নি, ইনকমপিটেন্ট অফিসার।
০২ রাজস্ব আহরণের জন্য অফিস খোলা:
৩০ জুন, ৩১ জুলাই, ৩০ নভেম্বর সরকারী ছুটির দিন সার্কুলার হলো সরকারী রাজস্ব আহরণের স্বার্থে ট্যাক্স প্রদানের জন্য ব্যাংকসমূহের বিশেষ বিশেষ শাখা খোলা থাকবে। আমরাও ব্যাংক খুলে রাখলাম। অন্য প্রফেশনের লোকজন যখন বাসায় পরিবারের সাথে ছুটি কাটাচ্ছে তখন ব্যাংকারা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারী রাজস্ব আহরণের স্বার্থে কাজ করে চলছে। পরিবার সমাজ হতে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি।
০৩ দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি থাকায় অফিস খোলা:
শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে ঈদের টানা ৯ দিন ছুটি হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দাবি জানাল বৈদেশিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হবে। দাবির প্রেক্ষিতে সার্কুলার হলো তিন দিনের বেশি ছুটি নয়। যথাযথ নিরাপত্তা গ্রহনপূর্বক ব্যাংকের বিশেষ শাখা খোলা থাকবে। আমরাও ঈদের আনন্দ জলাঞ্জলি দিয়ে খোলা রাখলাম। যাদের আগে ঢাকা ছাড়ার টিকিট কাটা ছিল বাতিল বা অর্থ গচ্চা গেল। সবাই বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড় আর আমাদের ব্যাংকের দুয়ার খুলে গ্রাহকদের সেবাদান চলছে। জাতীয় দায়িত্বের বিপরীতে আমাদের পরিবার সন্তানদের আশা আকাঙ্খার বলিদান দিয়ে দিলাম।
০৪ পরিবারকে সময় না দিতে পারা:
প্রতিদিন ভোরে সন্তানরা জেগে ওঠার আগেই আমরা বের হই। আর জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অলিখিত ৩-৪ ঘন্টা ওভারটাইম করে ক্লান্ত দেহে যখন বাসায় ফিরে কলিং বেলে চাপ দিলাম তখন স্ত্রী দরজা খুলে অভিমানী চোখের ইশারা বেল না দিয়ে পারনা, বাবু ঘুমাচ্ছে। সন্তান আর এ ব্যাংকার প্রাণীদের মাঝে বিস্তর দুরত্ব। অনেক ব্যাংকারকে নাকি সন্তানরা বাবা ডাকতেই ভুলে গেছে।
০৫ করোনায় ঝুঁকি নিয়ে অফিস করা:
আসলো করোনা আতঙ্ক, আবারো ডাক্টার, পুলিশ, হসপিটাল, মিডিয়া ও আমরা দায়িত্ব পালন করছি। আমরা টাকা গুনছি, প্রতিদিন শত শত গ্রাহকের সংস্পর্শে আসছি, চীন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র হতে আসা আমদানীর ডকুমেন্ট স্পর্শ করছি প্রতিনিয়ত। হয়ত হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি। তবে কোভিড-১৯ যতটা ছোঁয়াচে তাতে পিপিই ছাড়া কতটুকু সুরক্ষিত আমরা?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমাদের অনেক ব্যাংকারেরই ইন্সুরেন্স সুবিধা নেই, ঝুঁকি ভাতা নেই, পেনশন নেই। আমাদের অনেকের সন্তানরা এখনও একলা চলতে শেখার বয়স হয়নি। সবাই যখন এই ভয়াল দুঃসময়ে ঘরে তখন আমরা অর্থনীতির স্বার্থে বাইরে, অফিস করছি হাজারো মানুষের ভিড়ে। প্রতিদিন বের হই আর ফেরার সময়ে ভাবি এই কি কোভিড-১৯ এর বাহক হয়ে সন্তান বা স্ত্রীর কাছে বাসায় ফিরছি?
হয়ত বিজিএমএ, বিকেএমএ, বিটিএমএ এর মত শক্তিশালী ফোরাম আমাদের নেই, তবে আমরাও দেশের অর্থনীতির ভিত ঠিক রাখতে এই দুঃসময়ে লড়াই করে যাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা চলে গেলে আমাদের অনেকের সন্তান ও পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে। তাই আমাদের জন্য কিছু করুন, আপনার তহবিল হতে ব্যাংকারদের জন্য একটি ঝুঁকি তহবিল গঠন করুন, আমাদের পরিবার ও সন্তানদের আর্থিক নিশ্চয়তা দিন।
লেখক: আতিকুর রহমান (পরিমার্জিত ও সংযোজিত)




