অর্থনীতি

২০২০ অর্থনৈতিক মন্দায় স্থবির হবে বিশ্ব

নানা ঘটনা আর বাক বদলের মধ্য দিয়ে শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে ২০১৯। বিশ্বরাজনীতিতে বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাত এ বছর অর্থনীতিতেও ছাপ ফেলেছে। দরজায় যখন ২০২০ কড়া নাড়ছে, তখন বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা। বিশ্বের অন্তত ১১টি বড় অর্থনীতির দেশে মন্দার আভাস ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা ২০০৯ সালের পর আরেকটি বৈশ্বিক মন্দার হাতছানি দিচ্ছে। এ দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, মেক্সিকো, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর ও হংকং ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০১৯ এ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩.২ শতাংশ। যা ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন। আর ২০২০ সালেও প্রবৃদ্ধি থাকবে ৩ এর ঘরে। ব্যাংক অব আমেরিকাও একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধসহ বেশ কিছু কারণে বিশ্বজুড়ে শিল্পোৎপাদন কমেছে, করপোরেট আস্থা কমেছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও কয়েক বছরে সর্বনিম্ন। এ অবস্থায় ২০০৯ এর পর ২০২০ এ বিশ্বে আরেকটি মন্দার কবলে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর বিজনেস ইকোনমিস্ট (এনএবিই) এক জরিপে জানিয়েছে, আগামী দুই বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মন্দায় পড়তে যাচ্ছে। যার ফলে আক্রান্ত হবে গোটা বিশ্ব। বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আক্রান্ত হয়েছে। আর ইউরোপের অর্থনীতিতে আচড় কাটছে ব্রেক্সিট ইস্যু। অন্যদিকে সৌদি-ইরান উত্তেজনার প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে।

বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ জার্মানিকে বলা হয় ইউরোজোনের প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বান্ডেজ ব্যাংক ইতিমধ্যেই মন্দার সতর্কতা জারি করেছে। বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধে রপ্তানি কমেছে জার্মানির। এতে করে পুরো ইউরোপের অর্থনীতিই কৌশলগতভাবে মন্দায় পড়তে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মন্দা এড়াতে বার্লিনকে নগদ প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ইউরোজোনের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ ইতালির উৎপাদনশীলতাও এ বছর কমেছে। উচ্চ বেকারত্ব ও ব্যাপক সরকারি ঋণের পাশাপাশি দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। দেশটি গত বছর মন্দায় পড়েছিল। এবারও একই অবস্থা। তাছাড়া ইতালির অনেক পণ্য জার্মানি যায়, ফলে জার্মানির মন্দা ইতালিকেও ভোগাবে। ইউক্রেন সংকটকে ঘিরে আমেরিকা ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দরপতনে কয়েক বছর যাবৎই নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে রাশিয়া। এ বছরও অবস্থা বদলানোর কোনো ইঙ্গিতই মিলছে না।

বিশ্ব অর্থনীতির আরেক শক্তিধর দেশ দক্ষিণ কোরিয়া এ বছরের প্রথমভাগে একটি মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০.৪ শতাংশ সংকুচিত হয়। সৌভাগ্যবশত দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে ১.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ফেরে। কিন্তু বহির্বিশ্বে পণ্যের চাহিদা কমার পাশাপাশি জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে সংকটে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইএনজি জানায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশটির ইলেকট্রনিকস রপ্তানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।

অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী মেক্সিকোও। দেশটির সেবাখাতে আয় কমেছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ০.২ শতাংশ সংকুচিত হয়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ০.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে মন্দা এড়ানো গেলেও দেশটিতে বিনিয়োগ ও ব্যাবসায়িক আস্থা কমেছে।

লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ ব্রাজিলে শিল্পোৎপাদন কমার পাশাপাশি বেকারত্ব বেড়েছে ব্যাপকভাবে। দেশটির অর্থনীতি ০.২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ২০২০ এ দেশটির অর্থনীতি বড় ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিঙ্গাপুর ও হংকং ছোট অর্থনৈতিক দেশ হলেও এখনো বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। এ দেশগুলোও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভুগছে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে ৩.৩ শতাংশ সংকুচিত হয়। আর হংকংয়ে টানা কয়েক মাসের বিক্ষোভের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি।

অর্থনীতির আরেক পরাশক্তি ভারত চলতি বছরের শুরু থেকেই ধুঁকছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) গত বুধবার প্রকাশিত রিপোর্টে জানিয়েছে ভারতের অর্থনীতি মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এডিবি জানায়, আগামী অর্থবছরে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি পাঁচ দশমিক এক শতাংশের আশেপাশে থাকবে। ভারতে বেকার সমস্যা আগামী বছর আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে আভাস মিলছে। এ অবস্থায় ২০২০ সালে ভারতের অর্থনীতি বড় চাপের মুখে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশ্বের এই বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মন্দার ধাক্কা ছোট দেশগুলোর ওপরও পড়বে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে ২০২০ সালটা বৈশ্বিক মন্দার হুমকি নিয়েই আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button