ব্যাংক গ্রাহকব্যাংক হিসাব

মৃত ব্যক্তির হিসাবে গচ্ছিত টাকা কে পাবে নমিনী নাকি ওয়ারিশ?

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ১০৩ ধারা এবং এ সংক্রান্ত বিআরপিডির সার্কুলার নং-০৬/২০১৭ অনুযায়ী কোন একাউন্ট হোল্ডার/ আমানত জমাকারী যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে একাউন্টে গচ্ছিত টাকা নমিনী পাবেন।

এক্ষেত্রে ব্যাংকের করনীয় হচ্ছে মৃত ব্যক্তির একাউন্টে গচ্ছিত টাকা নমিনীকে প্রদান করা। কোন ওয়ারিশ/ ওয়ারিশগণ উক্ত টাকার মালিকানা দাবি করলে তিনি/ তারা প্রচলিত আইন অনুযায়ী (আদালতের মাধ্যমে) উক্ত টাকার মালিকানা দাবি করতে পারবেন। ব্যাংক নমিনীকে গচ্ছিত টাকা প্রদান করবেন আর মালিকানা সংক্রান্ত কোন বিষয় থাকলে তা আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।

এক্ষেত্রে, মালিকানার দাবিকারী/ দাবিকারীগন ব্যাংকে লিখিত অভিযোগ দিলেও সেটা গ্রহণযোগ্য নয়, ব্যাংক নমিনীকে টাকা প্রদান করে দিবেন। কেবল আদালতের চূড়ান্ত কোন নির্দেশনা থাকলে সেটা বিবেচ্য হতে পারে।

আইনগত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ
উল্লেখ্য, একাউন্ট হোল্ডার/ আমানত জমাকারী যদি মৃত্যুবরণ করেন তাহলে একাউন্টে গচ্ছিত টাকা নমিনী পাবেন এটাই প্রশ্নাতীত ভাবে বহুকাল হতে চালু আছে। কিন্তু গত ০৩ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে সঞ্চয়পত্রের অ্যাকাউন্টধারী মারা গেলে ওই সঞ্চয়ের টাকা নমিনীর (মনোনীত ব্যক্তির) পরিবর্তে ব্যক্তির উত্তরাধিকারী পাবেন বলে রায় দিয়েছিল মহামান্য হাইকোর্ট। রায় বলা হয়েছে, নমিনি হবেন একজন ট্রাস্টি। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী নমিনি টাকাটা উত্তোলন করে উত্তরাধিকারীদের মাঝে বণ্টন করে দেবেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এর পরপরই কিছু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পূর্বের জারি করা সার্কুলারের বিষয়ে পুনরায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয় একাউন্টে থাকা টাকা নমিনীর কাছেই হস্তান্তর করতে হবে, তবে সেই টাকার মালিকানার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তীতে, হাইকোর্টের ওই রায় প্রকাশের বেশ কিছুদিন পর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায়কে স্থগিত করে দেয়।

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ১০৩ ধারায় বর্নিত বিধান অনুযায়ী- (মূল বক্তব্য ঠিক রেখে সংক্ষেপিত)
(১) ব্যাংকে কোন ব্যক্তি (গণ) আমানত জমা রাখলে তিনি/ তারা একজন বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনী মনোনীত করতে পারবেন।
– নমিনী মনোনীত করার উদ্দেশ্য হলো যাতে আমানতকারীর বা আমানতকারীগণের মৃত্যুর পর, আমানতের টাকা নমিনীকে প্রদান করা যেতে পারে।
– আমানতকারী বা আমানতকারীগণ যে কোন সময় পূর্বে মনোনীত নমিনী বাতিল করে অন্য কোন ব্যক্তিকে বা ব্যক্তিবর্গকে নমিনী মনোনীত করতে পারবেন।
(২) নমিনী নাবালক হলে, তাঁর নাবালক থাকা অবস্থায় আমানতকারীর বা আমানতকারীগণের মৃত্যু হলে, আমানতের টাকা কে গ্রহণ করবেন সেই সম্পর্কে আমানতকারী বা আমানতকারীগণ নির্দিষ্ট করে দিতে পারবেন৷

(৩) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনের বা কোন উইলে বা সম্পত্তি বিলি বণ্টনের ব্যবস্থা সম্বলিত অন্য কোন প্রকার দলিলে যা কিছুই থাকুক না কেন, আমানতকারী বা আমানতকারীগণের মৃত্যুর পর আমানতের টাকার যাবতীয় অধিকার নমিনী লাভ করবেন। অন্য যে কোন ব্যক্তি উক্ত অধিকার দাবি করলেও সে ব্যক্তি উক্ত অধিকার পাবেন না।
(৪) এ ধারায় অধীনে ব্যাংক নমিনীকে টাকা পরিশোধ করলে সংশ্লিষ্ট আমানত সম্পর্কিত ব্যাংকের যাবতীয় দায় পরিশোধ হয়েছে বলে গণ্য হবে।

তবে অন্য কেউ উক্ত অর্থের কোন অধিকার বা দাবী করলে সেটা তিনি করতে পারেন; সেক্ষেত্রে এই উপ-ধারার বিধান প্রয়োগ বাধা হবেনা। প্রসঙ্গত, অর্থের কোন অধিকার বা দাবী করলে তিনি প্রচলিত আইন অনুযায়ী (আদালতের মাধ্যমে) তা করতে পারেন।

অন্যদিকে, মুসলিম শরীআহ্ আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পত্তি থাকলে সেখান থেকে তার দাফন কাফনের যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে। তিনি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় কোন ধার-দেনা করে থাকেন তবে তাও রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে পরিশোধ করে দিতে হবে। তার স্ত্রী বা স্ত্রীদের দেনমোহর পরিশোধিত না হয়ে থাকলে বা আংশিক অপরিশোধিত থাকলে তা পরিশোধ করে দিতে হবে। মোট কথা স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেনমোহর স্বামী মৃত অথবা জীবিত যাই থাকুক না কেন তা স্বামীর সম্পত্তি থেকে আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিশোধ করে দিতে হবে।

মৃত ব্যক্তি কোন দান কিংবা উইল করে গেলে তা প্রাপককে দিয়ে দিতে হবে। বর্ণিত সব কাজ সম্পন্ন করার পরে মৃত ব্যক্তির অবশিষ্ট সম্পত্তি ফারায়েজ আইন অনুযায়ী তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। শরিয়াত এ্যাপ্লিকেশান এ্যাক্ট ১৯৩৭ এর ২ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মুসলমানদের জন্য উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম শরিয়া আইন প্রযোজ্য হবে।

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর শর্ত অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির টাকা নমিনি পাবে। আবার শরিয়াত এ্যাপ্লিকেশান এ্যাক্ট অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন করে দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে শরিয়াত এ্যাপ্লিকেশান এ্যাক্ট ১৯৩৭ এবং ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এ দুইটি আইনের মধ্যে এ বিষয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে।

এই দুইটি আইনই স্পেশাল আইন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইন দুইটির মধ্যে কোন আইনের বিধান প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত হবে?
জেনারেল ক্লজেজ এ্যাক্ট ১৮৯৭ এর বিধান হচ্ছে দুইটি স্পেশাল আইনের ভেতরে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে যে স্পেশাল আইনটি সর্বশেষ পাশ হয়েছে সেই আইনটি প্রয়োগ করা হবে। এই ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ আইনটি সর্বশেষ পাশ হয়েছে তাই এই আইনটিই প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত হবে। সুতরাং মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া ব্যাংক এ্যাকাউন্টের টাকা পাবে নমিনী।

কখনো আদালতের ভিন্ন কোনো রায় আসলে কিংবা আইন সংশোধন হলে তখন সে অনুযায়ী বন্টন হতে পারে কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কোন একাউন্ট হোল্ডার/আমানত জমাকারী যদি মারা যায় তাহলে তার একাউন্টে গচ্ছিত টাকা নমিনীর কাছেই হস্তান্তর করতে হবে।”

লেখকঃ মোঃ আজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা।

আরও দেখুন:
ব্যাংকে রেখে যাওয়া মৃত ব্যক্তির আমানত কে পাবে?
ব্যাংক গ্রাহকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারী ও নমিনী কর্তৃক টাকা উত্তোলনের নিয়ম
মৃত ব্যক্তির টাকা কে বা কারা পাবেন?
উত্তরাধিকার সনদ কী? উত্তরাধিকার সনদ কীভাবে নেবেন?
ওয়ারিশ সনদ কেন দরকার এবং কিভাবে তুলতে হয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button