ব্যাংকার

কে বেশি গুরুত্বপূর্নঃ ব্যাংকার নাকি ডাক্তার?

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধকল্পে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গত ২৯ মার্চ, ২০২০ থেকে ২ এপ্রিল, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত ৫ দিন সকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ছুটি ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। দেশের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও খোলা থাকছে শুধু ব্যাংক এবং হাসপাতাল।

হাসপাতাল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা ভয়াবহ যুদ্ধের সময়ও খোলা থাকে। সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাক সহ যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশগুলোতে প্রচন্ড যুদ্ধের সময়ও ডাক্তাররা হাসপাতালগুলোতে সেবা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে করোনার ভাইরাস শুরু হওয়ার সাথেই হাসপাতালে, ক্লিনিক সেবা বন্ধ, চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা!

করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই রোগী ভর্তি অথবা চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন ডাক্তাররা এমন অভিযোগ এখন নিত্যদিনের। কোনো কারণে সর্দি, জ্বর, হাঁচি, কাশি, গলাব্যথা থাকলে অন্য কোনো রোগের চিকিৎসা করাতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে করতেই প্রাণ হারাচ্ছেন।

শুধু তাই নয়, স্বাভাবিক সময়ে যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক রোগীতে ঠাসা থাকত সেগুলো এখন প্রায় রোগীশূন্য। এমনকি অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বন্ধ রেখেছেন ‘প্রাইভেট চেম্বারে’ রোগী দেখাও। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতেন,করোনা সংক্রমণের পর থেকে তাদের চেম্বার বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগী নিয়ে ভীষণ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোয় একই অবস্থা বিরাজ করছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সারা দেশে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এখন অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি হাসাপাতাল রোগী শূন্য। তাহলে এসব রোগী এখন কোথায় গেল? মৃত্যুর বিরুদ্ধে মানুষের শেষ আশার স্থল এবং একমাত্র ভরসা ডাক্তার। অথচ সেই ডাক্তাররা সেবা না দিয়ে নিজেদেরকে লুকিয়ে রেখেছেন। চরম বিপাকে পড়েছেন দেশে অনেক বয়স্ক রোগী, প্রসূতী মহিলা, ডায়াবেটিস, হ্রদরোগ সহ বিভিন্ন জটিল সমস্যাগ্রস্থ ও মুমূর্ষ রোগী। বিভিন্ন ডায়ালাইসিস গ্রহণ রোগিরাও চিকিৎসা নিতে পারছেনা, কি ভয়ংকর অবস্থা!

অনেক ভোক্তভোগী বলেছেন, মুমূর্ষ রোগী নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের দারে দারে ঘুরলেও সব চিকিৎসকই চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেছেন। সরকার চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলকভাবে চিকিৎসা দেয়ার আদেশ দিলেও ডাক্তারদের দাবীর মুখে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালগুলো জেলা ও উপজেলা সদরে অবস্থিত এবং ডাক্তার এবং নার্সদের বাসস্থানের ব্যবস্থা আছে। রাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে ডাক্তার এবং নার্সরা জনগনের সেবায় এগিয়ে আসবেন এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা লক্ষ করছি জাতীর এ ক্রান্তিলগ্নে তারা সঠিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকছেন যা এদেশের মানুষকে দারুনভাবে হতাশ করেছে। তবে এটা সত্য যে, কিছু দেশ প্রেমিক চিকিৎসব করোনা রোগের চিকিৎসায় রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তারা জাতীর বীর সন্তান।

দেশের সকল সরকারি বেসরকারি পুরোপুরি বন্ধ এমনকি হাসপাতালও বন্ধ প্রায় তখন দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে ব্রতী হয়েছেন এদেশের ব্যাংকারা। সাধারণ ছুটির শুরু থেকেই ব্যাংক খোলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত কোথাও শুনা যায়নি যে ব্যাংকারা দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন। সারা দেশে নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ব্যাংক শাখা যেখানে থেকে অনেক ব্যাংকারের আবাসস্থল দুরবর্তী স্থানে অবস্থিত। ছুটির প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকারদের সকাল ১০ টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত অফিস করার নির্দেশ থাকলেও দ্বিতীয় সপ্তাহে সময় বাড়িয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের জন্য ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে ব্যাংক খোলা রাখায় বিপদে পড়েছেন ব্যাংকাররা। মনে হচ্ছে অদ্ভুত এক বাস্তবতার মুখোমুখির সম্মুখীন হয়ে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু তাঁদের ঝুঁকি হ্রাসের কোন পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছেনা। প্রতিদিন প্রবাসী সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আসছেন ব্যাংকে। অথচ ব্যাংকারদের নেই কোন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পোশাক (পিপিই)। আবার অধিকাংশ বেসরকারী ব্যাংকগুলোতে এয়ারকন্ডিশনার থাকায় বাতাস চলাচলের কোন ব্যবস্থা নাই। এর ফলে কোন করোনা ভাইরাসবাহী ব্যাংকে প্রবেশ করলে ব্যাংকার-গ্রাহক সহ অনেকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সুরক্ষা পোশাকের অজুহাতে ডাক্তাররা যেখানে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন সেখানে ব্যাংকারদের সেবা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে কেন? এ যেন ঢাল তলোয়ার ছাড়াই ব্যাংকারা এখন যুদ্ধের ময়দানে। এমনকি ছুটির দিনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেও তাদের কোন বাড়তি ভাতার ব্যবস্থাও নেই।

ব্যাংকারদের অফিসে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রেও পড়তে হচ্ছে নানারকম ভোগান্তিতে। রাস্তায় ব্যাংকার পরিচয় দেয়ার পরও তাদেরকে অফিস গমণে বাঁধা দিচ্ছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার বাহিনী। রাস্তায় গাড়ি বা রিকসা থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে ব্যাংকারদেরকে এমনকি নারী ব্যাংকাররাও ছাড় পাচ্ছেননা।

নিরুপায় হয়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ব্যাংকে যেতে হচ্ছে ব্যাংকারদেকে। লকডাউনের আওতার বাইরে থাকছে জরুরী সেবা যেমন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য, ঔষধ, ঢাক্তার, খবরের কাগজ, ফায়ার সার্ভিস ইত্যাদি। জরুরী অবস্থায় ব্যাংক খোলা থাকলেও ব্যাংকারদের পরিবহণ কেন এর আওতামুক্ত থাকবেনা বিষয়টি বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

করোনার মহামারিতে এখন রাস্তায় যুদ্ধে আছেন সামরিক প্রশাসন,অফিসে ব্যাংকার আর অল্প কয়েকটি হাসপাতালে কিছু সংখ্যক ডাক্তার। অধিকাংশ ডাক্তাররা এখনো চিকিৎসায় ফেরেননি কিন্তু সারা দেশের সব ব্যাংক শাখায় ব্যাংকাররা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন অকোতভয়ে। এ কারণে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশের এই মহামারি পরিস্থিতে ডাক্তারদের চেয়ে ব্যাংকারাই কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

লেখকঃ এম. এ. মাসুম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button