স্কুল ব্যাংকিং

ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থ সঞ্চয় করার উপায় সমূহ

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ অর্থ সঞ্চয় করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। কিন্তু তার শুরু করাটা একটি চ্যালেঞ্জ। আপনার জীবনের প্রথম অর্থ সঞ্চয় এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা শুরু করতে কি আপনি উদ্বিগ্ন? উদ্বিগ্ন হবেন না পাঁচটি উপায়ে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যেতে পারে। যথা-

১) সঞ্চয় এর উদ্দেশ্য ঠিক করা
সাধারনত সঞ্চয় করার উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়ে গেলে অর্থ সঞ্চয়ের জন্য উৎসাহ বাড়ে। তাই সঞ্চয়ের উদ্দেশ্য ঠিক করাকে সঞ্চয় শুরু করার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রথম পদক্ষেপ বলা হয়ে থাকে। নির্ধারিত উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য পরিবারের সবাই মিলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে একত্রে শুরু করা যেতে পারে। মনে রাখা দরকার যে, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাকে সহজ করে থাকে। অর্থ সঞ্চয় করাটাকে একটা আনন্দ হিসেবে নিতে পারলে সফলতা আসে। অর্থ সঞ্চয়ের আনন্দ অব্যাহত থাকা চাই। প্রতিনিয়ত পরস্পরের সঞ্চয়ের অগ্রগতির খোঁজ খবর রাখতে পারলে ভালো হয়। তাহলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবিচল থাকা যায়। নইলে লোকেরা সঞ্চয় না করার অজুহাত খাড়া করে থাকে।

২) মিতব্যয়ী হওয়া
মিতব্যয়িতার সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল-আপনি এটি জীবনের যে কোন ধাপে প্রয়োগ করতে পারেন এবং আপনি আপনার আয়ের যত অংশই সঞ্চয় করতে চান না কেন তার কৌশল একই হবে, আর তা হচ্ছে মিতব্যয়ী হওয়া। অপচয় যে করে সে অমিতব্যয়ী। অমিতব্যয়ী হওয়া খুব খারাপ। তাই অপচয় কি জানতে হবে। অপচয় হলো-মন্দ কাজে টাকা খরচ করা। আবার ভাল কাজে টাকা খরচ করতে গিয়ে-
ক) অতিরিক্ত খরচ করা;
খ) সামর্থের বাইরে খরচ করা;
গ) লোক দেখানোর জন্য খরচ করা; এবং
ঘ) আত্মপ্রচারের জন্য খরচ করা।

আল্লাহ তায়ালা অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেন- নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই। অপচয় রোধ করতে গিয়ে আবার কৃপণতাও করা যাবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারাই যারা ব্যয় করার ক্ষেত্রে সীমালংঘন করে না বরং তারা উভয় পন্থার মধ্যবর্তীতে অবস্থান করে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

নৈতিক বিবেচনার উপর ভিত্তি করে রচিত মূল্যবোধ কেন্দ্রিক বিচার ক্ষমতাকে নৈতিক ছাকুনি (Moral filter) বলে। নৈতিক ছাকুনির ব্যবহার অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে মানুষকে মিতব্যয়ী করে। এ ছাকুনি অল্প টাকায় জীবনকে সুখী করতে সাহায্য করে। নৈতিক শক্তিতে বলিয়ান করে। জীবনের অনেক ফালতু খরচ নৈতিক ছাঁকুনিতে ছেঁকে ফেলা যায়। তাতে অপচয় রোধ হয়। সঞ্চয় বৃদ্ধি হয়। মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চেতনার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। টাকার মোহমুক্ত হয় মানুষ।

তাছাড়া, আপনি যদি অর্থ সঞ্চয় করার একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করেন, তাহলে বন্ধুদেরকে পরপর এর ৩১ দিন এসএমএস অথবা ইমেইল এর মাধ্যমে অর্থ সঞ্চয় করার জন্য বার্তা পাঠান। যার বিষয়বস্তু হলো- কিছু প্রণোদনা মূলক বার্তা এবং দৈনন্দিন খরচ থেকে কিভাবে সঞ্চয় করা যাবে তার ব্যবহারিক উদাহরণসহ কিছু কৌশল বর্ণনা করা।

এ ধারনাটির দুটি দিক আছে। এটা আপনার পক্ষে যতটা অর্থ সঞ্চয় করা সম্ভব, ততটা অর্থ সঞ্চয় করতে আপনাকে সাহায্য করবে। তাছাড়া এটা আপনাকে আপনার জীবনে কী চান সেটা চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে, যা আপনি আপনার জীবনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

মিতব্যয়ী জীবনযাপন করার লক্ষ্যে আপনি নিজের জন্য অর্থ সঞ্চয়ের চ্যালেঞ্জ তৈরিও করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ- এক সপ্তাহের জন্য আপনি গাড়িতে করে অফিসে না গিয়ে সাইকেলে করে যেতে পারেন। অংশীদার হিসেবে আপনার বন্ধুদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন, যারা আপনার সাথে তাদের ধারণা বিনিময় করতে পারে। আপনার লক্ষ্য আয়ের এক-পঞ্চমাংশ দিয়ে জীবন যাপন করা নাও হতে পারে। তবে আপনার হয়তো নতুন বাড়ি কেনার লক্ষ্যে অর্থ সঞ্চয় করার মত অর্থনৈতিক লক্ষ্যও থাকতে পারে।

৩) পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জকে নিয়মিত করুন
কিভাবে অর্থ সঞ্চয়ের চ্যানেল শুরু করতে হয়, এটা যারা শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য অন্য একটি উপায় হচ্ছে অতিরিক্ত নগদ অর্থ চিহ্নিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে নিয়মিত ক্রয় খরচে পরিবর্তন। এক্ষেত্রে পণ্যের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে যে খরচ বেঁচে গিয়েছে তা আপনি সঞ্চয় করতে পারেন।

৪) কেনাকাটার তালিকা সীমিত করুন
কেনাকাটার তালিকা সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে খরচ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। একটা সম্ভাব্য উপায় হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাজার থেকে কেনার পরিবর্তে নিজে চাষাবাদ করা। অন্যদিকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঁচা পণ্য কেনা এবং পূর্বে মোড়কিকৃত অথবা তৈরি পণ্য পরিহার করার মাধ্যমে খরচ কম করে সঞ্চয় বাড়ানো যেতে পারে।

একসাথে বেশি পরিমাণে জিনিসপত্র কেনা কিংবা কাঁচা পণ্য কেনা কম ব্যয়বহুল। আমাদের নিজেদের রুটি আমরা নিজেরাই তৈরি করতে পারি। ঠিক যেমন করে রুটি মোড়কিকৃত করা থাকে ঠিক তেমন করেই আমরা তৈরি করতে পারি।

আপনার কেনাকাটার তালিকা থেকে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য বাদ দিয়ে অথবা কিছুদিনের জন্য বাদ দিয়েও আপনি সঞ্চয় করতে পারেন। যখন আপনি দেখবেন যে, আপনার সঞ্চয় বাড়ছে তখন হয়তো এমন কিছু জিনিস খুঁজে পাবেন যা আপনি ত্যাগ করতে চান না এবং তা ছাড়া বেঁচে থাকা ভাবতেও পারেন না- এমতাবস্থায় আপনাকে একজন ভালো সঞ্চয়কারী বলা যেতে পারে।

৫) সঞ্চয় ত্বরান্বিত করুন
সঞ্চিত অর্থ বাড়ানোর নিরবিচ্ছিন্ন চেষ্টা সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার আর একটি উপায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- এক সপ্তাহে ১০ টাকা সঞ্চয় করার মাধ্যমে আপনি শুরু করতে পারেন এবং এক বছরের জন্য পরবর্তী প্রতি সপ্তাহে ১০ টাকা করে যোগ করতে । সঞ্চয়কৃত অর্থ ব্যাংকে আপনার সঞ্চয়ী হিসেবে জমা করতে পারেন। তখন দেখবেন আপনার সঞ্চয় আরও বাড়ছে। কেননা ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাবে মুনাফা প্রদান করে থাকে। আপনি যদি অর্থ সঞ্চয় বাড়ানোর আর একটি মাধ্যম বিবেচনা করতে চান, সেটি হতে পারে প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট খরচের খাত যেমন, বাইরে খাওয়া কিংবা কেনাকাটা এসব থেকে খরচ কমানো। আপনি ক্রমাগতভাবে এই চেষ্টা চালিয়ে যাবেন এমন কি আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন করার পরও। প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করা সঞ্চয় পরবর্তী সময়গুলোতেও চালিয়ে যাবেন অথবা যদি সম্ভব হয় প্রতি সপ্তাহের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।

বস্তুত অর্থ সঞ্চয়ের চ্যালেঞ্জের সর্বোত্তম ফলাফল পাওয়া তখনই সম্ভব, যখন এই ধারা বজায় থাকে। সঞ্চয়কে সারাজীবনের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। অর্থ সঞ্চয় শুরু করতে জানা, আপনাকে আরো সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করবে। কিন্তু সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে সঞ্চয়কে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button