বিবিধ

ক্যাশ ওয়াকফ-চিরস্থায়ী সঞ্চয়ে কল্যাণ অফুরান

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আলোচনা করব ওয়াকফ এর সংজ্ঞা ও ওয়াকফ এর সওয়াব সম্পর্কে। ওয়াকফ সম্পদ হেবা সম্পত্তি হিসাবেও পরিচিত। ইসলামিক আইন অনুযায়ী অবিচ্ছিন্ন দাতব্য অঙ্গীকার, যা সাধারণত মুসলিম ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে বিল্ডিং, ভূমি বা অন্যান্য দানকে বুঝায় যা পুনরায় ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়না। দাতব্য সম্পদ একটি দাতব্য ট্রাস্ট দ্বারা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এমন উৎসর্গীকৃত ব্যক্তি ওয়াকিফ নামে পরিচিত, যিনি একজন দাতা।

● ওয়াকফের আভিধানিক অর্থঃ
ওয়াকফ শব্দটি আরবি وقف থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ বেঁধে রাখা, সংরক্ষিত রাখা। ওয়াকফ সম্পত্তি موقوف অর্থে প্রসিদ্ধ। এর বহুবচন اوقاف-ওয়াকফ শব্দটি আক্ষরিকভাবে “কারাবাস এবং নিষেধ” বা অন্য কোনও কারণে থামানো বা স্থির থাকা অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে।
– T P Hughes বলেন-
Waqf means standing, stopping, halting.[১]

● ওয়াকফের পারিভাষিক অর্থঃ
শরীয়তের পরিভাষায় কোন বস্তু আল্লাহর মালিকানাই রেখে তার উৎপাদন বা উপলক্ষে গরীবদের মধ্যে কিংবা যেকোন কল্যাণকর খাতে দান করাকে ওয়াকফ বলা হয়।
– The term waqf literally means “confinement and prohibition” or causing a thing to stop or stand still.[২]

– T P Hughes বলেন-
A term which in the language of the law signifies the appropriation or dedication of property to charitable uses and the service of God.[৩]
সাধারণভাবে জায়গা-জমি ও স্থাবর সম্পত্তি ওয়াকফ করা হয়। তবে ইসলামী চিন্তাবিদ ও বিজ্ঞ ফকীহগণের মতে অস্থাবর সম্পত্তিও ওয়াকফ করা যায়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

মোটকথা- ওয়াকফ একটি স্বেচ্ছামূলক ও স্থায়ী ধরনের দান যেখানে মূল সম্পদ সংরক্ষিত থাকে এবং এর আয় মানবকল্যাণে ব্যয় করা হয়। কোন জিনিস বা সম্পদ নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে স্থায়ীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত আয় অপরের কল্যাণে ব্যয় করাকে ওয়াকফ বলে।

● কুরআন ও হাদিসে ওয়াকফঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا [৪]
অর্থাৎ ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।

ওয়াকিফ এর ইন্তেকালের পরও সে দান মানবতার কল্যাণে বহাল থাকে। হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণিত। তিনি বলেন- রাসুল (স) বলেছেন-
اذا مات الانسان انقطع عنه عمله الا من ثلاث الا من صدقة جارية او علم ينتفع به او ولد صالح يدعوله [৫]
অর্থাৎ মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তিনটি কাজ ছাড়া তার আমলের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তা হল- সদকায়ে জারিয়াহ, এমন জ্ঞান যা মানুষের উপকারে আসে এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে।

হযরত ওমর (রা) বলেন-
تصدق لا يباع و لا يو هب ولا يورث ولكن تنفق ثمرته [৬]
অর্থাৎ তুমি তা এমনভাবে সাদাকা কর যে, তা বিক্রি করা যাবে না, দান করা যাবে না, উত্তরাধিকার হিসেবে বন্ঠন করা হয় না বরং এর উপযোগ ব্যয় করা হবে।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

● ওয়াকফের প্রকারঃ
ওয়াকফ দুই প্রকার-
ক. পারিবারিক (সন্তান-সন্ততির জন্য) এবং
খ. খয়রাতি (দরিদ্রদের জন্য বা কল্যাণমূলক)।
ক. পারিবারিক ওয়াকফের উদ্দেশ্য হল ভবিষ্যৎ সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়স্বজনের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
খ. কল্যাণ মূলক ওয়াকফের উদ্দেশ্য সামাজিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করা।

● ওয়াকফ কারা করতে পারবেঃ
ওয়াকফ একটি চুক্তি, অতএব প্রতিষ্ঠাতাকে (আরবী ভাষায় আল ওয়াকিফ বা আল-মুহাব্বিস) চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। ওয়াকিফের জন্য নিম্নোক্ত গুণাবলী থাকা আবশ্যক-
১. ওয়াকিফকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে।
২. ওয়াকিফকে জ্ঞানবান হতে হবে।
৩. ওয়াকিফকে আর্থিক বিষয়াদি পরিচালনা করতে সক্ষম হতে হবে।
৪. ওয়াকিফ দেউলিয়া হতে পারবে না।
ওয়াকফ একটি ইসলামিক কালচার হলেও মুসলিম হওয়ার কারণে ওয়াকফ করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে ওয়াকফ করা আপনার ইচ্ছাধীন, চাইলে করতে পারেন।

● ওয়াকফের সুবিধাভোগীঃ
ওয়াকফের সুবিধাভোগীরা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হতে পারে। ওয়াকিফ নির্দিষ্ট করে দিতে পারেন যে কোন ব্যক্তি বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য (যেমন ওয়াকিফের পরিবার, কোন সম্প্রদায়, শুধুমাত্র দরিদ্র বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি)। মসজিদ, বিদ্যালয়, সেতু, কবরস্থান ইত্যাদি ওয়াকফের সুবিধাভোগী হতে পারে।

● ওয়াকফ ক্যাশঃ
ইতিপুর্বে মানুষ সমাজের কল্যানের জন্য স্থায়ী সম্পতি জমি দান করেছেন। তৈরি করেছেন ধর্মীয় উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, রাস্তাঘাট ইত্যাদি। বর্তমানে জমি দান করার সুযোগ কমে আসলেও মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ ডিপোজিটের মাধ্যমে সমাজের কল্যানে ভুমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর পরও দান অব্যাহত রেখে সামাজিক ও মানবিক কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহন করার সহজ পদ্ধতি হলো ক্যাশ ওয়াকফ তহবিল গঠন। এ লক্ষ্যে আর্ত-মানবতার সেবায় আপনার অর্থ পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংক সমূহ চালু করেছে মুদারাবা ওয়াকফ ক্যাশ জমা হিসাব। এই হিসাবে নিয়মিত বা এককালীন দানের মাধ্যমে অর্জন করুন সদকায়ে জারিয়াহর সওয়াব। এই হিসাব থেকে অর্জিত মুনাফা বিভিন্ন ধর্মীয়, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজে ব্যয় করতে পারেন।

ক্যাশ ওয়াকফ এর বৈশিষ্ট্যঃ
ওয়াকফের লাভ হিসাবধারীদের নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক ও মানব কল্যাণে ব্যবহার করা হয়।
১. এটি শরিয়াহ সম্মত দান হিসেবে বিবেচিত।
২. ওয়াকফ শ্বাশ্বত চিরন্তন ও ওয়াকিফের দেয়া নাম চালু থাকে।
৩. ওয়াকিফ তার ইচ্ছানুযায়ী শরীয়াহ সম্মত যে কোন খাতে মুনাফার টাকা প্রদানের জন্য ব্যাংককে নির্দেশ দিতে পারে।
৪. ওয়াকিফের জন্য সমুদয় অর্থ এককালীন বা কিস্তিতে জমা করা যায়।
১০.০২.২০১৮ তারিখ এশিয়ান টেলিভিশনে একটি টকশোতে ক্যাশ ওয়াকফ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন দুজন বিশিষ্ট ব্যাংকার জনাব জাফর আলম, DMD, SIBL ও জনাব আবু রেজা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, DMD, IBBL.

  • টকশোতে ক্যাশ ওয়াকফ নিয়ে আলোচনার ভিডিওটি দেখুন

● তথ্যসূত্রঃ
১. Thomas Patrick Hughes, Dictionary of Islam, page 664
২. Hassan (1984) as cited in HS Nahar and H Yaacob, 2011, Accountability in the Sacred Context: The case of management, accounting and reporting of a Malaysian cash awqaf institution, Journal of Islamic Accounting and Business Research, Vol. 2, No. 2, pp. 87
৩. Thomas Patrick Hughes, Dictionary of Islam, page 664
৪. সূরা কাহাফ, আয়াত-৪৬
৫. সহীহ মুসলিম, অসিয়ত অধ্যায় ও তিরমীযি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-১৬৫
৬. ফাতহুল কাদীর ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা-২০৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button