বিবিধ

জেগে উঠুন লিডার, জাগিয়ে তুলুন ইমপ্লয়িকে

সেই তাে রিয়েল লিডার। যিনি মানুষের অসহায় অবস্থায় কাধে হাত দিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখান। হাসিমুখে ভুলগুলাে ধরিয়ে দেন। যিনি সংকটে থাকেন সবার আগে। অনুপ্রেরণা হয়ে। করােনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে লিডারশীপ ক্যারিশমা দেখানাের এইতাে সময়। জেগে উঠুন লিডার। জাগিয়ে তুলুন আপনার ইমপ্লয়িকে। আপনার লােক আপনার সম্পদ। যারা সব পরিস্থিতিতে আপনাকে ফুলে- ফলে ভরে দিয়েছে।

আজ বিশ্বজুড়ে সকল ওয়ার্কফোর্স কমবেশি চিন্তিত আয় উপার্জন নিয়ে। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে, পরিবার নিয়ে। বিকল্প চিন্তা, নতুন উদ্ভাবন নিশ্চয়ই হবে। কিন্তু আপনি লিডার- আপনাকে সর্বাগ্রে থাকতে হবে, দৃঢ়তা আর আস্থার প্রতীক হয়ে। আপনি তাদের অভয় দিন, পাশে দাড়ান, শেয়ার করুন আপনার মানবিক ফিলিংসগুলাে।

ইতিহাস থেকে একজন লিডারের গল্প শুনি। অ্যান্টার্কটিক অনুসন্ধানী (explorer) আর্নেস্ট শ্যাকলটন এর লিডারশিপের কথা। ১৯১৫ সালে রওনা হন এন্টার্কটিকা’র উদ্দেশ্যে। দ্য ইনডুরেন্স নামক জাহাজে করে। একপর্যায়ে প্রতিকূল আবহাওয়ায় জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরবর্তীতে আইসবার্গে আটকে যায়। তিনি ও তার টিম বরফের ঠাণ্ডায় মারা যাওয়ার উপক্রম। শ্যাকলটন ঘােষণা দেন, প্রত্যেকে যার যার দায়িত্ব পালন করবে। নাবিকরা ডেকে থাকবে। সাইন্টিস্ট নমুনা সংগ্রহ করবে। অন্যরা খাদ্য সংগ্রহ করবে।

তিনি ভাবলেন ‘ডেইলি রুটিন’ পালনের মাধ্যম এই অনিশ্চিত সময়কে জয় করা যাবে। চলমান সংকটে লিডাররা তার কর্মীদের এইভাবে উৎসাহ দিতে পারেন। প্রত্যেকেই যার যার আঙিনায় নিশ্চয়ই দায়িত্ব পালন করবে। প্রয়ােজনীয় সেবাগুলাে চালু রাখা মানুষষের জীবনের জন্য প্রয়ােজন। যেমন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ, হাসপাতাল, ব্যাংক, ফার্মেসি, খাদ্য সামগ্রী বহনকারি গাড়ি, মুদি দোকান, ঔষধ ফ্যাক্টরি, টিকা বা ভ্যাকসিনসহ যেকোনাে গবেষণা, গরিব বা সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সাহসী লিডাররা সময়মতাে ভুল সংশােধন করেন। তারা বুঝে ফেলেন গৃহীত সিদ্ধান্ত সঠিক নয়, ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে হবে। আইরিশ অনুসন্ধানী আর্নেস্ট শ্যাকলটন দীর্ঘদিন অন্ধকারময় বরফে সময় পার করলেন। আশে-পাশে কোন মানব বসতি পেলেননা। তিনি ফিল করলেন, উদ্ধারের কোনাে আশা নেই। সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন, সারভাইভ করার নতুন মিশন শুরু হয়। তার টিমের একটা অংশ ৩টি ছােট নৌকায় করে ৮০০ মাইল ঝড়-ঝঞ্জাপূর্ণ উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেন। পৌছান অজানা এক দ্বীপে।

চারমাস পর তারা তাদের প্রকৃত আইল্যাণ্ডে (যেখান থেকে যাত্রা শুরু হয়) ফিরে আসেন। এই ইতিহাসে আমরা অনুপ্রাণিত হতে পারি। আপনার ওয়ার্কফোর্সকে আপনি বলতে পারেন, সামনে এগুনাের পরিকল্পনা করতে, নিজের ডেভেলপমেন্টে ব্যস্ত থাকতে। এই ডেভেলপমেন্ট দ্রুতই আপনার নেতৃত্বকে আরও বলিষ্ঠ করবে। উৎপাদনের লক্ষ্যে বিকল্প পথ অনুসন্ধান করা চাই। সাময়িকভাবে তারা হয়ত ব্যর্থ হতে পারে কিন্তু একদিন না একদিন নতুন আলাে দেখা যাবে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সময়ের দাবি। এটি মেনেই এগুতে হবে।

এই ক্রাইসিসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে যােগাযােগ মেইনটেইন করতে পারেন। পরিকল্পনা শেয়ার করতে পারেন। সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যায় সে সম্পর্কিত বিষয়ে। আপনার ওয়ার্কফোর্সকে জানিয়ে দিন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আপনি কি কি করেছেন। সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় কারখানা/ অফিস বন্ধ হলে তাদেরকে আপনার অবস্থান খােলাখুলিভাবে বলুন। আপনার সামর্থ্যের মধ্যে থাকলে তাদেরকে আপনি আগামী কয়েকটা মাস বেতনভাতার ব্যবস্থা করুন। নিশ্চয়ই তারা আপনার অবদানের কথা মনে রাখবে। সুযােগ পেলে ফিরিয়ে দেবে আপনাকে নতুন দিনের কর্মস্পৃহা দিয়ে।

হার্ভাড বিজনেস রিভিউ এর লেখক ন্যান্সি কোহেন তার Real Leader are Forged in Crisis আর্টিকেলে বলছেন হাই র‍্যাংকের এক্সিকিউটিভ হিসেবে পুরাে কোম্পানির ফ্লাগ আপনার হাতে। তিনি লিডারদেরকে বলছেন- নিজের যত্ন নিন, ফিজিক্যালি, ইমােশনালি এবং স্পিরিচুয়ালি। আপনার খেয়াল রাখা উচিত কখন আপনি কর্মব্যস্ত হবেন আর কখন রেস্টে যাবেন। তিনি আরও বলছেন, গ্রহণ করুন পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, এক্সারসাইজ প্রতিদিন। তিনি পরিবারের কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন, সময় দিন লাইফ পার্টনারকে ও বাচ্চাদেরকে। ভার্চুয়ালি খোঁজ নিন বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনদের। পরিকল্পনা করুন দিনে অন্তত ৩০ মিনিট করে ২ বার ডিভাইসমুক্ত জীবণ কাটানাের।

তিনি বলছেন কিছু একটা চর্চা করুন। করােনা ভাইরাস ঝুঁকি কবে হ্রাস পাবে এবং কবে এর সমাপ্তি ঘটবে। এটির কোন নিশ্চয়তা নেই। করােনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে কোন দেশ কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাও অনুমান করার সময় হয়নি। তবে আমরা যদি এই সংকটকে ইনােভেশন বা লানিং এর জন্য কাজে লাগাতে পারি সেটি হবে অনন্য অর্জন-নতুন পৃথিবী গড়ার পথে। আসুন আমরা সংকটকে পজিটিভভাবে কাজে লাগাই। হতাশ না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ করি। মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি।

লেখকঃ বান্না হাসান, ব্যাংক কর্মকর্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button