ফিনটেকবিকল্প ব্যাংকিং

ভয়েস ব্যাংকিং…আর কত দূর?

আব্দুল্লাহ আল-মামুনঃ আপনার মোবাইলটি যদি আপনার কন্ঠ চিনত এবং শুধু আপনি জিজ্ঞেস করলেই আপনার এ্যকাউন্টের ব্যালান্স বলত, অন্য কেউ শতবার জিজ্ঞেস করলেও না বলত তবে কি আপনার এত কষ্ট করে এ্যপ এর পাসওয়ার্ড মনে রেখে, নির্দিষ্ট মেনুতে যেয়ে ব্যালান্স জানতে হত? জী ঠিক এই ম্যাজিকটির নামই ভয়েস ব্যাংকিং। এটা এখন আর সায়েন্স ফিকশন কিম্বা ইউরোপ, আমেরিকার কান্ট্রিতেই না আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেই এই ভয়েস ব্যাংকিং শুরু হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল, ২০২০ ইন্ডিয়ার বিখ্যাত ICIC Bank চালু করেছে এই ভয়েস ব্যাংকিং। এ্যমাজনের এ্যলেক্সা কিম্বা গুগল এ্যসিস্ট্যান্ট এর মত ডিপ লার্নিং বেজড ভয়েস এ্যসিস্ট্যান্ট এর সাথে ব্যাংক এপিআই এর ইন্টিগ্রেশন এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।

কিভাবে কাজ করে এই ভয়েস ব্যাংকিং?
আপনার ভয়েসকে ট্রেনিং করিয়ে নেয়ার পর আপনার ব্যাংক এ্যকাউন্ট এ্যলেক্সা (Amazon এর তৈরী ভয়েস এ্যসিস্টেন্ট) এর সাথে ট্যাগ করলেই শেষ। এখন শুধু জিজ্ঞেস করুন এ্যলেক্সাকে। সাথে সাথে আপনার ভয়েস রিকগনিশন এবং অথেনটিকেশন শেষ করে মুহুর্তেই আপনার এ্যকাউন্ট ব্যালান্স আপনার রেজীস্টার্ড মোবাইলে পাঠিয়ে দিবে। ভয়েস দিয়ে ক্রেডিট কার্ডের বিল এবং ডিউ ডেট জানতে চাইলেও আপনার রেজীষ্টার্ড মোবাইলে পাঠিয়ে দিবে SMS. আর যদি লোনের ইন্টারেষ্ট রেট কত কিম্বা FDR খুলতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে, এই টাইপের জেনারেল প্রশ্ন করেন তবে ভয়েসের মাধ্যমেই সে শুনিয়ে দিবে আপনার প্রয়োজনীয় উত্তর।

ভয়েস ব্যাংকিং কে আর একটু শক্ত সিকিউর করতে আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ, ফান্ড ট্রান্সফার কিম্বা ফিনান্সিয়াল ট্রাঞ্জেকশনের পুর্বে ভয়েস OTP (One Time Password) দেয়া। এবং এই OTP আপনার মোবাইল থেকে শুধু আপনার ভয়েস দিয়ে বললেই কাজ করবে। সেম OTP আমার ভয়েসে বললে কন্ঠ সনাক্তকরনের মাধ্যমে Invalid হতে হবে। এতে করে কেউ OTP দেখে ফেললে কিম্বা আপনার ফোন হারিয়ে গেলেও, যে কেউ এই ভয়েস OTP ব্যবহার করতে পারবে না।

Amazon এ্যলেক্সাতে ইতোমধ্যে “CELO” স্কিল নামে একটা অপশন যুক্ত করেছে যার মাধ্যমে এলেক্সাকে আপনি ইংলিশের বিপরীতে লোকাল ভাষা ট্রেন করাতে পারবেন। কিন্তু এটা এখনও রিসার্চ পর্যায়ে আছে। তাই বাংলা ভয়েস রিকগনিশন নিয়ে আরো জোড়ালোভাবে আমাদের কাজের সময় চলে এসেছে। তরুন প্রকৌশলীদের বাংলা OCR, বাংলা ভয়েস রিকগনিশন, লাইভনেস ডিটেকশন ইত্যাদি হাইটেক রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ করে দিতে না পারলে বাইরের কোম্পানী এসে অনায়াসে এই বাজার দখল করে নেবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আমার একান্তই ব্যক্তিগত একটা মতামত দিয়ে লেখাটি শেষ করি। ব্যাংকের কাজ ব্যাংকিং। টেকনোলোজী ইনোভেশনের কাজ ব্যাংকের না হয়ে এটা হওয়া উচিৎ ফিনটেক enterprenor-দের। এই সহজ কথাটি না বুঝলে ফিনটেক ইনোভেশনে আমরা বেশি দূর আগাতে পারব না। এই ইকোসিস্টেম রেডী করতে ব্যাংক, প্রযুক্তি কোম্পানী এবং নীতি-নির্ধাকদের একসাথে কাজ এখনই শুরু করা দরকার।

ভয়েস ব্যাংকিং কি আমাদের দেশে শুরু হওয়া উচিৎ? আপনি কি ভাবছেন এই কাটিং এজ ফিনটেক ভয়েস ব্যাংকিং নিয়ে? কিম্বা ব্যাংক এর কি ফিনটেক ইনোভেশনে বেশী সময় না দিয়ে ব্যাংকিং মেইন স্ট্রীমে মনোযোগ দেয়া উচিৎ? নিবন্ধটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বিডি ডটকম-এ। টেকনোলোজীর পার্টটা নতুন ফিনটেক উদোক্তাদের উপর ছেড়ে দেয়া উচিৎ? আসুন কমেন্টে হোক আলোচনা…

লেখকঃ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বি.এসসি (সিএসই, কুয়েট), এম.এসসি (আইসিটি, বুয়েট), আইটি ম্যানেজার, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। এক্স-সিনিয়র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button