ইসলামী ব্যাংকিংবিশেষ কলাম

দেশ-বিদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের জয়যাত্রা

মো. জিল্লুর রহমানঃ ইসলাম মানবজীবনের সব দিক নিয়ে আলোকপাত করে। ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা কোনো ব্যতিক্রমী চিন্তার বিষয় নয়। সুদমুক্ত আর্থিক পরিষেবা শিল্পের সঙ্গে ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ব্যাংকিং ব্যবস্থা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক অবদান রাখছে। ইসলামি ব্যাংকগুলো কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং ইসলামি অর্থের দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে সম্প্রতি বাংলাদেশের দুটি প্রচলিত তফসিলি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এনআরবি গ্লোবাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে ১০টিতে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আরও ১৯টি প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইন্ডো রয়েছে। তাছাড়া তিন দশক ধরে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি শরিয়াহ্ভিত্তিক বেসরকারি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে চালু রয়েছে।

ইসলামিক ব্যাংকিং মূলত সুদবিহীন ব্যাংকিং নামে পরিচিত এবং এটি ইসলামি বা শরিয়াহ্ আইনের নীতিগুলোর ভিত্তিতে এবং ইসলামি অর্থনীতি দ্বারা পরিচালিত একটি স্বতন্ত্র ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দুটি মূলনীতি হলো মুনাফা ও ক্ষতির অংশীদারিত্ব এবং পুঁজি সরবরাহকারী ও বিনিয়োগকারীদের দ্বারা সুদ আদায় ও প্রদান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামি আইনে সুদ বা রিবা সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ। কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ ব্যবসাকে করেছেন হালাল আর সুদকে করেছেন হারাম (সুরা আল বাকারা: আয়াত ২৭৫) এবং এটাই ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ও উপাদান।

মূলত ইসলামি ব্যাংকিংয়ের আর্থিক লেনদেন হালাল সম্পদ ও ইক্যুইটি বা অংশীদারিত্বের ওপর ভিত্তি করে নৈতিক বিনিয়োগের একটি স্বতন্ত্র রূপ। যেমন, মদ, জুয়া, শুয়রের মাংস, তামাক ও অন্যান্য নিষিদ্ধ আইটেমের সঙ্গে বিনিয়োগ ইসলামি অর্থ ব্যবস্থায় নিষিদ্ধ। এ ব্যবস্থায় ঝুঁকি ও লাভ-ভাগাভাগি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয়, বিনিয়োগ সমাজকে প্রসারিত করে এবং সম্পদের অর্থায়ন অর্থনীতির ভিত্তিকে মজবুত রাখে। ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা এই প্রতিবন্ধকতাগুলো সমাধান করে এবং তাদের মৌলিক কার্য সম্পাদন করার জন্য বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করেছে, যেমন আমানত গ্রহণ, বিনিয়োগ প্রদান এবং আমানত ও বিনিয়োগ থেকে মুনাফা অর্জন। এক্ষেত্রে শরিয়াহ্ বোর্ডগুলো ত্রুটি-বিচ্যুতির সংশোধন, সঠিক পরামর্শ এবং প্রচলিত অর্থের অতিরিক্ত ব্যয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষাকারী হিসাবে কাজ করে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ইসলামি ব্যাংকিং বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা ও আগ্রহ সৃষ্টি করেছে এবং ইসলামি ব্যাংকিং বাংলাদেশেও একটি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী অর্জন অক্ষুণœ রেখেছে এবং এই ব্যবস্থাটি এখন বাংলাদেশের পুরো ব্যাংকিং শিল্পের ২৭ শতাংশেরও বেশি বাজারের অংশীদার। যদিও বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের বেশি অর্জন করেছে, তবে এই ব্যবস্থার আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ গত তিন দশকে ছয় শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং এখানে ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

ইসলামি অর্থায়নের অন্যতম মূল ভিত্তি হলো মুরাবাহা, যেখানে দুটি পক্ষই মার্ক-আপ বা সম্মত লাভের দামে বাণিজ্য করতে সম্মত হয়। যেমন, কোনো ব্যাংক একটি গাড়ি ১০ হাজার টাকায় কিনতে এবং এক বছরের বাকি কিস্তিতে তার গ্রাহকের কাছে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে। প্রচলিত অর্থায়নে ব্যাংক জামানত হিসাবে গাড়িটি ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট সুদের হারে অর্থ ঋণ দেয়, অন্যদিকে যখন মুরাবাহা লেনদেন করে ব্যাংক তখন পণ্যটি কিনে তার গ্রাহকের কাছে সম্মত লাভে বিক্রি করে। অন্যান্য আর্থিক উপকরণ এবং উপায় হলো যেমন ইজারা (ভাড়া বা লিজ), মুদারাবা (সাধারণত বিনিয়োগকারী ও পরিচালকদের মধ্যে লাভের ভাগাভাগি), মুশারাকা (যৌথ উদ্যোগ), সুকুক (ইসলামিক বন্ড) ও তাকাফুল (ইসলামি বিমা) এবং এসব ইসলামি আর্থিক পদ্ধতিগুলো খুচরা ও করপোরেট ব্যাংকিং, প্রাইভেট ইক্যুইটি এবং বিমা শিল্পে প্রসারের অনুমতি দেয়। মুশারাকা (যৌথ উদ্যোগ) যদিও ইসলামি অর্থ ব্যবস্থার আদর্শ পদ্ধতি, কিন্তু এটির বিকাশ ও প্রসার সম্পূর্ণরূপে মানুষের সততা ও উঁচু নৈতিক মানদণ্ডের ওপর নির্ভর করে।

মুসলমানরা ১৯৭৫ সালে প্রথম ইসলামি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুবাই ইসলামিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আগে ১৪ শতকে তাদের ধর্মীয় নীতি অনুসারে আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ এবং সংরক্ষণ করেছিল, কিন্তু গবেষণার অভাবে সেভাবে প্রসার লাভ করেনি। ১৯৭৫ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী কয়েকশ ইসলামিক ব্যাংক চালু হয়েছে, মালয়েশিয়া থেকে মিশিগানে কোটি কোটি মুসলিম অমুসলিম ইসলামিক আর্থিক পণ্য ব্যবহার করছে। মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ সক্রিয়ভাবে উদীয়মান এবং ক্রমবর্ধমান এ আর্থিক ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করছে।

ইসলামিক ব্যাংকিং হলো ইসলামি অর্থনীতির বৃহত্তম খাত। এই খাতে সম্পদের ৭১ শতাংশ বা এক দশমিক ৭২ ট্রিলিয়ন ডলার অবদান রাখে। এই খাতটি বাণিজ্যিক, পাইকারি ও অন্যান্য ধরনের ব্যাংকের একটি চক্র দ্বারা সমর্থিত। তবুও বাণিজ্যিক ব্যাংকিং এই খাতের প্রবৃদ্ধির প্রধান হাতিয়ার। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য অমুসলিম দেশসহ ৫১টিরও বেশি দেশে ২০৭টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোসহ ৫০৫টি ইসলামি ব্যাংক ছিল। তবে সম্পদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অবশ্যই শিল্পের আকারের পরিচায়ক নয়। ইসলামি অর্থব্যবস্থার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার সৌদি আরবে উইন্ডোজসহ ১৬টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে, যা মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারের চেয়ে ছোট।

এটি মুসলিম বিশ্বের বাইরেও ইসলামিক অর্থ ব্যবস্থার শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্র, যেমন যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাগুলোর সম্পদ মোট পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যারা ইসলামিক আর্থিক পরিষেবা দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাজ্য ইসলামি অর্থায়নের পশ্চিমা কেন্দ্র হিসেবে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ২০টিরও বেশি ব্যাংক ইসলামিক সেবা প্রদান করে এবং এর মধ্যে আল রায়য়ান ব্যাংকসহ পাঁচটি ব্যাংক পুরোপুরি শরিয়াহ্ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সম্পদের আকারের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামিক আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী শীর্ষ তিনটি ব্যাংক হলো আমেরিকান ইসলামিক ফিন্যান্স হাউস, ইউনিভার্সিটি ব্যাংক (তার সহায়ক সংস্থা ইউনিভার্সিটি ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল) এবং হার্ভার্ড ইসলামিক ফিন্যান্স প্রোগ্রাম।

বিশ্বব্যাপী ইসলামিক আর্থিক সম্পদ যেখানে ২০০৭ সালে ছিল ৬০০ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও কম, ২০১২ সালে এটি এক দশমিক তিন ট্রিলয়ন ডলারেরও বেশি বেড়েছে এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় আর্থিক সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও ধর্মীয় বিষযগুলো মেনে চলার কারণে হালাল পণ্যগুলোর জন্য ভোক্তাদের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সম্পদগুলো মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশগুলোয় কেন্দ্রীভূত থাকলেও খাতটি পশ্চিমা বাজারগুলোয় প্রবেশ এবং প্রচলিত অর্থায়নের পরিপূরক হিসেবে প্রস্তুত বলে মনে করা হয়।

প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে সাধারণত ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের দুটি সুবিধা বা বিশেষত্ব লক্ষ করা যায়। প্রথমটি এই ধারণাটি যে ইসলামি ব্যাংকগুলো একটি উচ্চতর নৈতিক মানের সঙ্গে আবদ্ধ, তারা বেপরোয়া ঝুঁকি গ্রহণ করে না, বা তাদের শীর্ষ ব্যাংকারদের বিধিবহির্ভূত সুবিধা দেয় না। দ্বিতীয়টি হলো উপার্জনটি দৃশ্যমান সম্পদ থেকে আসে, অদৃশ্য, অস্বচ্ছ ও নিরাপত্তাহীন পণ্য থেকে নয়। যেহেতু ইসলামি ব্যাংকগুলো সুদের মাধ্যমে অর্থোপার্জন করতে পারে না, তাই তারা সুদের পরিবর্তে স্থাবর সম্পদ যেমন রিয়েল এস্টেট ও ইক্যুইটি, সম্পদের বিপরীতে কেনাবেচা এবং ভাড়া আদায় করার মতো নির্ভরযোগ্য সম্পত্তির ওপর অধিক নির্ভর করে।

বাংলাদেশে ইসলামিক আর্থিক ব্যবস্থায় আর্থিক স্থায়িত্বের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির প্রচার ও প্রসার এবং উদ্ভাবনী উপায়ে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামিক ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বোর্ডের তথ্যমতে, ইসলামি ব্যাংকিং শিল্পের মোট সম্পদ ২০১৭ সালে দুই হাজার ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০১৮ সালে দুই হাজার ১৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ১৯টি দেশ থেকে ইসলামি ব্যাংকগুলো দ্বারা মোট শরিয়াহ্ পরিপালন অর্থায়ন ২০১৭ সালে এক হাজার ২১ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০১৮ সালের শেষ দিকে এক হাজার ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ২০১৭ সালের শেষদিকে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বাজারে শেয়ারের পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, মার্চ ২০২১ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং খাতের টেকসই বৃদ্ধির জন্য শরিয়াহ্ নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং পণ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যখন প্রচলিত ব্যাংকগুলো জনসাধারণের আস্থা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে, তখন ইসলামি ব্যাংকিংয়ের বাজারের ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকদের বর্ধমান আস্থা প্রমাণ করে।

আরও দেখুন:
ইসলামী ব্যাংকগুলো কি ঘুরিয়ে সূদ খায়?
ইসলামী ব্যাংক সমূহের আমানত সংগ্রহ পদ্ধতি
ব্যাংকিং এ শরীয়াহ: প্রসঙ্গ আমানত
ইসলামী ব্যাংক সমূহের বিনিয়োগ পদ্ধতি
ইসলামি ব্যাংকিং ও প্রচলিত ব্যাংকিং

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামিক ব্যাংকিং সেলের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি মিলে দেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের সংখ্যা ১০টি, আগে যা ছিল আটটি। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক নতুন করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে। এর বাইরে আটটি প্রচলিত ব্যাংকের ১৯টি ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং ১১টি ব্যাংকের ১৭৮টি ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে। সব মিলে দেশে মোট ব্যাংকের ১০ হাজার ৭৬৭টি শাখার মধ্যে ইসলামি ব্যাংকিং শাখা রয়েছে এক হাজার ৫৫৮টি, যা মোট শাখার ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গত ৩১ মার্চ দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা এবং এর মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকিং খাতের সাড়ে ২৭ শতাংশ। ডিসেম্বর ২০২০ শেষে এটি ছিল সাড়ে ২৫ শতাংশ। ইসলামি ব্যাংকগুলোর আমানতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পৌনে ১০ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। মোট ১১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ইসলামি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকিং খাতের ২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এটি ছিল ২৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দেশীয় বাজারে অংশীদারিত্বের দিক থেকে শীর্ষ ৩৫টি খাতের মধ্যে বাংলাদেশ দশম স্থানে রয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, খাতটির দ্রুত সম্প্রসারণের কারণে বাংলাদেশ বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকিং ও অর্থায়নে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। গত কয়েক বছরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো বাংলাদেশের ইসলামি অর্থ শিল্পে ১৬টি প্রচলিত ব্যাংকের প্রবেশ এবং তাদের সুদ-ভিত্তিক শাখাগুলো ছাড়া তাদের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা, উইন্ডো বা ইউনিটগুলোর মাধ্যমে আর্থিক সংস্থার আর্থিক পদ্ধতি ব্যবহার।

বছরের পর বছর ধরে ইসলামিক ফিন্যান্স শিল্পকে মূলধারার অর্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি অর্জন করেছে। এটি অর্থের এক ধরনের ভিত্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে, যা অর্থের সঞ্চালন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সম্ভাব্যতা নির্দেশ করে। এছাড়া ইসলামি ব্যাংকিং যখন বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় পরিণত হচ্ছে, বাংলাদেশ সে সময় এই ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যা অপ্রচলিত ঋণ হ্রাস করে, ফটকা ব্যবসাকে নিরুৎসাহিত করে, সমাজের কল্যাণকে উৎসাহ দেয় এবং সম্পদ ও ইক্যুইটিভিত্তিক আর্থিক পরিষেবা সরবরাহ করে। তারপরও ইসলামি ব্যাংকিং দেশে ও বিদেশে আরও টেকসইভাবে পরিচালনা করার জন্য স্বল্পমেয়াদি অর্থ বাজারের সমর্থনের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ইসলামি ব্যাংকিং আইন প্রয়োজন।

লেখকঃ মো. জিল্লুর রহমান, ব্যাংকার ও মুক্তমনা কলামিস্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button