ব্যাংক নোট

টাকায় স্ট্যাপলিং বড় ক্ষতির কারণ

পরিচিত একজন বেতনের টাকা পেয়েই বাজারে গেছেন। বাজারের অবস্থা আমরা সকলেই জানি। প্রচণ্ড ভিড়। টাকাগুলো স্ট্যাপলার পিনে আটকানো ছিলো। তিনি বান্ডেল থেকে টাকা আলাদা করতে গিয়ে টান দিলেন। ফলে দু’টি এক হাজার টাকার নোট এমনভাবে ছিঁড়ে গেল, সেই টাকা তিনি আর চালাতে পারলেন না। আমাকে বিষয়টি জানানোর পর তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি শাখায় টাকাগুলো জমা দিতে বললাম। তিনি সম্ভবত ৩০ শতাংশ কম টাকা ফেরত পেয়েছিলেন। কষ্টের রোজগার। তবুও ক্ষতিটা মেনে নিতে হলো নিজের ভুলে।

স্ট্যাপলার পিন ব্যবহারে টাকার এমন ক্ষতি নতুন কিছু নয়। বাজারে প্রচলিত বাংলাদেশী ব্যাংক নোটসমূহের উপর লেখা, সীল মারা, স্বাক্ষর প্রদান এবং বারবার স্ট্যাপলিং করার কারণে নোটগুলো অপেক্ষাকৃত কম সময়ে অপ্রচলনযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় লেখালেখিও হয়েছে। যে কারণে গত বছর ০৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট থেকে ‘নতুন ও পুনঃপ্রচলনযোগ্য ব্যাংক/ কারেন্সি নোটের উপর লেখা, সীল প্রদান এবং নোটের প্যাকেটে স্ট্যাপলিং করা প্রসঙ্গে’ সার্কুলার দেওয়া হয়। সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ছাড়া যে কোনো মূল্যমানের নতুন ও পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের প্যাকেট স্ট্যাপলিং করা যাবে না।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

মূল্যমান নির্বিশেষে (১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট ছাড়া) সকল নতুন ও পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট প্যাকেট ২৫ মি.মি. হতে ৩০ মি.মি. প্রশস্ত পলিমার টেপ অথবা পলিমারযুক্ত পুরু কাগজের টেপ দিয়ে ব্যান্ডিং করতে হবে। তফসিলি ব্যাংকসমূহ তাদের নোটের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্যাংক নোট ব্যান্ডিং-এ ব্যবহৃত আরও উন্নত প্রযুক্তির অনুসরণ করতে পারে। তবে তা যেন বর্ণিত ব্যান্ডিং-এর চেয়ে কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

উক্ত সার্কুলারে আরো জানানো হয়, তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক নতুন ও পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট গ্রহণ, প্রদান এবং গণনাকরতঃ সর্টিং ও প্যাকেটিং করার সময় নোটের উপর কোনো প্রকার সংখ্যা লেখা, অনুস্বাক্ষর প্রদান, সীল প্রদান কিংবা অন্য যে কোনো ধরনের লেখালেখি করা যাবে না। ডিসিএম সার্কুলার নং-০১/২০১৫ এর ১.(iii) পরিপালন নিশ্চিতকরণে নতুন ও পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট প্যাকেটের সময় ব্যাংকের মুদ্রিত ফ্লাইলিফে ব্যাংক শাখার নাম, সীল, নোট গণনাকারী ও প্রতিনিধিগণের স্বাক্ষর ও তারিখ আবশ্যিকভাবে প্রদান করতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যক্তি পর্যায়েও আমরা উপরের এই কাজগুলো করি। কয়েকটি নোট একসঙ্গে রাবার দিয়ে আটকে কাউকে দেওয়া কিংবা নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার সময় অনেকেই টাকার ওপর লেখেন। অনেকে সাদা কাগজ মনে করে নোটের উপর স্বাক্ষর দেন। অনেকে মনের কথাও লিখে থাকেন; টাকার উপর রং লাগিয়ে পুরো নোট বিকৃত করে ফেলেন। অনেকে আবার নোট কয়েক ভাঁজ করে বা মুড়িয়ে জমা রাখেন। এগুলো পুরোপুরি অহেতুক কাজ। ফলে নোট ব্যবহার উপযোগী থাকে না।

এগুলো আমাদের অবশ্যই পরিহার করা উচিত। কাগজের নোট বাজারে প্রবেশ করার পর থেকে নোটে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। যেমন, আগুনে পোড়া নোট, দুই বা ততোধিক ভাগে বিভক্ত নোট, অস্পষ্ট সিরিয়ালের নোট, পোকায় কাটা নোট, ময়লা নোট, জোড়া লাগানো নোট ইত্যাদি। এগুলো সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা প্রয়োজন। কারণ অর্থ উপার্জনের জন্যই আমাদের সারাদিনের পরিশ্রম।

একইসঙ্গে, আমাদের প্রত্যেকের ছেঁড়া নোট সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। অনেকেই মনে করেন, নোট ছেঁড়া থাকলে হয়ত বাজারে চালানো যাবে না। অনেকেই টেপ লাগিয়ে বিভিন্ন কারসাজি করে ছেঁড়া নোট অন্যকে গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। মনে রাখা দরকার, নোট ছেঁড়া থাকলেই অচল হয় না। কতটুকু ছেঁড়া থাকলে সেই নোট লেনদেনে আদৌ কোনো সমস্যা হয় না, জানতে যে কোনো ব্যাংকের শাখায় গেলেই হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক (নোট রিফান্ড) রেগুলেশন্স অ্যাক্ট-২০১২ এর আলোকে ছেঁড়াফাটা নোট ব্যাংক শাখায় গ্রহণ এবং তার বিনিময় মূল্য প্রদান প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের জানুয়ারির ১৪ তারিখ একটি পরিপত্র দেয়।

এক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তা মূলত দুটি বিষয় নিশ্চিত হয়ে অল্প ছেঁড়া ফাটা ও ময়লা নোটের বিপরীতে সম্পূর্ণ বিনিময় মূল্য প্রদান করে। একটি বিষয় হলো, উপস্থাপিত নোটটিতে সম্পূর্ণ নোটের ৯০ শতাংশর বেশি অংশ বিদ্যমান থাকতে হবে এবং আসল নোট হিসেবে শনাক্ত হতে হবে। দুই, উপস্থাপিত নোট একাধিক খণ্ডে খণ্ডিত নয় এবং খণ্ড দুটি একই নোটের অংশ হতে হবে। খণ্ডিত নোটের ক্ষেত্রে নোটের এক দিকে হালকা সরু কাগজ দিয়ে এমনভাবে জোড়া লাগাতে হবে, যেন আসল নোট সহজেই বোঝা যায়। দুই খণ্ডে বিচ্ছিন্ন হয়নি, কিন্তু সামান্য নাড়াচাড়ায় নোটটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে এমন জীর্ণ নোটের ক্ষেত্রেও এক পিঠে হালকা সরু কাগজ লাগাতে হবে, যেন নোটটি পরীক্ষা করতে অসুবিধা না হয়।

যদি নোটের অবস্থা বেশি খারাপ হয়, অর্থাৎ অত্যধিক জীর্ণ, আগুনে পোড়া, ড্যাম্প বা সম্পূর্ণ নোটের ৯০ ভাগ বা তার চেয়ে কম থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যাংকে জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহক টাকা পাবেন না। এক্ষেত্রে, নোটের মূল্যমান, সিরিজ নম্বর, জমাদানকারীর নাম এবং পূর্ণ ঠিকানা আবেদনপত্রের সঙ্গে লিখে ব্যাংকে জমা দিতে হবে। ব্যাংক ফরওয়াডিং পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারীকৃত পরিপত্রের বিধি মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় সেই নোটটি পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নোটটি পাওয়ার আট সপ্তাহের মধ্যে নোট রিফান্ড রেগুলেশন্স-এর আওতায় নোটটির মূল্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে। মূল্য প্রদানযোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে সেই টাকা প্রদান করবে।

সুতরাং নোটে সমস্যা মনে হলে, অবশ্যই নিকটস্থ যে কোনো ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করা প্রয়োজন। প্রতিটি ব্যাংক গ্রাহককে সেবা দেবে। অনেকেই অজ্ঞতাবশত সামান্য ছেঁড়া ফাটা বা ময়লা নোট চলবে কিনা, এই সন্দেহে বিভিন্ন মধ্যস্বত্বভোগী দালালের নিকট কম মূল্যে বিক্রি করে দেন। অথচ বিভিন্ন দুষ্ট চক্র থেকে পরিত্রাণ পেতে একটু কষ্ট করে ব্যাংকে গেলে, বিনিময়মূল্য হিসেবে পুরো টাকা বা যথাযথ পরিমাণ টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব।

তবে আমাদের সবারই টাকায় স্ট্যাপলারের পিনের ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। এতে টাকার ক্ষতি হয়। পিনের ওই জায়গাটুকু ধীরে ধীরে ছিঁড়তে শুরু করে। অতি ব্যবহারে সেই ছেঁড়া অংশ আরো নাজুক হয়ে পড়ার কারণে সর্বশেষ ব্যবহারকারী বিপদে পড়েন। তখন সেই টাকা অন্য কেউ আর নিতে চান না। ব্যবহারকারী তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, তার টাকা বাজারে চলবে কিনা এই দুশ্চিন্তায়! এই সুযোগে বিভিন্ন দালাল শ্রেণী বাট্টায় টাকা বিনিময়ের ব্যবসা করে দু’ পয়সা হাতিয়ে নেয়।

অথচ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে কোনো না কোনো ব্যাংকের শাখা আছে। সব শাখাতেই ছেঁড়া নোট সম্পর্কিত পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায় এবং নোট গ্রহণ করা হয়। এখন প্রয়োজন আমাদের নিজেদের সচেতনতার। কোনো কারণে যদি আমরা আমাদের অজ্ঞতার কারণে ছেঁড়া নোট বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হই, তবে সে দায়ভার আমাদের উপরই এসে পড়ে। তাই নোট ব্যবহারে আমাদের সকলের যত্নবান হওয়া উচিত।

লেখক: এ এম. রিয়াজুল হক, যুগ্ম-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংক, ব্যাংকার ও ব্যাংকিং বিষয়ক চলমান খবর বা সমসাময়িক বিষয়ে আপনার লেখা ও মতামত ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ প্রকাশ করতে আমাদেরকে ই-মেইল করুন- [email protected] আমরা আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button