বিনিয়োগ ও লোন

ঋণ সম্পর্কে কিছু কথা

ঋণ খুব একটা পরিচিত শব্দ আজকের আধুনিক অর্থনীতিতে। ঋণ ছাড়া যেন কারো একটা দিন অতিবাহিত হবার উপায় নেই। ঋণমুক্ত জীবন আজকের পৃথিবীতে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সবাই যেন ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ। এই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন তবে তাকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তবে বিপদ না হয়ে ভাল ফলদায়ক হতে পারে ঋণ। ঋণ যেমন লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষকে ধ্বংস করে দিয়েছে তেমনি এটার সঠিক ও বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহার করে অনেকে অনেক ধনী হয়েছেন, জীবনে অনেকদূর পর্যন্ত গেছেন। এখনতো ঋণ ছাড়া ব্যবসায়ীরা বেশিদূর এগুতে পারেন না।

ঋণকে খারাপ কিছু বলা যাবে না। কারণ ঋণ না পেলে অনেকেই আজ পিছিয়ে থাকতেন। এখন বলা হয় ঋণ প্রাপ্তি সবার অধিকার হওয়া উচিত। তবে ঋণ নিয়ে যারা ঘী খান, বিলাসী জীবন যাপন করেন, ঋণ নিয়ে যারা টাকা বৃদ্ধির কাজে না লাগিয়ে খরচ করেন ভোগের পেছনে তাদের জন্য মাঝে মাঝে ঋণ সর্বস্বান্ত হবার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। আজকের দুনিয়ায় ঋণ প্রাপ্তি বড় কথা নয়, বরং বড় কথা হচ্ছে প্রাপ্ত ঋণ কিভাবে ব্যবহার করা হবে সেটা।

ভাল ও মন্দ ঋণ
ঋণের আবার ভালমন্দ কি- এই প্রশ্ন আসাটা খুব স্বাভাবিক। ঋণের রঙ, রুপ সব একইরকম। ঋণ মানেই সেটার সুদ থাকবে- একটু কম বা একটু বেশী। তাই ঋণের ভালমন্দ শ্রেণীবিন্যাস সেই ঋণের ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল। ঋণ নিয়ে যদি আপনি সরাসরি ভোগ করেন অর্থাৎ খাবার কেনেন, বিলাসদ্রব্য কেনেন, বাড়িগাড়ীর সাজসজ্জার জন্য ব্যয় করেন, ঘুরাঘুরির পেছনে ব্যয় করেন তবে সেই ঋণ আপনার জন্য ভাল কিছু বয়ে আনতে পারেনা। কারণ যার পেছনে আপনি খরচ করছেন তা আপনার জন্য কোন আর্থিক সুবিধা বয়ে আনছে না বরং আপনার জন্য আর্থিক বোঝাটাকে আরও ভারি করে তুলছে। এই ঋণ আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য মন্দ ঋণ।

অনেকে বলেন এটা অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার করছে, প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কথাটি মিথ্যা নয়। ঋণের প্রবাহ বাড়লে সামগ্রিক অর্থনীতিতে তারল্য প্রবাহ বাড়ে। কিন্তু এই তারল্য অর্থনীতিতে ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে তা হিসেব করে বের করা খুব দুরূহ। কিন্তু একজন ব্যক্তির জীবনে যে ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে সেটা প্রমাণিত। আর যখন একজন ব্যক্তি খারাপ থাকেন তখন সামগ্রিক অর্থে মন্দ ঋণের প্রভাব ভাল হবার সম্ভাবনা কমে যায়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ঋণ ভাল হওয়াও নির্ভর করে তার ব্যবহারের উপর। যদি কেউ এমনভাবে ঋণকে ব্যবহার করতে পারে যাতে ঋণের টাকা বাড়ে। তার অর্থ হচ্ছে ঋণ সুধসহ পরিশোধ করার পরও যদি হাতে কিছু থাকে তাহলে সেটা খারাপ নয়। তাই ঋণ নিয়ে যদি কেউ সম্পদ কেনে যেটার মূল্য সুদাসলের চেয়ে বেশী হয় তবে সেই ঋণ মন্দ নয়, বরং ভাল।

ঋণ নেয়ার পূর্বে তাই হোমওয়ার্ক করা খুব জরুরী। খাতা কলমে হিসেব করে তারপর ঋণের দিকে পা বাড়ানো উচিত। তবে অনেক সময় মানুষ বিপদে পড়ে ঋণ করে বিশেষকরে যাদের রিজার্ভ ফান্ড থাকেনা। যারা এই ধরণের ঋণ করেন তাদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঐ ঋণ পরিশোধ করা তা নাহলে ঐ ঋণের বোঝা বেড়ে অসহনীয় পর্যায়ে যেতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই যায়। এজন্য ঋণের বিষয়ে খুব সতর্কভাবে পা ফেলতে হবে।

লেখকঃ সাইফুল হোসেন, লেখক ও পার্সোনাল ফাইন্যান্স এক্সপার্ট

আরও দেখুন:
◾ জেনে নিন যে ১০টি ভুলে পারসোনাল লোন হয় না
◾ জামানত নিয়ে ব্যাংকের বিড়ম্বনা ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা
◾ ঋণ খেলাপিদের সামাজিকভাবে বয়কট করুন
◾ ব্যাংক লোন নেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button