ব্যাংক গ্রাহক

ব্যাংকের আমানত গ্রাহকদের বাঁচান

আমানত গ্রাহকদের সঞ্চিত অর্থ দিয়েই মূলত ব্যাংকিং ব্যবসা। ডিপোজিটরদের অর্থই ঋণ হিসেবে দেয়া হয় বিনিয়োগ গ্রাহকদের। তবে সামান্য অংশ থাকে উদ্যোক্তা পরিচালকদের। তার মানে ব্যাংকিং ব্যবসাই হল পরের ধনে পোদ্দারি। আর যারা পোদ্দারি করেন, দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক তাদের নিয়ন্ত্রণ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অতএব তফশিলী ব্যাংকগুলোর অভিভাবক বা নিয়ন্ত্রক হল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছেন, যা জিডিপির ৩.৫০%। ব্যাংকিং সেক্টরে বেসরকারি খাতে অভ্যন্তরীন ঋণ প্রবাহে গতিশীলতা আনয়ন, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনীতির উপর নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক প্রনোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য নানামুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তফসিলী ব্যাংকসমুহের উপর নির্দেশনা জারি করে নিয়ন্ত্রক ব্যাংক।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠক, ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

আর এই বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিরসনকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সেই ঘোষণায় ব্যাংক, বিনিয়োগগ্রহীতা এবং ডিপোজিটরদের প্রাপ্তি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

তফসিলী ব্যাংক যা পেল
(১) নগদ সংরক্ষিত তহবিল (সিআরআর) হ্রাস। মেয়াদি এবং তলবী বা চাহিবামাত্র দায়ের (Time & Demand Deposit) ৫.৫০% জমা রাখা হতো বাংলাদেশ ব্যাংক বা প্রতিনিধিত্বকারী ব্যাংকের কাছে। করোনাকালে নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি কল্পে তা হ্রাস করে ৪% করা হলো। এতে তফসিলী ব্যাংকসমুহ আরো ১৯,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়। সিআরআর ব্যাংকের তারল্য সংকট নিরসন এবং ডিপোজিটরদের তাৎক্ষণিক দাবি পূরনে সহায়তা করে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

(২) রেপোর সুদ হ্রাস। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদ হার (রেপো) ৬% থেকে কমিয়ে ৫.২৫% নির্ধারণ করেছে। সরকারি বিল, বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রেখে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে তফসিলী ব্যাংকসমুহ।
(৩) এসএল আর এর অতিরিক্ত সরকারি সিকিউরিটিজ সমুহ বাজারমূল্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট বিক্রি করতে পারবে। প্রায় ৭০,০০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত সিকিউরিটিজ রয়েছে বলে তথ্যসূত্রে জানা যায়।
(৪) আইডিআর বা এডিআর বৃদ্ধি করা হয়েছে। কনভেনশনাল ব্যাংকের জন্য ৮৫% থেকে বৃদ্ধি করে ৮৭% এবং শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক সমুহের জন্য ৯০% থেকে বৃদ্ধি করে ৯২% করা হল।

ঋণ বা বিনিয়োগগ্রহিতা যা পেল
(১) গত বছর ২% ডাউন পেমেন্ট প্রদান করে ঋণ খেলাপীদের দীর্ঘ মেয়াদি পূনতফসিলের সুবিধা গ্রহণ;
(২) এপ্রিল ২০২০ থেকে ৯% সুদে বিনিয়োগ সুবিধা;
(৩) এপ্রিল এবং মে মাসের সুদ স্থগিত বা ব্লকড করা হল (আনুমানিক পনের হাজার কোটি টাকা);
(৪) বৃহৎ শিল্প এবং সার্ভিস সেক্টরের ওয়র্কিং ক্যাপিটাল বাবদ ৯% সুদে বিনিয়োগ সুবিধা পাবে ৩০,০০০ কোটি টাকা (সরকার ভর্তুকি দিবে ৪.৫০% আর বিনিয়োগ গ্রহীতা দিবে ৪.৫০%);
(৫) মাঝারি, ক্ষদ্র ও কুটির শিল্পের (এসএমই) চলতি মুলধন হিসেবে ৯% সুদে দেয়া হবে ২০,০০০ কোটি টাকা। সরকার ভর্তুকি দিবে ৫% আর বিনিয়োগ গ্রহিতা দিবে ৪%;
(৬) ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন তারিখ পর্যন্ত সুদ বা কিস্তি না দিলেও ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে দেখানো যাবে না।

ব্যবসায়ীদের জন্য বিবিধ সুবিধা
(১) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ৩.৫০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫.০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ। এর জন্য ১২,৭৫০ কোটি টাকার সুবিধা প্রদান করা হল।
(২) রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে নেয়া ঋণের পরিসীমা বৃদ্ধি করে ৯০ দিন করা হল।
(৩) প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি সহায়তা করার জন্য গঠন করা হয়েছে ৫০০০ কোটি টাকার একটি পূনঃঅর্থায়ন তহবিল।
(৪) Back to Back LC এর আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স এবং বায়ার্স ক্রেডিটের মেয়াদ ১৮০ দিন বাড়ানো হয়েছে।
(৫) রপ্তানিমূখী প্রতিষ্ঠানের জন্য Euro Green Transformation Fund ৪০০ মিলিয়নে উন্নীত করে সুদ হার হ্রাস করা হয়েছে।
(৬) পরিবেশ বান্ধব পন্য বা প্রকল্পের জন্য গঠিত হল ৪০০ কোটি টাকার পূনঃ অর্থায়ন তহবিল।
(৭) কৃষি খাতে ও ৪% রেয়াতি সুদে ভর্তুকি দেয়া হবে ১২০০ কোটি টাকা।
(৮) রপ্তানিমূখী গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন প্রদানে ৫০০০ কোটি টাকার প্রনোদনা।

ডিপোজিটর যা পেল
বাংলাদেশের অর্থনীতির রক্ত সঞ্চালিত হয় ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে। আর এ সেক্টরের Blood হল ডিপোজিটররা। বর্তমানে আমানতের সুদ বা মুনাফার হার কমে নির্ধারিত হল ৬%। মুদ্রার তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি ও বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয় রেখে এ হার নির্ধারণ কতটুকু যৌক্তিক, তা ভেবে দেখার জন্য আমানত গ্রাহকরা প্রায় দাবি জানান।

ঋণখেলাপি, ব্যবসায়ী, আমদানী ও রপ্তানীকারক এবং তফসিলি ব্যাংকসমুহ প্রনোদনা প্যাকেজে নানা ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পেলেও এ দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে এগারো লাখ কোটি টাকার যোগানদাতা তথা প্রকৃত মালিকরা অনেকটা বঞ্চিত হলেন বলে অনেকে মনে করেন। আমানত গ্রাহকদের সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করে পরিচালন মুনাফা করে তার ৩৭.৫০% কর্পোরেট ট্যাক্স রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয় তফসিলী ব্যাংকগুলো।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টমহল আমানতের সুদ বা মুনাফার হার নির্ধারনে পূনর্বিবেচনা করবেন বলে অসহায় আমানতগ্রাহকরা আশা করে।

লেখকঃ মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহ (বাচ্চু), ব্যাংকার

প্রিয় পাঠক, ব্যাংক, ব্যাংকার ও ব্যাংকিং বিষয়ক চলমান খবর বা সমসাময়িক বিষয়ে আপনার লেখা, মতামত ও প্রবন্ধ দেশের একমাত্র অনলাইন ব্যাংকিং নিউজ পোর্টালে প্রকাশ করতে সরাসরি আমাদেরকে ই-মেইল করুন- [email protected] আমরা আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে তা প্রকাশ করব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button