বড় স্যারদের সন্তুষ্টি এবং রাত ৮টা ৯টা অফিস
প্রায় সব ব্যাংক এবং প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে এমপ্লয়িরা কোন কাজ না থাকলেও কেবল “বড় স্যার”কে খুশি করার জন্যই ৬টার পর ১-২ ঘন্টা অফিসে বসে থাকেন, কেউবা কাজের গতি কমিয়ে দেন, ভাবেন বড় স্যারতো আটটার আগে বের হবেন না, সুতরাং বসে বসে “মাথা” আর “মাউস” নাড়াই।
এই আপনারাই- আপনারা বঞ্চিত করছেন নিজেকে, সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু অবসর বিনোদন থেকে। আপনারা বঞ্চিত করছেন পরিবার পরিজন সন্তানদের যারা সারাদিন অপেক্ষায় ছিল- আপনি কখন বাসায় ফিরবেন। অসময়ে অফিসের লাইট, ফ্যান, এসি চালিয়ে বিদ্যুতের বিল বাড়াচ্ছেন এই আপনারাই।
> আর বড় স্যার ভাবছেন- বাহ! আমার অফিসাররা তো বেশ কাজের (যিনি যত দেরীতে অফিস ত্যাগ করবেন তিনি যেন তত বেশী নিবেদিত কর্মী, যিনি ৬টার পরপরই চলে যাবেন তিনি রোষানলে পড়বেন)।
> বড় স্যারের উপরের কর্তারা ভাবছেন- বেশ বেশ! অমুক ম্যানেজারের পার্ফরমেন্স দেখো, রাত আটটা নয়টা পর্যন্ত কাজ করছে।
> আর কিছু গর্দভ এমপ্লয়ি গদগদ কন্ঠে বলছে- দেখছেন, ব্যাংকের জন্য আমরা জীবন যৌবন উৎসর্গ করে দিয়েছি!
দু’ এক দিন অফিসে বাড়তি কাজ থাকতেই পারে, একটু দেরী হতেই পারে। তাই বলে প্রতিদিন ৮টা! আর কোনদিন মিটিং থাকলে তো কথাই নেই, কখন সেটা শেষ হবে কেউ জানে না। রাত ৭/৮টায় মিটিং শুরু করা যেন সাংবিধানিক নিয়ম! রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মিটিংও দেখেছি!
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
ছাত্রজীবনে আমাদের পরীক্ষার সময় ৩ ঘন্টা বেঁধে দিয়েছিল কেন জানেন- কর্মজীবনে যাতে আমরা ১০-৬টার মধ্যে কাজ শেষ করতে পারি। এখন দেখছি আমরা ব্যাংকারাই সময়ের প্রতি সবচে বেশী উদাসীন। ব্যাংকের ভেতরে ছাড়া বাইরেও যে একটা জীবন আছে সেটা অনেক ব্যাংকার ভাবতেই পারেন না।
টাইম ম্যানেজমেন্টের প্রতি কঠোর সচেতন একজন ব্যক্তিকেই দেখেছি। শ্রদ্ধাবর এই মানুষটি হলেন চট্টগ্রাম উত্তর জোন প্রধান জনাব মোস্তাফিজুর রহমান। একবার এক সেমিনারে আগের বক্তারা বক্তৃতা দিতে দিতে প্রায় ছয়টা বাজিয়ে দিলেন, মাত্র ২ মিনিট বাকী ছয়টা বাজতে- এমন পরিস্থিতিতে মোস্তাফিজ স্যার সভাপতির বক্তব্য দিতে উঠে দাঁড়ালেন- ঘড়ির কাটা দেখে ঠিক ছয়টায় তার বক্তব্য শেষ করলেন!
টাইম ম্যানেজমেন্টে যারা জানেন না তারা প্রতিষ্ঠানে যেমনি অদক্ষ, পরিবার সমাজেও তেমনি অযোগ্য।
আপনি যদি একজন “বড় স্যার” হয়ে থাকেন তাহলে প্লিজ একবার হিসাব কষে দেখবেন- জীবনে “কত জন” এমপ্লয়ির, “কত দিনে”, “কত ঘন্টা” সময় আপনি শেষ করে দিয়েছেন? রোজ কিয়ামতে আপনাকে কি এর হিসাব দিতে হবে না?
আর “লেট অফিসার”গণও একটু হিসাব করে দেখবেন জীবেন কতঘন্টা সময় অনর্থক অফিসে বসে বসে শেষ করেছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন।
সর্বশেষ দুই জন “বড় স্যারের” উদাহরণ দিচ্ছি-
প্রথম জন-
সোয়া ছয়টায় আমার সব কাজ শেষ, তবু দেড় ঘন্টা বসে থেকে উনার চেম্বারে সালাম দিয়ে বিদায় নিতে গেলাম। উনি একটু অবাক, কিছুটা হতাশ গলায় বললেন- এখনই চলে যাবেন? তারপর টানা ৩৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখে “বসের সন্তুষ্টি ও চাকুরীর উজ্জল ভবিষ্যৎ” বিষয়ে বিরক্তিকর মহামূল্যবান ওয়াজ শোনালেন।
দ্বিতীয় জন-
নতুন জয়েন করার দুদিন পর তিনি সবাইকে ডেকে বললেন- যার যার ডেক্সের কাজ শেষ করেই অফিস ত্যাগ করবেন। আমার অনুমতির জন্য বসে থাকবেন না। ২/১ টা ডেক্স ছাড়া ৬টার পরও যারা অফিসে বসে থাকে আমার কাছে তারা অদক্ষ কিংবা রোগী (যারা বউয়ের কাছে যেতে ভয় পায়)!!!
কী ম্যাজিক দেখলাম, পরদিনই দেখি ৬টার পর অফিস অন্ধকার!!
পূনশ্চ: অনেকে বলে- বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা সার্কুলার আছে “ব্যাংক আওয়ারের পরে কাজ না থাকলে কোন স্টাফ (বিশেষ করে মহিলা স্টাফ)দের ধরে রাখা যাবে না।” কিন্তু জনাব! এসিআর তো বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে না, বড় স্যারের হাতে!
Courtesy: Ybs Shahin