ব্যাংকার

ব্যাংকে কর্মীদের বেতন কমিয়ে এমডি-সিইওদের বেতন বাড়ছে কেন?

মহামারিতে অর্থনৈতিক মন্দার অজুহাতে কিছু ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়েছে। কিন্তু, বেতন কমানোর এই তালিকায় এমন কিছু ব্যাংক আছে যারা মুনাফা করেছে। কর্মীদের বেতন কমিয়ে সেখানে বাড়ানো হয়েছে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বেতন।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিপরীতে সাধারণ কর্মীদের প্রতি এমন বৈষম্য কেন? ব্যাংকগুলো কি আসলেই বেতন কমিয়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে আছে? এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কোনো অনিয়ম করছে কি না তা কি খতিয়ে দেখা হচ্ছে? স্ট্রেইট ফ্রম স্টার নিউজরুমে বাংলাদেশের কিছু ব্যাংকের কর্মীদের বেতন নিয়ে অসঙ্গতির বিষয়ে দেবযানী শ্যামার সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন দ্য ডেইলি স্টারের রিপোর্টার আহসান হাবীব।

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকার

মহামারীর প্রায় ২ বছরে বিভিন্ন খাত ধাক্কা খেলেও ব্যাংকিং খাত কিন্তু একটা জরুরী সেবা হিসেবে হিসেবে গণ্য হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরে তালিকাভুক্ত ৩২টি কোম্পানি রয়েছে এর মধ্যে শুধুমাত্র একটি কোম্পানি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ছাড়া সবগুলো কোম্পানি এ সময় খুব ভালো ব্যবসা করেছে। আসলে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরেই লোকসানে রয়েছে। এটি আসলে মহামারীর কোন ইস্যুর কারণে নয় বরং এটি আগে থেকেই লোকসানে রয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

মহামারীর সময়টাতে আমরা সবাই যতটা ভেবেছিলাম যে একটা বড়সড় লোকসানে পড়তে পারে ব্যাংকিং খাত সে রকমটা কিন্তু হয়নি। কয়েকটি ব্যাংকের প্রফিট কমেছে কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকের প্রফিট বেড়েছে। এটা ঠিক যে, ব্যাংকিং সেক্টরের কোম্পানিগুলোতে কিছু সমস্যা রয়েছে। কিছু ব্যাংকের অনেক বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে এবং খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং রাখতে হয়। অনেক ব্যাংকেই এই ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া এসেট কোয়ালিটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

কিন্তু মোটাদাগে ব্যাংকগুলো বছর শেষে থেকে প্রফিট করেছে এবং তারা ডিভিডেন্ডও দিয়েছে। তারপরও ২০২০ বার্ষিক রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, কয়েকটি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে এবং এটা করেছে তাদের প্রফিট ঠিক রাখার জন্য। ৬টি ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের বরাদ্দ কমিছে এবং ৩টি ব্যাংক তাদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়েছে।

ব্যাংকারদের সাথে কথা বলে যেটা জানা গেছে, ব্যাংকগুলো কোন ইন্ডিভিজুয়াল কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন কমায়নি। কিন্তু যেহেতু অনেকেই স্বেচ্ছায় ব্যাংক ছেড়ে চলে গেছেন অথবা নতুন করে লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি এজন্য টোটাল স্যালারি বাবদ খরচ কমে গেছে। আর তারা বলছেন যে, যেহেতু ৩-৪ বছর ধরে সিইওদের বেতন বাড়ানো হয়নি তাই তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে।

কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন অন্য কথা, তারা বলছেন- আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চেয়েও সাধারণত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বেতনই বেশি বাড়ানো হয়। এর পেছনে কিছু কারণ রয়েছে, যেহেতু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ব্যাংকের মালিক বা পরিচালকদের বিভিন্ন সুবিধার্থে মূলত এরাই কাজ করেন। সুত্রাং ব্যাংকের মালিক বা পরিচালকরা তাদের দৃষ্টিতে থাকেন কিভাবে তাদের বেতন বাড়ানো হবে। এই কারণেই মূলত উচ্চ পদস্থদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। অনেক সময় তাদেরকে ধরে রাখার জন্যও বেতন বাড়ানো হয়ে থাকে।

তবে কেউ কেউ বলছেন যে, মূলত ব্যাংকগুলো তাদের প্রফিটকে ধরে রাখার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়নি। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যখন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেখেন যে তাদের উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তার বেতন অনেক বেড়েছে কিন্তু তাদের বেতন বাড়েনি আবার কোন কোন ব্যাংকের বাড়েনি বরং কমেছে। আবার কোন কোন ব্যাংকে ছাটাইও হয়েছে।

এগুলো কিন্তু তাদের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের মোরাল যে জায়গাটা ওই জায়গাটাতে ইমপ্যাক্ট করে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার জন্য কিন্তু ব্যাংকগুলো চালু ছিল এবং ব্যাংকাররা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ব্যাংকে কাজ করেছেন। এ সময় যেখানে তাদেরকে হয়তো কোন প্রণোদনা দেয়া দরকার ছিল সেই জায়গায় তার পরিবর্তে তাদের বেতন কমানো হয়েছে আবার কারও কারও বাড়ানো হয়নি।

আমরা সব সময় দেখেছি যে, সাধারণত যারা মেধাবী তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর কেউ হয়তো সরকারি চাকরিতে যেতে চান অথবা কেউ কেউ সরকারি চাকরির বাইরেও ব্যাংকে জব পছন্দ করে থাকেন। এই ধরনের ক্রাইসিস পিরিয়ডে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে যে রেসপন্স এসেছে এটা কিন্তু তাদের চিন্তাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে। যদি এমন হতো যে ব্যাংকগুলো আসলে প্রফিট করতে পারেনি বা লোকসানে পড়ে গেছে তখন কিন্তু ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেনে নিতে পারতো যে তাদের বেতন কেন কমানো হলো তার পিছনে একটা কিন্তু যুক্তি ছিল।

কিন্তু তারা দেখেছে যে, বছর শেষে ব্যাংকগুলো বড় অংকের প্রফিট করেছে এবং মালিকরা বা শেয়ার হোল্ডাররা আলটিমেটলি ডিভিডেন্ড নিয়ে গেছেন। এদিক থেকেই তাদেরকে একটা নেতিবাচক মেসেজ দিয়েছে। এই কর্মকর্তারাই কিন্তু ব্যাংকগুলোর ব্রান্ডিং করে থাকেন। বাজারে কিন্তু এই কর্মকর্তাদের দেখেই বুঝতে পারে যে এই ব্যাংকটি কেমন চলছে। যারা চাকরি হারালেন বা যাদের বেতন কমেছে বা যাদের বেতন বাড়েনি তাদের কাছ থেকে মানুষের কাছে একটা খারাপ মেসেজ গেল।

কোন ব্যাংক তাদের ইন্টার্নাল ম্যানেজমেন্টে কোন অনিয়ম করছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করার মতো বা খতিয়ে দেখার মত এই দায়িত্বটা আসলে কার? আর সেটা কি ঠিকমত করা হচ্ছে? আসলে একটি ব্যাংকে কার বেতন বাড়বে বা কার বাড়বে না এটা ইন্টার্নাল ডিসিশনে হয়ে থাকে। এখানে কোন কমিটি থাকে না বা কোনো তদারকি করে না।

ব্যাংকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একই পোস্টে চাকরি করে একেকজনের বেতন কাঠামো একেক রকম হয়ে থাকে এবং এই বৈষম্য তাদের মধ্যে থাকে। আন্তর্জাতিক রুলস অনুযায়ী একটি কোম্পানি/ প্রতিষ্ঠানে বেতন কাঠামো কেমন হবে সেটি দেখার জন্য একটি কমিটি থাকার কথা কিন্তু ব্যাংকগুলোতে সেটি নেই। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এখানে দেখার কেউ নেই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পদক্ষেপ নিয়েছে যখন চাকরি গেল অনেকেরই।

এইযে বেতন কমানো হলো এখন তাদেরকে সেভ গার্ড করার জন্য করনীয় কি? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে যে ব্যাংকগুলো করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অন্য কোন এলিগেশন ছাড়া শুধুমাত্র যদি করোনা রিলেটেড কোন কারণে যদি চাকরীচ্যুত করে থাকে তবে তাকে রিঅ্যাপয়েন্ট করতে বলা হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে এই বিষয়টিকে তদারকির মধ্যে রাখা যে, আসলেই কতটুকু রিঅ্যাপয়েন্ট করলো বা কেউ করলো কিনা বা কেউ বাদ পড়লো কিনা এই বিষয়গুলো মনিটরিং এর মধ্যে রাখতে হবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপকে জারি রাখতে হবে যেন তারা আসলেই রিঅ্যাপয়েন্ট হলো কিনা? আরেকটি বিষয় হলো ব্যাংকের পরিচালকদের মনোভাবেও পরিবর্তন আনতে হবে, যেন তারা বুঝতে পারেন যে এরাই ব্যাংকের ব্রান্ডিং করেন। ব্যাংকাররা যদি ভালো না থাকেন তাহলে ব্যাংকের ইমেজ নষ্ট হবে। সুতরাং তাদেরকে এই বিষয়টি মাথায় রেখে তাদেরকে কিভাবে সেফগার্ড দেয়া যাবে সেই দিকে খেয়াল রাখা উচিত।

সোর্সঃ ডেইলি স্টার (ইউটিউব)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button