অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের ভূমিকা
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যে কোনো অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তা পুঁজিবাদী সমাজতান্ত্রিক যাই হোক। ব্যবসার সাফল্য একটি দেশের প্রবৃদ্ধিকে চালনা, সামগ্রিক টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। জাতীয় সম্পদকে কীভাবে সর্বোচ্চ কাজে লাগানো যায় উদ্যোক্তারা তা নিয়ে প্রায়ই চিন্তা করে থাকেন। স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের জীবনযাপন এবং কাজ করার পদ্ধতি পরিবর্তন করার ক্ষমতা উদ্যোক্তাদের আছে।
গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ ‘বাস্কেট কেস’ থেকে নিজেকে বিশ্বের দ্রততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। কভিড-১৯ শুরুর আগে অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিগত বছরে বার্ষিক ৭-৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তির পর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা বা শিল্প স্থাপনের সুযোগ ছিল না, যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে (বর্তমানে পাকিস্তান) ছিল। বাংলাদেশিরা মূলত মধ্যম ও নি¤œস্তরের চাকরিতে নিয়োজিত ছিল। যা হোক, আমাদের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী বিশ্বকে দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশিরা সফল উদ্যোক্তা হতে সক্ষম।
প্রয়াত আবুল কাসেম খান (চট্টগ্রাম থেকে), যিনি ১৯৩৪ সালে একজন জেলা জজ ছিলেন, তিনি চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করতে আসা প্রথম বাংলাদেশি। তিনি ১৯৪৫ সালে একে খান গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন হাতেগোনা কয়েকটি ব্যবসায়িক পরিবার ছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো ছিল মরহুম আনোয়ার হোসেনের পারিবারিক ব্যবসা (১৮৩৪ সাল থেকে) এবং ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম লতিফুর রহমানের পরিবারের (১৮৮৫ সাল থেকে চা বাগানের মালিক ছিলেন) ব্যবসা।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান, চা বাগান, দুটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং অল্প সংখ্যক পাট ও টেক্সটাইল মিলের মালিকানা বাংলাদেশিদের হাতে ছিল। স্বাধীনতার পর সব শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করা হয়।
যাহোক, গত শতকের সত্তর দশকের মাঝামাঝি সরকারি নীতিতে পরিবর্তন এনে বেসরকারীকরণ, রপ্তানি উদারীকরণ এবং আমদানি-বিকল্প পণ্য প্রতিস্থাপন ব্যবসায়ীদের উদ্যোক্তা যাত্রা শুরু করার সুযোগ সৃষ্টি করে। আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি এবং ইটিবিএল হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান ও সিইও মাহবুবুর রহমানসহ ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী, আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং আরও কিছু ব্যবসায়ী নেতা সরকারের বেসরকারীকরণ নীতি প্রবর্তনের জন্য অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
৪০ বছরেরও কম সময়ে, দেশের পোশাকশিল্প জাতির সাফল্যের গল্পগুলোর একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে সাম্প্রতিক দশকগুলোয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং রপ্তানি থেকে বছরে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়। বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল ১১৯ দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প, কৃষিপণ্য, সমুদ্রগামী জাহাজ, সফটওয়্যার রপ্তানি করছে।
বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে এবং জাতিসংঘের ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার পথে রয়েছে। ৩০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি জিডিপি নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং পূর্বাভাস বলছে, সেদিন খুব বেশি দূর নয়, যখন বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হবে। চিত্তাকর্ষক জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি মাথাপিছু আয়ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে (২,২২৭ মার্কিন ডলার)। বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার হ্রাস করার ক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে সেরা। দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি পৌঁছেছে। ২০২০ সালে জিডিপিতে শিল্পের অংশ ছিল ২৮.৭৯ শতাংশ এবং জিডিপিতে এসএমই’র অংশ প্রায় ২৫ শতাংশ।
উন্নয়নশীল বিশ্বে ৯০ শতাংশ কাজ বেসরকারি খাত করে থাকে। ‘বাংলাদেশে শক্তিশালী আর্থিক খাত দ্বারা সমর্থিত বেসরকারি খাতকে (যা সব বিনিয়োগের ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশীদার) দেশের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি এবং মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে কভিড-১৯-এর জন্য সৃষ্ট মন্দাবস্তা থেকে কাটিয়ে উঠতে হবে,’ আইএফসির এশিয়া ও প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আলফোনসো গার্সিয়া মোরা এ কথা বলেন।
ব্যবসায়ীরা দেশের সফলতা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আইসিসি বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সেসব ব্যবসায়ীদের স্মরণ করেন যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল করে তোলার ক্ষেত্রে এবং করপোরেট সংস্কৃতি তৈরিতে দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
আরও দেখুন:
◾ অর্থ ব্যবস্থাপনার পাঁচ পরামর্শ
সোর্সঃ আইসিসিবির ত্রৈমাসিক বুলেটিন সম্পাদকীয় থেকে সংগৃহীত।