প্রবাসী ব্যাংকিং

রেমিটেন্স বেনিফিসিয়ারী মূলত ডলার বিক্রেতা

দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। যার অনেকখানী অবদান আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধাদের। তাদের প্রেরিত রেমিটেন্সের বদৌলতে সঞ্চিত বৈদেশিক রির্জাভ দিয়ে আমদানী করা হচ্ছে উন্নয়ন মহাযজ্ঞের মাল-মসলা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেশিরভাগ দেশের সাথে আমাদের রয়েছে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি। আর তাই এখন পর্যন্ত রেমিটেন্সই আমাদের আমদানীর ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রেখে চলছে।

সুতরাং প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমান কমে গেলে, আমাদের রিজার্ভের পরিমানও কমে যায়। আর তাতে সামগ্রীক উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রভাবিত হয়।

এই যখন অবস্থা, ঠিক সেই মুহুর্তে আমাদের ব্যাংকের শাখাগুলোতে যখন কোন রেমিটেন্স বেনিফিসিয়ারী আসে প্রেরিত রেমিটেন্স উত্তোলন করতে, আমরা কি একবারও ভাবী যে তারা আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বর্পূণ? আমরা কি সে মতে তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করে থাকি? তারা কি অন্যান্য গ্রাহকদের চেয়ে সেবার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু পেয়ে থাকে? আমার কাছে মনে হয় না।

তাদের আত্নীয়-পরিজনের কষ্টার্জিত রেমিটেন্সেই আমাদের রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট, সড়ক-মহাসড়ক হচ্ছে। উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু এমনকি আজ যে চব্বিশ ঘন্টা বিদ্যুতের আলো-বাতাসে আয়েশ করছি, তার বেশিরভাগ অবদানটি দিতে হবে আমাদের বিদেশে কর্মরত ভাইদের। এখন কথা হচ্ছে তাদের জন্য ব্যাংকারদের কিছু করার আছে কিনা?

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ব্যাংকার হিসেবে বলবো, রেমিটেন্স যোদ্ধারা আমাদের কাছে এইটুকু আশা করে যে, তাদের আত্নীয়-স্বজনরা যখন ব্যাংকে আসবে তাদের প্রেরিত টাকার জন্য, ব্যাংকের সেবাটি যেন সহজ, সহযোগীতামূলক এবং সম্মানজনক হয়। এর চেয়ে বেশি কিছু তারা আমাদের কাছে প্রত্যাশা করে না।

বেশির ভাগ রেমিটেন্স বেনিফিসিয়ারী সহজ-সরল, নিরক্ষর এবং নিয়ম-কানুনে অপরিপক্ক। তাই ব্যাংকে এসে এরা অসহায়ের মতো এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করে টাকা উত্তোলনের আনুষাঙ্গিক কার্যাদি সম্পন্ন করার জন্য। এ ক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকারগন আরেকটু সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে পারি। তাদেরকে সন্তুষ্ট মনে বিদায় করতে পারলে, তারা বাড়ি গিয়ে রেমিটারকে ফোন দিয়ে তৃপ্তির সাথে বলবে “টাকাটা ভালভাবে পেয়েছি”। যা শুনলে রেমিটারের অর্থাৎ প্রবাসী ভাইটির সারা বছর পরিবারের বাইরে থাকার কষ্টটা কিছুটা হলেও লাগব হয়।

আর যদি এই টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বারো কূয়ার পানি পান করতে হয়, সেটা জানলে তাদের মন থেকে আমাদেরকে অকৃতজ্ঞ বলে যে আত্নচিৎকার ধ্বনিত হয়, তা হয়তো আমাদের কানে এসে পৌছে না। কারন আমাদের মন এবং কানের বিস্তর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা না হলে আমরা খুব সহজেই উপলব্দি করতে পারতাম যে, রেমিটেন্স বেনিফিসিয়ারীরা আমাদের কাছে কেবল টাকা উত্তোলন করতে আসে না, তারা মূলত ডলার বিক্রী করতে আসে। তাদেরকে যে পরিমান টাকা প্রদান করা হয়, ঠিক সমপরিমান মূল্যের ডলার আমাদের বিদেশী একাউন্টে জমা হয়ে যায়।

তাহলে বিষয়টি কি দাড়ালো? তারা কি কেবল টাকা উত্তোলনকারী না কি ডলার বিক্রেতা? যদি প্রতিদিন শাখায় এই পরিমান ডলার, রিয়াল এবং রিঙ্গিত বিক্রেতা আসতো তবে তাদের জন্য কতোই না বাহারী সমাদর থাকতো ব্যাংকারদের রেসিপিতে, তাই নয় কি? ব্যাংকারদের বিষটি গুরুত্ব সহকারে ভাবা উাচৎ বলে মনে করি।

লেখকঃ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button