ব্যাংক নোট

ছেঁড়াফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণে এবং বিনিময়মূল্য প্রদানে আমাদের করণীয়

প্রণব চৌধুরীঃ ছেঁড়াফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণে এবং বিনিময়মূল্য প্রদানে আমাদের করণীয়। এর আগের একটি লেখায় অপ্রচলনযোগ্য, মিউটিলেটেড ও দাবীযোগ্য নোটের বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছিলাম। সেই লেখার পরবর্তীতে অনেকেই ছেঁড়াফাটা, খন্ডিত ও ময়লাযুক্ত নোট গ্রহণ ও উহার বিনিময়মূল্য প্রদানের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আজকের এই লেখায় আমরা সে বিষয়েই আলোকপাত করার চেষ্টা করব।

উল্লেখিত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটা পরিপত্র ইস্যু করেছিল ২০১৩ সালের ১৪ জানুয়ারি। বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সী ম্যানেজমেন্ট এর সেই পরিপত্রের (পরিপত্র নং-ইহিশাঃ২৩(পলিসি)/২০১৩-১৫) পরিশিষ্ট ‘ক’ তে ছেঁড়াফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণে এবং বিনিময়মূল্য প্রদানে তফসিলী ব্যাংক শাখার করণীয় সম্পর্কে বলা আছে। এ বিষয়ে Bangladesh Bank (Note Refund) Regulations‐2012 এর ৮ এবং ৯নং অনুচ্ছেদ এ ছেঁড়াফাটা খন্ডিত ও ময়লাযুক্ত নোট গ্রহণ ও উহার বিনিময়মূল্য প্রদানের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা বর্ণিত আছে। তো কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাকঃ

একজন গ্রাহক যেকোন ধরনের ছেঁড়াফাটা, ময়লা বা খন্ডিত নোট জমা দিলেই কি আপনি সাথে সাথে তার বিনিময় মূল্য প্রদান করবেন? না, যেকোন ধরনের নোটের বিনিময় মূল্য সরাসরি কাউন্টারে প্রদান করা যায় না। নোটের সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা যাবে, যদি-
ক) নোটটি ময়লা ও অবিকৃত হয়;
খ) কোন ছেঁড়া নোটের কোন অংশ যদি অনুপস্থিত থাকে এবং বিদ্যমান অংশ যদি ৯০% এর অধিক হয়;
গ) কোন নোট যদি একাধিক খন্ডে খন্ডিত না হয় এবং নোটের সম্পূর্ণ অংশ বিদ্যমান থাকে।

উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের নোটসমূহের ক্ষেত্রে নোটের সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা যাবে। তবে, উল্লেখিত অল্প ছেঁড়াফাটা ও ময়লা নোটের সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য প্রদানে ব্যাংক শাখাকে নিম্ন বর্ণিত ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবেঃ

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ক) ব্যাংক শাখার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা এবং বেসরকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রে অবশ্যই মর্যাদার দিক থেকে উক্ত পদমর্যাদার সমান) নিশ্চিত হবেন যে উপস্থাপিত নোটটিতে সম্পূর্ণ নোটের ৯০% এর বেশী অংশ বিদ্যমান এবং আসল নোট হিসেবে সন্দেহাতীতভাবে সনাক্ত হবার মতো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য নোটটিতে রয়েছে।

খ) উপস্থাপিত নোট একাধিক খন্ডে খন্ডিত নয় এবং খন্ড দুটি, সন্দেহাতীতভাবে একই নোটের অংশের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হবেন। এসব ক্ষেত্রে জমা গ্রহণকালে নোটের বিচ্ছিন্ন খন্ডদুটো এক পিঠে যথাসম্ভব সরু আকারের হালকা কাগজ দিয়ে এমনভাবে জোড়া লাগাতে হবে যাতে আসল নোট হিসেবে সনাক্তকরণের জন্য নোটটির পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়। দুই খন্ডে বিচ্ছিন্ন হয়নি কিন্তু পরীক্ষণকালে নাড়াচাড়ায় বিচ্ছিন্ন হতে পারে এমন জীর্ণ নোটেরও এক পিঠে অনুরূপভাবে যথাসম্ভব সরু আকারের হালকা কাগজ দিয়ে আবদ্ধ করতে হবে যাতে আসল নোট হিসেবে সনাক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়।

গ) অল্প ছেঁড়াফাটা নোট ও ময়লা নোটের বিনিময়মূল্য প্রদান করে গৃহীত এসব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকে বা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এর চেষ্ট শাখায় জমা দেয়ার সময় পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোটের সংঙ্গে মিশ্রিত না করে পৃথকভাবে প্যাকেট করে প্রেরণ করতে হবে।

তবে, সকল নোটের বিনিময় মূল্য সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা যায় না। এই নোটগুলোকে ‘দাবিযোগ্য (Claims)’ নোট হিসেবে অবিহিত করা হয়। এক্ষেত্রে, নোটের বিনিময়মূল্য সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা যাবে না, যদি নোটটিঃ

• অধিক ছেঁড়াফাটা, অত্যধিক জীর্ণ, আগুনে পোড়া/ঝলসানো/ড্যাম্প এবং ৯০% বা এর চেয়ে কম রয়েছে এমন হয়। এসব নোটের বিনিময় মূল্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রদেয় হবে; মূল্য সংগ্রহের জন্য এসব নোট বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণের ডাক বা কুরিয়ার মাশুল নোট জমাদানকারী থেকে আদায়যোগ্য হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, জালনোট উপস্থাপনকারীকে বা একাধিক নোটের বিভিন্ন অংশ একত্র করে প্রস্তুতকৃত (Built-up) নোটের উপস্থাপনকারীকে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দকরতে হবে এবং সোপর্দকরণকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটতম কার্যালয়কেও অবহিত করতে হবে।

উল্লেখিত নোটগুলোর ক্ষেত্রে, মানে জমাগ্রহণকালেই সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে বিনিময়মূল্য প্রদানযোগ্য নোট ব্যতীত অন্যান্য নোট অর্থাৎ অত্যধিক জীর্ণ, আগুনে পোড়া/ঝলসানো/ড্যাম্প বা সম্পূর্ণ নোটের ৯০% বা এর চেয়ে কম রয়েছে এমন নোট গ্রহণপূর্বক তার মূল্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণে নিম্ন বর্ণিত ব্যবস্থা অনুসরণীয় হবেঃ

ক) নোটের মূল্যমান, সিরিজ, নম্বর, জমাদানকারীর নাম ও পূর্ণ ঠিকানা সম্বলিত আবেদন পত্রের সঙ্গে ব্যাংক শাখা নোটটি গ্রহণ করবে। পরীক্ষণকালে নাড়াচাড়ায় বিচ্ছিন্ন হতে পারে এরকম নোটের এক পিঠে যথাসম্ভব সরু আকারের হালকা সাদা কাগজ দিয়ে এমনভাবে আবদ্ধ করতে হবে যাতে আসল নোট হিসেবে সনাক্তকরণের জন্য নোটটির পরীক্ষণে অসুবিধা না হয়। নোটের কোন অংশ বিদ্যমান না থাকলে সেখানে কোন কাগজ লাগানো যাবে না।

খ) জমাদানকারীর আবেদনপত্রসহ গৃহীত নোট শাখার ফরওয়ার্ডিং সহ সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকটতম কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক বরাবরে বাহকের মাধ্যমে কিংবা প্রাপ্তি স্বীকার স্লিপ সম্বলিত রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে/কুরিয়ারযোগে প্রেরণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কার্যালয় কর্তৃক প্রাপ্তির ০৮(আট) সপ্তাহের মধ্যে নোট রিফান্ড রেগুলেশন্স এর আওতায় নোটটির মূল্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে ও মূল্য প্রদানযোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাবে মূল্য জমা করা হবে।

আজ তাহলে এ পর্যন্তই। লেখাটি মূলত সংশ্লিষ্ট সার্কুলার এর আলোকেই। তারপরেও লেখায় কোন ভুল থাকলে ধরিয়ে দিবেন আশা করছি। তাতে করে আমার সাথে সাথে সবারই উপকার হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলুক প্রিয় প্রতিষ্ঠান। হ্যাপি ব্যাংকিং।

লেখকঃ প্রণব চৌধুরী, ম্যানেজার, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, গোলাপগঞ্জ শাখা, সিলেট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button