ব্যবসা ও বাণিজ্য

বাংলাদেশে পাবলিক রিলেশন ও ব্রান্ডিং

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার বিষয় ছিল মার্কেটিং। আমি টিউশনি করেছি হাতে গোনা। কারন আর কিছুই না বেসম্ভব ভাল বা তুখোড় ছাত্র ছিলাম না কখনো। ছাত্র জীবনে আমি আমার হাত খরচের টাকা যোগাতাম বিভিন্ন পত্রিকায় ফিচার লিখে, রিপোর্টিং করে, বিজ্ঞাপনি সংস্থায় স্ক্রিপ্ট লিখে। জাতীয় দৈনিকে সপ্তাহে একটি মৌলিক লেখা প্রকাশিত হলেই সে মাসের হাত খরচ উঠে আসত। আর পেশাগত জীবনে বেসরকারি ব্যাংকে পাবলিক রিলেশন আর ব্র‍্যান্ডিং এও কেটে গেল বেশ কয়েক বছর। বাংলাদেশের PR & Branding নিয়েই আমার এই লেখা যা পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত যা আপনার সাথে আমার দ্বিমত থাকতেই পারে।

বাংলাদেশে PR & Branding এর সমার্থক শব্দ হয়ে গেছে বিজ্ঞাপন দেয়া। অথচ বিজ্ঞাপন পন্য বাজারজাতকরণের একটি অংশ শুধু। কোন পন্য যখন ব্র‍্যান্ড হিসেবে গড়ে ওঠে তখন বিজ্ঞাপন তাকে এগিয়ে নেয় ঠিকই কিন্তু পন্যের মান ধরে রাখা, দিন দিন তা উন্নত করা, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা, ডিষ্ট্রিবিউশন চ্যানেল ঠিক রাখা আরো অনেক কাজ আছে। শুধু কাড়ি কাড়ি টাকার বিজ্ঞাপন দিলেই পন্য তার বাজার অবস্থান ধরে রাখতে পারেনা। তাইতো এককালের বিউটি সোপ আজ রেষ্টুরেন্টে হাত ধোয়ার সাবান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আবার মোটর সাইকেলের ব্র‍্যান্ড “হোন্ডা” যখন প্রতিষ্ঠিত ব্র‍্যান্ড সারাবিশ্বে তাকেও তার ব্র‍্যান্ডিং এ অনেক খরচ করতে হচ্ছে, প্রতিযোগিতা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত যাতে অন্যরা শীর্ষ স্থানে চলে না যায়। অনন্য কন্সেপ্ট অনেক সময় পন্যকে তার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে দেয় বহুদূর। বাংলাদেশে “পাঠাও” যেমন। আমরা সবাই তো কমবেশি ব্যাংকের ডিপিএস (DPS) এর সাথে পরিচিত, আমাদের অনেকের আছেও সেটা। এই পন্যটি উদ্ভাবন করেন যদি আমার জানার ভুল না থাকে তিনি হলেন মরহুম লুৎফর রহমান সরকার স্যার। দেখুন এই একটি পন্য সরকারি বেসরকারি সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিভাবে গ্রহণ করেছে? ডিপিএস কে কিন্তু ব্র‍্যান্ডিং এর চেয়ে এর বৈশিষ্ট্য উন্নয়ন করতে হচ্ছে ক্রমাগত। কারণ মানুষ জানে প্রতিটি ব্যাংকেরই ডিপিএস প্রোডাক্ট আছে।

জনসচেতনতা বিষয়ে ব্র‍্যান্ডিং বর্তমান এবং সম্ভাব্য গ্রাহকেরা খুব সুন্দরভাবে গ্রহণ করে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়ার হার বাড়ছে অনেক প্রতিষ্ঠানের। এর কারণ শুধুমাত্র বাংলাদেশেই কমবেশি সাড়ে আট কোটি মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। সর্বোপরি PR & ব্র‍্যান্ডিং যাতে শুধু দায়সারাভাবে বিজ্ঞাপন প্রদান আর প্রেস রিলিজ ছাপার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে তা আমাদেরই দেখতে হবে। ভাল মিডিয়া রিলেশন জনসংযোগ কর্মকর্তাকে এগিয়ে দেয় বহুদূর। আমি মনেকরি প্রতিটি জনসংযোগ কর্মকর্তার পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে প্রচুর। সর্বভুক পাঠক হতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ছোট বা বড় যে কোন স্ক্রিপ্ট বা কপির জন্য যে সব কর্মকর্তা বিজ্ঞাপনী সংস্থার দিকে চাতকের মত চেয়ে থাকে তাদের এই পেশায় না থাকাই উচিত। প্রচুর দেখা যায়, উদাহরণ দেয়া যায়, ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেছে, ফিলিপ কটলারের বই ঠোঁটস্থ কিন্তু একটুও ক্রিয়েটিভ না! অথচ অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে বড় পদে চলে গেছে… দুর্দান্ত ক্রিয়েটিভ কোন আইডিয়ার রুপ-রস নষ্ট করে দিচ্ছে অযাচিত কাটাছেঁড়া করে। পরিশেষে আশার কথা এই যে বর্তমানে দুর্দান্ত সব মানুষ আসছে আইডিয়াবাজিতে, বিজ্ঞাপনি সংস্থায়। সর্বোপরি PR & Branding প্রফেশনে যাদের দেখে অনুপ্রাণিত হই সারাক্ষণ।

লেখকঃ সৈয়দ আব্দুর রাকিব
মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড এর প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button