পদোন্নতী সমাচার: করপোরেট কালচারে অযোগ্যরা কেন বেশি বেশি প্রমোশন পায়?
পদোন্নতী সমাচার: করপোরেট কালচারে অযোগ্যরা কেন বেশি বেশি প্রমোশন পায়? এ প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছাড়াও বেশকিছু বিষয় সামনে এসে ভিড় করছে, জানি না তার কতটুকু প্রকাশ করতে পারব। এ পর্যন্ত কয়েকটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ হয়েছে। একটি সংস্থায় যোগদানের কিছুদিন পরই এক সহকর্মী, যিনি ছাত্রজীবনে রাজনীতি করতেন, আমাকে পরামর্শ দিলেন— ‘বসদের সামনে সবসময় কাগজপত্র নিয়ে খুব ছোটাছুটি করবেন। সবসময় দেখাবেন যে আপনি ভীষণ ব্যস্ত। আপনি আসলে কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন না, কিন্তু বসদের এবং অন্যদের দেখাবেন যে আপনি খুবই ব্যস্ত, বাঙালি বসরা বিষয়টি খুব পছন্দ করেন। আর তারা যা পছন্দ করেন, আপনি তা করতে পারলে কেল্লা ফতে।
কতবার তাদের কাছে গেলেন, কতবার সালাম দিলেন, সেটিই মুখ্য বিষয়। কারণে অকারণে তাদের সামনে পড়বেন, তাহলে তাদের নজরে চলে আসবেন। তারা অপনাকে পিক করে ফেলবে। তর তর করে উপরে উঠে যাবেন।’ একই সংস্থায় বহু বছর চাকরি করার পরে আরেকজনের কমেন্ট— ‘ব্রাদার শুধু মাথা নিচু করে কাজ করলে হয় না। বিগ বসদের চেয়েও বেশি যোগ্যতা ও কোয়ালিটি নিয়ে অনেকেই সেই প্রথমদিককার পদেই বসে থাকেন। উপরে ওঠা যায় না। তাদের কয়েকবার ডিঙিয়ে ব্যস্ত দেখানোর দল অনেক উপরে উঠে যায়। এগুলো হচ্ছে চাকরির টেকনিক।’
আসলেই বসদের কিছু বিষয় বেশ পছন্দের। কিছু ডাটা মুখস্থ করে রাখবেন এবং বসরা জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে কিছু একটা বলে দেবেন। সেটি হয়তো ঠিক ডাটা নয় কিন্তু বস তা যাচাই করতে যাবেন না। বরং ভাববেন, আপনি কতটা নিবেদিত এবং সিনসিয়ার যে সঙ্গে সঙ্গে ডাটা ও উত্তর দিতে পারছেন। ক্রিয়েটিভ প্রশ্নের মতো সেটি যদিও জানার প্রাথমিক স্তর অর্থাত্ জ্ঞান স্তর, তার পরও বসরা মনে করেন যে— এই লোকই তো দরকার। কারণ সে সঙ্গে সঙ্গে সব বলতে পারছে। কাজেই যারা চতুর তারা এ কাজই করেন। আর যারা অরিজিনাল কোনো সংবাদ দিতে চান একটু সিওর হয়ে নিয়ে, বসরা তাদের পছন্দ করেন না। কারণ তিনি কাজে বা প্রোগ্রামে নিবেদিতপ্রাণ নন। আর তাই সঙ্গে সঙ্গে কোনো হিসাব দিতে পারছেন না।
কাজেই তাদের সামনে কিছু কাগজপত্র নিয়ে অযথা ছোটাছুটি করতে হবে, তাদের দেখাতে হবে যে আপনার ঘাম প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছে, আপনার সঙ্গে থাকবে আপনার কাজ সম্পর্কিত দু-একটা অপ্রয়োজনীয় কাগজ। আপনি বসের কাছে কারণে অকারণে সময় নেবেন, কিছুক্ষণ কাটাবেন, তাতে চমত্কার এক সম্পর্কের সৃষ্টি হবে তার/তাদের সঙ্গে, যা আপনার কাজে লাগবে। কারণ সবাই তো ‘পার্থিব এবং বস্তুগত উন্নতিই চায়।’ আর সেটি হচ্ছে প্রমোশন, সেটি হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রণোদনা, সেটি হচ্ছে অফিসের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা। এ সবগুলোই ভোগ করেন এবং পেয়ে যান ওই ব্যস্ততা দেখানোর দল, ওই বসদের পছন্দের ডাটা মুখস্থ করে রাখার দল।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
আরেকজন বলেছিলেন, ‘যদি বসদের খুশি রাখতে পারেন তাহলে দুনিয়া জয় করতে পারবেন। আপনি যা ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেন, করতে পারেন, কোনো বাধা নেই। আর যদি আপনি বসের মনকে খুশি রাখতে না পারেন তাহলে যত ঝামেলা। তাহলে আপনার কাজের জায়গা মনে হবে জাহান্নাম। আপনি কোথায় গেছেন, কেন গেছেন, শোকজ, জবাবদিহিতা ইত্যাদি। তাই চতুর লোকজন সবসময়ই সবকিছুইতে এগিয়ে থাকে, জয়ী হয়। আর এ কারণেই করপোরেট কালচারে অযোগ্যরা তর তর করে উপরে উঠে যান। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তো অনেক আগেই বলেছেন, ‘যে তৈলে চাকা ঘোরে, সেই তৈলে মনও ফেরে। তৈল ছাড়া কোনো কাজ হয় না।’ তবে তা দিতে জানতে হবে। কিন্তু তৈল যারা দেয়, তারা কাজ করে না; যারা কাজ করে, তারা তৈল দেয় না। এ বিষয়টি করপোরেট কালচারে এখনো প্রাধান্য পায়নি এবং বাস্তবায়িত হয়নি।
আর তাই অযোগ্যরাই প্রমোশন পায়, উপরে ওঠে। আপনি যদি মন দিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনার কাজ সত্যিকার অর্থে ভ্যালু অ্যাড করতে পারে আপনার কর্মস্থলে, আপনার প্রতিষ্ঠানে; কিন্তু দেখবেন ওই দেখানোর দল এবং আপনার বস আপনাকে কোনো এক অজুহাতে একেবারে বোকা বানিয়ে ফেলবে। কারণ তিনি তো কাজ চান না, চান তোষামোদ। সব ভুয়াদের সামনে আপনাকে দেখাবেন যে, আপনার মতো বোকা বা অযোগ্য লোক আর নেই। আর ভুয়ার দল আপনাকে সেই সুযোগে আরো একটু নিচে নামাবে। কারণ আপনাকে নিচে নামাতে পারলেই তাদের লাভ। এই পুরো বিষয়টি সবাই আবার এনজয় করে। এভাবেই চলে আসছে। এভাবেই চলছে।
কাজ এক বিষয় আর তেল মারা অন্য বিষয়। কাজ দেখানোর নয়, করার; তোষামোদ করার কিছু নয়, শুধুই দেখানোর। কাজ প্রচারের নয়, কাজ ফল প্রদানের। বিশাল করপোরেট কালচারে প্রতিষ্ঠিত সিস্টেম ‘সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ণয় করে, সেখানে ব্যক্তিবিশেষের’ তোষামোদকরণ, তেলমর্দন, বসকে খুশি রাখার বিষয় যে প্রভাব ফেলে, তা প্রতিষ্ঠানের বিশালতা এবং প্রতিষ্ঠিত অস্তিত্বকে খুব একটা সমস্যায় ফেলে না। আর তার মধ্যে নিরলস, নির্লোভী এবং অরজিনাল কর্মীর প্রয়াস তো মিশে আছেই। কাজেই ফাঁকিবাজদের কোনো সমস্যা হয় না। তবে প্রতিষ্ঠানের মান যে হারে এবং যেভাবে রক্ষা করা যেত, সেটি হয় না; তাতে বস বা তার সঙ্গের কারোর কিছু আসে যায় না। যা করার, যা ভোগ করার, যা কামানোর, এরই মধ্যে তারা বাগিয়ে ফেলেছেন।
কাজেই সমস্যা খুব একটা চোখে পড়ে না এবং বিশাল কিছু এলোমেলো হয় না। আর তাই বিষয়টি যুগ যুগ ধরে চলতেই থাকে। এ বিষয়গুলো মিনিমাইজ করার জন্য ইদানীং অনেক ধরনের প্রশিক্ষণ আবিষ্কৃত হয়েছে, অনেক ধরনের মোটিভেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিন্তু কাজ খুব একটা হচ্ছে না। কারণ মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন করা অনেক কঠিন কাজ। আর যুগ যুগ ধরে চলে আসা কালচার পরিবর্তন করা সহজ নয়। আপনার বস তো সেই কালচারের অংশ, তিনি তো একজন মানুষ, যার রয়েছে সব ধরনের মানবিক দুর্বলতা।
মানবসভ্যতা এগিয়েছে অনেক দূর। চরম উন্নতি ঘটেছে বিজ্ঞানে, যার বলে মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মহাকাশে কোথায় কী আছে তা জানতে পারছে, এমনকি দেখতে পারছে। সমুদ্রের গভীরে কোথায় কী আছে তা আবিষ্কার করে ফেলেছে কিন্তু তার নিজের দেহের মধ্যে যে অদৃশ্য একটি জায়গা আছে, তার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সভ্যতা খুব একটা এগোয়নি। আর তাই সবাই যেন ফাঁকা বুলিই পছন্দ করে। সবাই যেন মিথ্যাকেই স্বাগত জানাতে চায়। সবাই যেন প্রদর্শনীকেই বেশি বেশি ভালোবাসে। কথায় বলে, ‘খালি কলস বেশি বাজে।’ অর্থাত্ কাজ যিনি কম করেন, তিনি তো কথা বলবেনই। বিষয়টি যেন সবাই ‘জেনেও না জানার ভান করে।’
সম্প্রতি আমাদের দেশ ভ্রমণ করে গেলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি তার রাজনৈতিক দলের মহাসচিব, চীন সেনাবাহিনীর কমান্ডার এবং চীনের মতো মহাশক্তিধর দেশ, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে, সেই দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। অথচ তার চলনবলন, কথা কোনো কিছুতেই কোনো আবেগ, উচ্ছ্বাস, মেলোড্রামটিজম নেই, কিছুই নেই। সহজ-সরল, স্বাভাবিক ও মৃদু হাসির মানুষ। আমাদের দেশের কোনো নেতার দিকে একটু তাকিয়ে দেখুন তো! তা টিভির পর্দায়ই হোক আর সরাসরিই হোক, দেখা যাবে তারা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছেন না, তীব্র আবেগে যেন ফেটে পড়ছেন কথা বলার সময়, অথচ সে রকম হওয়ার কোনো কারণই নেই।
কথা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আবেগে ফেটে পড়ছেন, মনে হচ্ছে যেন চারদিক থেকে অনেক কিছু বেরিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু একমুখ দিয়ে অত আবেগ একসঙ্গে বের করা সম্ভব নয়। আর তাই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। শি জিনপিংকে দেখে মনে হলো, অন্তর্মুখী চরিত্রের মানুষ; যিনি আসলে কাজের, দেখানোর নয়। কিন্তু করপোরেট কালচারে কাজের চেয়ে দেখানোর মূল্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আসল কর্মীরা প্রমোশন পান না; দেখানোর দলে যারা, তারাই পান।
পৃথিবীর যত বড় বড় গবেষক, বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক, শিক্ষাবিদ, তাদের বেশির ভাগই কিন্তু অন্তর্মুখী চরিত্রের। কারণ তারা যদি সবার সামনে শুধু দেখানোর জন্য বক বক করতেন, তাহলে পৃথিবীতে এত আবিষ্কার, উদ্ভাবন এবং পরিবর্তন হতো না। এই প্রতিষ্ঠিত সত্যের পরেও কেউই অন্তর্মুখী চরিত্রের লোকদের কাজের লোক ভাবে না, ভাবে অকর্মণ্য। সময় অসময়ে তারা সমালোচনা করবে, টিপ্পনি কাটবে এবং অনেক সময় টিজও করবে। তাতে তাদের কাজের খুব একটা ক্ষতি করতে পারেন না। তারা মুখ বুজে কাজ করেই যান। কারণ যারা আবিষ্কার করেছেন, তারা যখন এ কাজগুলো নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করতেন, তখন তাদের আশপাশের লোকজন তাদের ‘বোকা’ ও ‘পাগল’ ভাবতেন। কিন্তু তারা কাজ করেই গেছেন বলে পৃথিবীর এত উন্নয়ন হয়েছে, অথচ কেউই বিষয়টিকে সেভাবে স্বীকার করেন না।
কোনো প্রতিষ্ঠান যখন কোনো ব্যক্তি নিজে গড়েন, প্রতিষ্ঠান যদি তার নিজের হয়, একমাত্র তিনি তখন চিন্তা করেন কারা আসলে কাজ করে আর কারা শুধু বলে এবং দেখায়। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান যখন বৃহত্ এবং করপোরেট কালচার যেখানে চালু হয়েছে কিংবা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ‘তৈল মর্দনকারীরা’ এগোবে এবং সুবিধা নেবে। যিনি আপনাকে বিচার করবেন, আপনাকে অ্যাসেস করবেন, তার তো সেই অবস্থা নেই। তিনি তো প্রচলিত স্রোতের সঙ্গে মিশে আছেন। কাজেই কীভাবে তিনি বুঝবেন যে, একদল নীরব কর্মী আছেন, যারা কাজ করেন, বিশ্লেষণ করেন, চিন্তা করেন, গবেষণা করেন, প্রতিষ্ঠানের সত্যিকার ভালো চান। তিনি নিজেও তো বসদের খুশি করে উপরে উঠেছেন, বসদের গীত গেয়ে উপরে উঠেছেন।
কাজের সঙ্গে ‘বস খুশি করা’ ব্যাপারটি তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যারা আরো ভালো, তারা কাজও চান, ‘খুশি করাও চান’। যারা কাজ করেন বেশি আর বসদের খুশি করা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না, তাদের পদোন্নতি হওয়া কঠিন কিংবা হয়ই না। আপনি যদি কাজ বাগাতে চান তাহলে বস যা চায়, তা-ই করুন। কিন্তু সবাই যে তা করবেন না, এটিই পৃথিবীর নিয়ম। সবাই তা করলে এ সভ্যতা ভেঙে পড়ত। কিন্তু সভ্যতা যে বেঁচে থাকবে, সভ্যতা সামনে আরো এগোবে আর তা এগোবে নীরব কর্মীদের কারণেই, যারা কাজের চেয়ে প্রদর্শনীতে বিশ্বাসী বেশি, তাদের কারণে নয়।
কার্টেসিঃ সংগৃহীত
আরেকজন বলেছিলেন, ” যদি বসদের খুশি রাখেন তাহলে দুনিয়া জয় করতে পারবেন” … হা হা হা হা ……
এই “আরেকজন” এর সাথে আমার দেখা করতে ইচ্ছা করছে, কারণ এর মত বড় বলদ এই দুনিয়াতে নাই !!!
আরে বেটা বলদ … তুই যদি “বস” দের খুশিই রাখিশ, তাহলে তুই নিজেই তো বসদের আন্ডারে … এই অবস্থায় দুনিয়া জয় তো অনেক দুরের কথা, বসদের জুতার তলাও জয় করা অসম্ভব, আর আসছে বসদের পটাইয়ে দুনিয়া জয় করতে !!!
দুনিয়া জয় করতে হলে আগে নিজেকে জয় করা শিখতে হবে, এরপরে শিখতে হবে মানুষকে জয় করা … এটা আমার কথা না, এটা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের কথা, যে ৩০ বছর বয়সের আগেই অর্ধেক দুনিয়া জয় করে ফেলেছিল !!!