ব্যাংকার

ব্যাংকার্স প্রটেকশন অ্যাক্ট প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা

মিজানুর রহমানঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী (জুলাই-২০২১) বতর্মানে তালিকাভুক্ত ৬১টি ব্যাংকের রয়েছে ১০,৭৮৮ শাখাও ATM Booth রয়েছে ১২,৩৩৭টি। এছাড়াও আলাদাভাবে CDM ও CRM এর সংখ্যা ২,৫০০টি। যেখানে হাজারো গ্রাহকদের পদচারনা। ঐ গ্রাহকের মুখের হাসিতে ব্যাংকারের তথা যেকোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার চোখে মুখে চিত্তাকর্ষক হাসি ফুটে উঠে, আর এটাই সার্থক ব্যাংকারের বড়ো স্বীকৃতি। কথায় আছে, গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্মী।

আর যদি এর বিপরীত কিছু হয়, তবু তা ঘটতে পারে নিম্নমানের গ্রাহক সেবার কারণে। হ্যা, এমন দুই একটি ঘটনা যে একেবারে অস্বাভাবিক নয় তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিছু বিষয় আছে যাহা কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়, আর তাহাই মাঝে মধ্যে ঘটছেও সর্বত্র মিডিয়ায় স্থান পাচ্ছে। সেটি নিতান্তই করুন, দুঃখজনক ও অশ্রু ভেজা চোখে কখনো কখনো মেনে নেয়া কষ্টের।

সাম্প্রতিক সময়ের কিছু অপ্রীতিজনক ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, লোন অনুমোদন না হওয়ায় গ্রাহকের হাতে ব্যাংকার লাঞ্চিত। আবার এমন ঘটনাও ঘটেছে যে লোন না পাওয়ার কারণে ব্যাংকের শাখায় এসে প্রভাবশালী স্থানীয় গ্রাহকের দ্বারা শাখা ব্যবস্থাপক শারীরিকভাবে নির্যাতিত, প্রহারিত অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি। আবার অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিস্তি কালেকশন করতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন, আত্মহত্যা, শরীর জখম ইত্যাদি লোমহর্ষক ঘটনা ঘটছে অহরহ।

শুধু কি তাই? ২৬ আগস্ট, ২০২১ তারিখে মেহেরপুরের সদর উপজেলার একটি ব্যাংক এজেন্টের কর্মকর্তাকে ৪৬ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হয়ে কোমরে গুলি করে, অতপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।তাছাড়াও প্রতিনিয়ত মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের (MFS) টাকা সন্ত্রাসীদের দ্বারা ছিনতাই, ডাকাতি ও লুট হচ্ছে। সব খবর মিডিয়ায় আসে না তাই লাঞ্চনা, নির্যাতনের অনেক অপ্রীতিকর ও ভয়াবহ ঘটনা থেকে যায় অন্তরালে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছিল Bangladesh Bank Order -1972 এর (P.O. No. 127 of 1972) প্রেসিডেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে। তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে উহা ৩১ অক্টোবর, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। যা কার্যকর হয়েছিল ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১ থেকে। এরপর অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে অনেক ধরনের Act প্রনয়ন করা হয়েছে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে। বিশেষ করে Bank Company Act, 1991, Financial Institution Act, 1993, Micro Credit Regulatory Authority Act, 2006 ও Money Laundering Prevention Act, 2012 ও Anti Terrorism (Amendment) Act, 2013 । এছাড়াও একাধিক Act প্রণয়ন ও সময় উপযোগী Amendment করে আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অনবরত সাহায্য করছে।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা হচ্ছে ডিপোজিট সংগ্রহ এবং সেই অনুপাতে ঋণ প্রদান। এর জন্য প্রতিনিয়ত ব্যাংকারদের হার ভাঙ্গা পরিশ্রম আর সার্ভিস দিয়ে সন্তুষ্টের পাশাপাশি কমিটমেন্ট রক্ষা করতে হয় উচ্চ মাত্রায়। উভয়ের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমানত সুরক্ষার জন্য Bank Deposit Insurance Act, 2000 ও Foreign Exchange Regulations (Amendment) Act, 2015 প্রণয়ন করা হয়েছে।

আর ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করার সহায়ক হিসেবে ২০০৩ সালের ১ মে তারিখে আরেকটি আইন প্রবর্তিত, যার নাম Money Loan Court Act, 2003 যাহা অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ নামে সমগ্র পরিচিত। যদিও এই আইনের বিষয়ে রয়েছে নানান সীমাবদ্ধতার প্রশ্ন, তথাপিও জনগণের অর্থকরীর নিরাপত্তা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আইনগতভাবে মেরুদণ্ড শক্ত রাখতে বিশেষ সহায়তা প্রদান করে থাকে।

প্রতিদিন এক শাখা থেকে অন্য শাখায় অর্থ সরবরাহ একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কখনো কখনো রিমোর্ট এলাকার ক্যাশ আনা নেয়ায় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। সেই সাথে ATM এর ক্যাশ লোড, আনলোড করতে জীবনের নিরাপত্তার ভাবনায় ফেলে দেয়। এদিকে সারাদেশে Agent Banking, Financial Inclusion, Mobile Banking ও Digital Post Banking সহ একাধিক ব্যাংকিং চ্যানেল তৈরী হওয়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকারদের নিরাপত্তার প্রশ্ন অতিশয়ভাবে দেখা দিয়েছে।

তবুও সবকিছুই ঠিকঠাকভাবে চলে আসছে। কিন্তু বাক বিতন্ডার মুল কেন্দ্র হলো High DBR, অসঙ্গতি ইনকাম ও অপর্যাপ্ত সিকিউরিটি ডকুমেন্ট সে কারনে যখন কাঙ্ক্ষিত ঋণ অনুমোদনে ব্যর্থ। তখনই সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বিভিন্নভাবে ঝুঁকিতে পরে যায়। কখনো দেখা গেছে লোনের টাকা চাইতে গেলে উল্টো চাঁদাবাজির মামলায় পরতে হয়েছে।

আবার সম্মুখীন হয়েছে বিভিন্ন নির্যাতনের। তখন আদালতে বিচারের সম্মুখীন হলে উল্লেখিত অভিযোগের বিচার সম্পন্ন হয় প্রচলিত আইনের মাধ্যমে, সেখানে পাচ্ছে না কোন নির্দিষ্ট Act কিংবা সার্বিক সুরক্ষা আইন সহায়তা। আর নির্দিষ্ট আইন না থাকায় বিচার কার্য হয় বিলম্বিত, বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে পার পেয়ে যায় সত্যিকারের অপরাধী।

দুঃখজনক হলেও এটাই দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, যারা দেশের অর্থনীতিকে বেগবান ও জাতীয় বাজেটসহ আর্থিক সুরক্ষায় নিরলসভাবে নিমগ্ন, তাদেরই জীবনের নিরাপত্তার অভাব ও আর্থিক কর্মকান্ড সুচারুরূপে পরিচালনার নিমিত্তে নিরাপত্তা আইন না থাকায় ভাবিয়ে তুলছে। এছাড়াও আগামী দিনে ৯৯ হাজার কোটি NPL কে তদারকি করতে সুরক্ষা আইনের ভিত্তি রচনা জরুরি।

আরও দেখুন:
◾ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি না হওয়ার সুযোগ বাড়ল
◾ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরও বাড়লো
◾ ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা

সুতরাং আইন বিশেষজ্ঞ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শুভাকাংখী আইনজীবীরা উপলব্দির অবস্থান থেকে মনে করেন যে, অর্থই সকল কর্মের জ্বালানি বা উপাদান। আর এই প্রতিষ্ঠানে যারা উল্লেখিত ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের সুরক্ষার জন্য ও আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে Bankers Protection Act প্রবর্তন করা খুবই জরুরি। আর পক্ষান্তরে ব্যাংকারদের সুরক্ষা মানেই জাতীয় আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার সামিল।

মিজানুর রহমান, মতামত ও কলাম লেখক এবং ব্যাংক কর্মকর্তা, অল্টারনেটিভ ডেলিভারি চ্যানেল, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button