সাম্প্রতিক ব্যাংক নিউজ

আমাদের ব্যাংকার সেবকরা

কোভিড-১৯ মহামারীতে পুরাে বিশ্ব যখন বিধ্বস্ত, আক্রান্তের সংখ্যা পিপিলিকার দলের মত ছড়াচ্ছে সর্বত্র, যখন মানুষগুলাে নিঃশ্বাস টানতে না পারার অপরাধে পড়ে থাকছে প্লাস্টিক ব্যাগে, তখনাে আমরা কিছু মানুষ নিজ গৃহে কম্বল মুড়ে নিরাপদে থাকছি পরিবার নিয়ে। তখনাে কিছু মানুষ প্রবল শক্তিতে পুনরায় ফিরে আসছে নিজ পরিবারে। আর আমাদের এই ফিরে আসা, নিরাপদে থাকার পিছনে সর্বোচ্চ অবদান, ত্যাগ, প্রচেষ্টা যাদের, তারাই আমাদের কমিউনিটি সেবক; এই লড়াইয়ে টিকে থাকার আশ্বাস।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

কোভিড-১৯ মহামারী বিস্তার প্রতিরােধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে যখন সকল নন-এসেনশিয়াল চাকরি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলাে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তখনাে কিছু এসেনশিয়াল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থে নিয়মিত চালু রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে একটি হলাে ব্যাংকগুলাে। লকডাউনের সময়সূচি দীর্ঘ মেয়াদ করা হলেও, অর্থনৈতিক সার্বিক সেবা প্রদানে খােলা রাখা হয়েছে ব্যাংকগুলাে। এই মুহূর্তে ব্যাংক এবং ব্যাংকারদের সেবা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

ব্যাংক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা অর্থ গ্রহণ এবং প্রদানের সাথে অর্থ সংরক্ষণে ইচ্ছুক লােকদের জন্য বিনিয়ােগ প্রসারিত করতে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে থাকে। এই লােন এবং ব্যবসায়িক বিনিয়ােগ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সক্ষম করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কোভিড-১৯ মহামারী প্রায় এক শতাব্দীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য সবচেয়ে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা ভাবছেন। এই অর্থনৈতিক মন্দা ও ধসের সাথে সাথে বড় অগ্রাধিকার নিয়ে মন্দা অবস্থা কাটিয়ে ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রয়ােজনীয় কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছেন খুচরা ব্যাংকগুলি।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

মার্চের শুরুতে এফডিআইসি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে করােনভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত গ্রাহক এবং সদস্যদের প্রয়ােজন মেটাতে সহায়তা করার জন্য উৎসাহিত করার প্রেক্ষিতে অনেক ব্যাংকই দেরিতে বা মিস করা ক্রেডিট কার্ড বিল প্রদানের উপর ফি মওকুফ করছে এবং লক করা সিডিতে অর্থের প্রয়ােজন এমন কর্মহীন গ্রাহকদের প্রথম দিকে প্রত্যাহারের জরিমানা মওকুফ করছে।

অনেক ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে মর্গেজ পেমেন্ট স্থগিত রেখে হােম ওনারদের মর্গেজ রিলিফ অপশনে সহযােগিতা করছে এবং পিপিপি লােনের মাধ্যমে ছােট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলােকে সচল রাখছে যেন তাদের কর্মচারীরা পেরােলে থাকতে পারেন। ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও গ্রাহকদের সুদের হার হ্রাস করছে অনেক ব্যাংক।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকগুলাের এই কার্যক্রমে ব্যাংকারদের ভূমিকা অনন্য। নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সক্ষমে সেবা দিয়ে যাচ্ছে তারা নিরলস। দূরত্ব বজায় রেখে কাজের জন্য কখনোই ট্রেইন করা হয়নি ব্যাংকারদের, তবু এই মহামারীর দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্বের পরামর্শ এবং তদারকি ও সম্মতিমূলক ক্রিয়াকলাপে বিতরণ চ্যানেলগুলি উন্মুক্ত রেখে কাজ করছেন ব্যাংকগুলাের সুপারভাইজার, ম্যানেজার, ফাইনানশিয়াল এনালিস্ট, ব্যাংক টেলার এবং লােন কর্মকর্তারা।

কথা হয় বাফেলাের এভান্স ব্যাংকে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংক টেলারের সাথে। দীর্ঘ চার বছরের কর্মকালে দরজা বন্ধ রেখে ‘ওয়ান এট এ টাইম উইথ এপয়েন্টমেন্ট’ গ্রাহক ভিজিট তিনি কখনাে দেখবেন বলে ভাবেননি। বাফেলাের প্রায় ব্যাংকগুলােতেই এখন জরুরি ভিত্তিতে এপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে গ্রাহক নিচ্ছে ব্যাংকের ভিতর। তাছাড়া দরজা বন্ধ রেখে ড্রাইভ-ব্যাংক সিস্টেম চলছে ব্যাংকগুলােতে।

এক্ষেত্রে এয়ার প্রেসার টানেলের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করা হয়। ব্যাংকাররা গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে ১৫/২০ ফুট দূরত্ব রেখে ব্যাংকের ভিতর কাজ করেন। স্পিকারে কথা বলা হয় গ্রাহকদের সাথে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংক টেলার বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকে রুলেট প্রুফ গ্লাস ওয়াল। আমরা গ্রাহকদের ভিতর থেকে দেখতে পারি। তারা দেখেন না পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার নিয়ে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথেই আমরা কাজ করছি।

আপাতত আমরা স্মল বিজনেস ওনারদের পিপিপি লােনের মাধ্যমে সাহায্য করছি। ফোন কলে তাদের সকল তথ্য নেয়া হয়। তবে শারীরিকভাবে সিহনেচারের প্রয়ােজনে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে একজন করে গ্রাহকের ভিতরে প্রবেশ করানাে হয়। জানতে চাইলাম, যদি এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ভিতরে ঢােকা ব্যক্তিটি কোন রবার হয়? এমন রিস্ক নিয়ে কাজ করতে কেমন বােধ করছেন? তিনি বললেন, অর্থনৈতিক এমন মন্দাকালে যদি আমরা কেবল নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবি, তাহলে পুনরায় দেশের অর্থনীতি ফিরতে পারবে কি? বললাম, তাও ঠিক। ধন্যবাদ।

কুইন্সের ক্যাপিটাল ওয়ান ব্যাংকে কর্মরত একজন টেলার বলেন, ‘এই ভয়াবহ মহামারীর সময়েও আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছি, পাবলিক বাসে ট্রেনে চড়ছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রাহক এবং দেশকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি-এটা আমাদের দায়িত্ব। তবে আতঙ্ক আমাদের মাঝেও আছে। কারণ আমাদেরও পরিবার আছে।’

বর্তমানে অনেকেই ঘরে জমানাে খুচরা কয়েনগুলাে এক করে ব্যাংকে জমা করছেন। প্রায়ই দেখা যায় হাজারের উপর কয়েন জমা করছেন গ্রাহকরা। কোন না কোনভাবে সেইসব কয়েনেও ভাইরাস থাকার সুযােগ রয়েছে। ব্যাংকের এটিএম মেশিনগুলােতে সপ্তাহে অন্তত একবার ক্যাশ শিপমেন্ট আসে। অতিমাত্রায় ক্যাশ আউটের কারণে অনেক এটিএম মেশিনই কাজ করছে না। সেগুলাে ঠিক করতেও ম্যাকানিক ডাকতে হয়।

পিপিপি লােন এবং অন্যান্য জরুরি কাজে সিগনেচারের প্রয়ােজনে গ্রাহকের সামনে বসতে হচ্ছে, যদিও সােস্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা হচ্ছে প্রতিটা ব্যাংকে, তবু কোভিড-১৯ কখন কোন সুযােগে ঢুকে পড়ে দেহে তা বলা মুশকিল। অনেক সময় অপরিচ্ছন্ন ডলার, চেক, অসংখ্য কয়েনে হাত দিতে হচ্ছে রােজ টেলারদের …

সেখানেও একটা বড় রিস্ক থেকে যায়, কেননা প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে কোভিড-১৯ কার্ডবাের্ড এবং কাগজ-ভিত্তিক পণ্যগুলির তুলনায় দীর্ঘ সময়ের জন্য ডলারের উপর থাকতে পারে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নগদ অর্থ ২৫% লিনেন এবং ৭৫% তুলা নিয়ে গঠিত, কাগজ নয়। তারপরও আমাদের ব্যাংকাররা থেমে নেই।

অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টায় ঝুঁকি নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মমাফিক। তাদের এই প্রচেষ্টা শুধু আমাদের কমিউনিটির জন্যই নয়, বরং পুরাে দেশের অর্থনৈতিক ধসকে শিথিল করতে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের এই মহামারীর দিনে। আগামীতে ভবিষ্যত প্রজন্ম শ্রদ্ধার সাথে তাদের স্মরণ করবে।

অন্যান্য কমিউনিটি সেবকদের প্রতি দৃষ্টি রেখে, মহামারীর এই কঠিন সময়ে অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে কর্মরত ব্যাংকারদের প্রতি সামান্য সম্মানার্থে, মেয়র-গভর্নর বা প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে বিশেষ কোন ‘ধন্যবাদ গিফট কার্ড’ আমাদের ব্যাংকার সেবকদের জন্য পাঠানাে উচিত বলে আমি মনে করছি।

লেখকঃ এইচ বি রিতা- নিউইয়র্ক[প্রকাশিত এই লেখাটি লেখকের একান্তই নিজস্ব। ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ লেখকের মতাদর্শ ও লেখার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রকাশিত লেখা ও মতামতের জন্য ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ দায়ী নয়।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button