সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রের নমিনি করছেন কাকে?

সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে নমিনি। সঞ্চয়পত্র কেনার সময় ফরমে নমিনির নাম উল্লেখ করতে হয়। কেউ আবার উল্লেখ করেনও না। নমিনি আবার একাধিকও থাকতে পারেন। কোনো কারণে গ্রাহক মারা গেলে টাকা পাবেন নমিনি।

গ্রাহক মারা গেলে টাকা কে পাবেন, নমিনি না উত্তরাধিকারী—এ নিয়ে একটি বিতর্ক ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৭ সালের আগস্টে এ ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করার পর আপাতত বিতর্কের অবসান ঘটে। তবে গ্রাহক মারা গেলে তাঁর উত্তরাধিকারীরা টাকা পাবেন—আদালতের এমন একটি রায়ও রয়েছে।

২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনার কার্যক্রম চালু হয়। সেই থেকে অর্থ বিভাগের আওতাধীন ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ নামক কর্মসূচিতে সব গ্রাহক ও নমিনির তথ্য-উপাত্ত থাকছে। এটি ‘স্ট্রেংদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনাবল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতাধীন একটি কর্মসূচি।

তবে মূল গ্রাহক মারা গেলে নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা কীভাবে তা পরিচালনা করবেন বা নগদায়ন করবেন, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর কেস-টু-কেস ভিত্তিতে এ ধরনের অভিযোগের সমাধান করছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, গ্রাহক মারা গেলে সঞ্চয়পত্রের মালিকানা নমিনির নামে স্থানান্তর করা হয়। তিনি টাকা নগদায়নও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের তথ্য ও কাগজপত্রের দরকার পড়বে।

প্রথমেই লাগবে নমিনির স্ব-ব্যাখ্যায়িত একটি আবেদন। এ ছাড়া মূল গ্রাহকের মৃত্যুসনদের সত্যায়িত অনুলিপি, গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি, নমিনির ব্যাংক হিসাবের তথ্য ও মুঠোফোন নম্বর এবং যে প্রতিষ্ঠান থেকে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশপত্র।

১৯৭৭ সালের সঞ্চয়পত্র বিধি অনুযায়ী নমিনির অনুকূলে সঞ্চয়পত্র স্থানান্তর অথবা নগদায়ন করতে হয়। একই বিধি অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র ইস্যু কর্মকর্তাই নগদায়ন করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আগে যে কাউকে নমিনি করা যেত। এ ধরনের সুযোগ এখন তেমন একটা নেই। অনলাইন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর থেকে পুরো ব্যাপারটি অনেক স্বচ্ছ হয়েছে।’

তবে নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে সঞ্চয় অধিদপ্তর সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মালিকানা ঠিক করবে। তার আগে অভিভাবকত্ব সনদ নিতে হবে আদালত থেকে। পরে ইস্যু অফিসে তা দাখিল করতে হবে। সে ক্ষেত্রে নগদায়ন হবে আদালতের নিয়োগ করা অভিভাবকের অনুকূলে।

সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক যদি নমিনি ঠিক না করে থাকেন বা গ্রাহকের আগে নমিনি মারা যান, তাহলে অধিদপ্তরসহ অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নমিনি না থাকলে তথ্য ও কাগজ লাগবে আট ধরনের। প্রথমেই নিতে হবে আদালত থেকে উত্তরাধিকার সনদ (সাকসেশন সার্টিফিকেট)। উত্তরাধিকারীদের পক্ষ থেকে বিশদ বিবরণসহ ইস্যু কর্মকর্তার কাছে সাদা কাগজে আবেদন করতে হবে।

চিকিৎসক এবং স্থানীয় সরকারের (ইউনিয়ন, পৌরসভা, কাউন্সিলর কার্যালয়) কাছ থেকে গ্রাহকের মৃত্যুসনদ বা মৃত্যু নিবন্ধন নিতে হবে। লাগবে উত্তরাধিকারীর নাগরিক সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। উত্তরাধিকারী সবার দুই কপি করে পাসপোর্ট আকারের ছবিও লাগবে।

এ ছাড়া লাগবে উত্তরাধিকারীর স্বাক্ষর সত্যায়িত সনদ এবং যথাযথভাবে পূরণ করা তদন্ত ফরম। উত্তরাধিকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে পারিবারিক আদালত থেকে নিতে হবে অভিভাবকত্বের সনদ।

ঢাকা, চাঁদপুর, ভোলা, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৫০টির বেশি নমিনিবিষয়ক আবেদন সংশোধন করে সঞ্চয় অধিদপ্তর চলতি আগস্ট মাসে সাতটি আলাদা চিঠি দিয়েছে এসপিএফএমএসের পরিচালকের কাছে। নমিনির মৃত্যুতে নতুন নমিনি এবং মৃত্যু ছাড়াও নমিনি পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে এসব আবেদন জমা পড়ে।

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের একজন গ্রাহক মারা গেলে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী সম্পত্তি যেভাবে বণ্টন হওয়ার কথা, তার সঙ্গে না মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকেরা অন্য কাউকে নমিনি করলেই জটিলতা বাড়ে।

স্বামী ছিলেন সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নমিনি করে যান দ্বিতীয় স্ত্রীকে। কিন্তু প্রথম ঘরে ছেলে-মেয়ে আছে তাঁর। এখন টাকা তাহলে কে বা কারা পাবেন? একটি মামলার রায়ের উদাহরণ দিয়ে হাইকোর্টের আইনজীবী নাজনীন নাহার বলেন, ‘নমিনির নাম থাকলেই যে তিনি টাকা পাবেন, এমন নয়। নমিনি হচ্ছেন এজেন্ট। তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে টাকা তুলে উত্তরাধিকারদের দিয়ে দেওয়া। এজেন্ট মারা গেলে তাঁর ছেলেমেয়েরা নিশ্চয়ই উত্তরাধিকারসূত্রে এজেন্ট হবেন না। সুতরাং এমন আইন বা নিয়ম করা উচিত নয়, যা মূল আইনকে আঘাত করে।’

আরও দেখুন:
◾ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের তথ্য যাচাই করবে রাজস্ব বোর্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button