নিশাচর ব্যাংকার
১৯৮২ সালের বার্ষিক সমাপনী বা এনুয়াল ক্লোজিং। আমি তখন অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার সেকেন্ড অফিসার, বলা যায় নবীশ ব্যাংকার। ব্যাংকারদের জীবনে ক্লোজিং বা বার্ষিক সমাপনী কতটা উত্তেজনা ও পেরেশানীর বিষয় তা অন্য প্রফেশানের কাউকে বুঝানো সহজ নয়। ব্যাংকারদের পক্ষেই কেবল সম্ভব এটা উপলব্ধি করা। অগ্রনী ব্যাংকের বার্ষিক ক্লোজিং এ প্রায় শ খানেক বিবরণী দাখিল করতে হতো। আমাদের থানা সদরে অবস্থিত শাখার জন্য সবগুলো প্রযোজ্য ছিল না।
কিন্তু নির্দেশ হলো প্রযোজ্য না হলে শূন্য বিবরণী পাঠাতে হবে। আসলে MIS সিস্টেম তখন অনেকটাই প্রাথমিক পর্যায়ের ছিল এবং আমার মনে হতো এখানে সংস্কারের অনেক সুযোগ ও প্রয়োজন আছে। এ সমস্ত বিবরণী আবার ৩১ তারিখেই স্পেশাল মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ৩১ তারিখ সকালেই বান্ডিল করে জোনাল অফিসে পাঠাতে হতো। আমরা ৩০ তারিখের আগেই শূন্য বিবরণীগুলো শাখার সীল ছাপ্পর দিয়ে রেডি করে ফেলতাম। কিন্তু ৩০ তারিখে ক্যাশ ক্লোজ হতো দেরী করে এমনকি রাতেও হতো। সেদিনও তেমনটা হলো।
সন্ধ্যার পরে আমরা বসলাম সব বিবরণী নিয়ে। এমনিতেই জনশক্তির ঘাটতি থাকতো শাখাগুলোতে, তার উপর রাতের মধ্যেই চেষ্টা করা হতো লেজারগুলো ব্যালেন্স করার। ফলে কাজের চাপে সময় জ্ঞান আর থাকলো না। কাজ শেষ হলে পরে মনে হলো রাত গভীর হয়েছে কিন্তু কটা বাজে তা দেখার মত ফুরসত বা অনুভূতি ছিল না। বাসা কাছেই ছিল, যাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম, ‘রাত বেশি বাকি নেই, বাসায় গিয়ে সামান্য ঘুমিয়ে নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে এর পর লম্বা ঘুম দিতে হবে।’ কিন্তু কী আশ্চর্য্য! বাসার দরজার কড়া নাড়া দিতেই মসজিদ থেকে ফজরের আজান ধ্বনিত হলো রাত যে কখন শেষ হয়ে গেল টেরও পেলাম না।
রাত দুপুরে বাসায় ফেরার ঘটনা অনেক হয়েছে। যখন ম্যানেজার হলাম এমন একাধিকবার হয়েছে, রিক্সায় বাসার দিকে যাচ্ছি আর গীর্জার ঘন্টাধ্বনি শুনছি। গুনতে গুনতে দেখি বারোটা ঘন্টা বাজলো। রাত বারোটা; আমি ব্যাংকার তখনও রাস্তায়! উল্লেখ্য যে, এই ঘটনাগুলো কখনও বিরক্তি উৎপাদন করতে পারেনি মনে। বরং এই পরিশ্রমে এক ধরনের সন্তুষ্টি ও আত্মতৃপ্তি পেতাম এই ভেবে যে, দেশ ও জাতির আর্থিক উন্নয়নে আমিও সম্ভব মত ভূমিকা রাখছি।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
পরবর্তী জীবনে এই বাড়তি সময় দেয়া অনেক কাজে লেগেছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকের শুরুর দিকটায় যেভাবে কাজ করতে হয়েছে তা ভাবলে এখনও একটি আনন্দানুভতিতে ভরে যায় মনটা। ইসলামী ব্যাংকের এককালীন প্রধান নির্বাহী কামাল উদ্দিন চৌধুরী প্রায়শই বলতেন ‘ব্যাংকার আর লেট সিটিং অবিচ্ছেদ্য।’ যা বলছিলাম- একদিনের জন্যও মনে হয়নি যে, আমি কেন গাধার মত এমন বাড়তি বোঝা বইবো? অফিস শেষ হয় পাঁচটায়, আমি কোন রাত পর্যন্ত কাজ করবো? মনে হতো, মেধা ও যোগ্যতা যেটুকুন আল্লাহ দিয়েছেন তা কাজে লাগাতে পারছি এটাও তো আল্লাহর অনুগ্রহ! আমার মনে হয়, দৃষ্টিভঙ্গিটা ইতিবাচক রাখতে পারলে বহু মানসিক সমস্যা আর সমস্যা থাকে না; বরং সেটা আনন্দের বিষয়ে পরিনত হয়।
কার্টেসিঃ নুরুল ইসলাম খলিফা