নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করে এনজিওগুলো ফায়দা লুটছে

একজন ঋণ প্রার্থী এনজিওর কাছ থেকে ঋণ চাইলে, এনজিও কর্মী তাকে ব্যাংকে পাঠিয়ে দেন হিসাব খোলার জন্য। ভদ্রলোক ব্যাংকের শাখায় এসে বলে “স্যার আমি একটি একাউন্ট খুলবো”।

তার কাছে যদি জানতে চাওয়া হয় কি কারনে আপনি হিসাবটি খুলতে চান? সে খুব সুন্দরভাবে এনজিও কর্মীর শিখিয়ে দেয়া উত্তরটি দিয়ে দেয়। “স্যার আমার ছেলে বিদেশে থাকে, সে টাকা পাঠাবে”।

কিন্তু হিসাবটি খোলার পরপরই সে বলে, তার চেক বই লাগবে। তখন তাকে যদি বলা হয়, আপনার হিসাবে তো উত্তোলন করার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই, সুতরাং এখনই আপনি চেক বই দিয়ে কি করবেন? তখন বলে- “দরকার আছে স্যার”।

খুব পিড়াপিড়ি করলে আসল তথ্য বের হয়, মশাইয়ের তিনটি চেকের পাতা লাগবে! এবং আজই লাগবে। কারন, তাকে এনজিও থেকে ঋণ নিতে গেলে চেকের তিনটি খালি পাতা জমা দিতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

অতপর চেক বইটি দেয়া হলে, ঘন্টা দু’য়েক পর লোকটি আবার ব্যাংকে আসে। এবার আসে এনজিওর দেয়া ঋণের একাউন্ট পেয়ী চেক নিয়ে। এবার এসে বলে, “স্যার আমার টাকাটা একটু দিয়ে দেন, খুব দরকার স্যার!”

বলি আরে ভাই, এনজিও আপনাকে পাঁচ লক্ষ টাকার চেক দিয়েছে, কিন্তু আমি তো আপনাকে এখনই টাকা দিতে পারবো না। তখন তার প্রশ্ন কেন দিতে পারবেন না?

তখন তাকে বলি আপনার এই চেকটি তো অন্য ব্যাংকের, এটি তো আগে অমুক ব্যাংক থেকে লোকাল কালেকশন বা ক্লিয়ারিং এর মাধ্যমে কালেকশন করতে হবে। তারপর আপনি টাকা পাবেন। আজ দেয়া যাবে না। আপনি বরং আজ চেকটি আপনার একাউন্টে জমা করে যান, আমরা কালেকশন করে রাখবো কাল এসে টাকা নিয়ে যাবেন।

আর যদি ক্যাশ কাউন্টারে টাকা না থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই। এবার বের হয় ভদ্রলোকের আসল রূপ! আপনি টাকা দিবেন না ক্যান? ব্যাংক চালান, পর্যাপ্ত টাকা রাখেন না ক্যান? অতপর মেম্বার-চেয়ারম্যান, নেতা-নেত্রীকে ফোন দেয়া শুরু হয়। টাকা না নিয়ে সে যাবেই না, কোন উপায় নেই। ঐ দিকে এনজিও কর্মী ঋণ দিয়ে কি শান্তিতে তৃপ্তির ঢেকুর গিলছে।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

এনজিওর ঋণ বিতরনে ব্যাংকের দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়। কিছু দিন পর ঋণটি যদি খেলাপী হয়ে যায়, তখন কি ভদ্রভাবে এনজিও কর্মী এসে বলে “স্যার আমাদের এই তিনটি চেক ডিজঅনার করে দেন!”

লোকবল স্বল্পতায় কিছু কিছু ব্যাংক শাখার দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন করতে যেখানে হিমশিম খেতে হয়, তার উপর এই ডিজঅনারের আবদার শুনলে ইচ্ছে করে গলা ফাটিয়ে বলি, মিয়া মগের মূল্লুক পাইছো? আমাদের মাথায় লবণ-মরিচ রেখে আর কতো বড়ই খাইবা? ঋণ দিবা তোমরা, গ্রাহকের হিসাব খুলে তার আইডেনটিটি এনশিউর করে দেবো আমরা ব্যাংকাররা? একাউন্ট পেয়ী চেক দাও কেন?, সরাসরি গ্রাহককে টাকা দিয়ে দাও। ব্ল্যাংক চেক কেন রাখো? আমাদের কেন এতো ব্যবহার করছো? একাউন্ট খুলে দিলাম, চেক বই দিলাম, নগদ ক্যাশ দিতেও বাধ্য হলাম আর কি সুন্দর মতো নিরাপদে লাভটা তোমাদের থলেয়!

এরপর এখানেই শেষ নয় আরো আছে…
কিছু দিন লেনদেন না করায় ঐ একাউন্টটি প্রথমে ইনঅপারেটিভ হবে, তারপর ডরমেন্ট হবে। এতো ব্যাংকারারের আরেক প্যারা। জোনাল অফিস ও হেড অফিস থেকে প্রতি নিয়ত চাপ আসা শুরু একাউন্ট রেগুলার করো এতো ইনঅপারেটিভ ও ডরমেন্ট একাউন্ট কেন?

মোট কথা হচ্ছে, এনজিওগুলো এখনো সেই মান্ধাতার আমলের ঋণ-দান পদ্ধতি নিয়ে বসে আসে। কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে আমাদের ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করে। সময় এসেছে বিষয়টি নিয়ে ভাববার। তারা গবেষণা করুক। তৈরি করুক নতুন কোন পদ্ধতি। এভাবে আমাদেরকে ব্যবহার করে এনজিওর মালিকরা প্রাডো গাড়ি নিয়ে চলে, যা দেখলে আমার কেনো যেন অস্বস্তিবোধ হয়……..সুতরাং একথা বলা যায় যে, ব্যাংকারের মাথায় লবণ রেখে বড়ই খাচ্ছে এনজিও।

কার্টেসিঃ মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন (পরিমার্জিত ও পরিবর্তিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button