অর্থনীতিইসলামী অর্থনীতি

সফল জীবনের কল্পকথাঃ যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি-২

জিএম সরওয়ার বিশ্বাসঃ  সভ্যতার আদিকাল হতে সফলতার বিষয়টি সামনে রেখে মানুষ বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এজন্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন পরম্পরায় মুদ্রা ব্যবস্থা চালু করেছে যার রুপ নানান দেশে নানারুপে প্রতিষ্ঠিত। এই মুদ্রা ব্যবস্থাকে সুচারুভাবে চালু রাখার জন্য বর্তমান বিশ্বে তিন ধরনের অর্থব্যবস্থা চালু আছে আর সেগুলি হলঃ
১। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা;
২। সমাজ তান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা; ও
৩। যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থ।

এ অধ্যায়ে আমি যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই। প্রথমেই জেনে নেয়া যাক যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা কি এবং কিভাবে এই অর্থব্যবস্থাকে সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত করা যায়?

যাকাত হলো এমন একটি অর্থব্যবস্থা, যা ঐশী বানী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সুবহানাল্লাহ স্বয়ং এই ব্যবস্থার প্রবক্তা। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে যাকাত প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- তোমরা সালাত কায়েম করো ও যাকাত দাও। সুতরাং যাকাত প্রদান করা ফরজ বা অবশ্য করণীয়। এখন প্রশ্ন হলো যাকাত কি এবং কারা এটা প্রদান করবে?

আল কুরআনে যাকাতঃ
১. নিশ্চয়ই সদকাহ্ (যাকাত) হলো- ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্যে, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্যে-এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ্ ৯:৬০)।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

২. আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎ কাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরাহ হাজ্জ ২২: ৪১)।

৩. এটা (যাকাত) প্রাপ্য সেসব অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকায় জীবিকার জন্যে জমিনে পদচারণা করতে পারে না এবং (আত্মসম্ভ্রমের কারণে) কারো নিকট হাত পাতে না বলে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তোমরা তাদের (দারিদ্র্যের) লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট মিনতি করে যাচনা করে না। আর যে কল্যাণকর কিছু তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা সবশেষ অবহিত। (সূরাহ বাকারাহ ২:২৭৩)।

৪. এবং তিনিই মাচাযু্ক্ত (কাণ্ডবিহীন) ও মাচাবিহীন (কাণ্ডবিশিষ্ট) বৃক্ষ-লতা সম্বলিত বাগানসমূহ, খেজুর গাছ, বিভিন্ন স্বাদের খাদ্য শস্য, যায়তুন ও আনার সৃষ্টি করেছেন- যেগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন। যখন তা ফলবান হয় তখন তোমরা তার ফল খাও এবং ফল সংগ্রহের দিনে তার হাক্ক (অর্থাৎ উশর) প্রদান কর এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরাহ আনআম ৬:১৪১)।

৫. সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, সলাত কায়িম এবং যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরাহ নূর ২৪:৩৭)।

রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীসে যাকাতঃ
১. হযরত হারিসাহ ইবনি ওয়াহব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সা.-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ (যাকাত) প্রদান কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেওয়ার ইচ্চা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ্ বুখারী: ১৪১১, সহীহ্ মুসলিম: ১০১১)।

২. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। (সহীহ্ বুখারী: ১৪০৩)।

৩. হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ্! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহীহ্ বুখারী: ১৪৪২, সহীহ্ মুসলিম: ১০১০)।

৪. হযরত জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায়কারী আসবে, তখন সে যেন তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সহীহ্ মুসলিম: ৯৮৯)।

৫. হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনি ‘উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যেসব জমিতে বৃষ্টি ও ঝরনার পানিতে সেচ হয়, অথবা যেসব জমিতে উপরিভাগ থেকে সেচ করা হয়, সেসব জমির ফসলে যাকাতের পরিমাণ এক দশমাংশ। আর যেসব জমিতে কূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, সেসব জমির ফসলের বিশ ভাগের একাংশ যাকাত (উশর) দিতে হবে। (সহীহ বুখারী: ১৪৮৩)।

তথ্যসূত্র: ‘কুরআন মাজীদের আদেশ ও নিষেধ’ বই থেকে সংকলিত।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, যাকাতের বিধান প্রতিষ্ঠিত করা বিশ্বমানবতার জন্য কল্যাণকর এবং এ ব্যবস্থা সমাজে চালু/ প্রতিষ্ঠিত হলে জীবনে সফলতা আসবেই।

লেখকঃ জিএম সরওয়ার বিশ্বাস, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। 

আরও দেখুন:
সফল জীবনের কল্পকথাঃ যাকাতভিত্তিক অথনীতি-১
সফল জীবনের কল্পকথাঃ যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি-৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button