ইসলামী ব্যাংকিং

মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ৯ম পর্ব

মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ মোহাইমিন প্রশ্ন তুলেছেন-কিন্তু কেন অন্য সকল ব্যবসায়ীর মতো ইসলামি ব্যাংকগুলোর লাভের হার তারতম্য করে না? কিংবা বিদ্যুৎ ও বন্দর তৈরির মেগা প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে কেন সে গ্রাহকদের ২০%-৩০% লাভ দিতে পারে না? তার কারণ হলো, ইসলামি ব্যাংক কোনো ব্যবসাই নয়। ইসলামি ব্যাংক যদি ব্যবসা না হয়, আবার কর্জে হাসানাও না হয়, তাহলে এইটা কী? একদম সোজাসাপ্টা বাংলায় এইটা ‘ব্যাংক’ ছাড়া অন্য কিছুই না?

একজন মানুষকে জুব্বা পরিয়ে দিলেই যেমন সে মুসলিম হয়ে যায় না, কিংবা একটি দেশের সাংস্কৃতিক পোশাক পরিয়ে দিলেই যেমন একজন ব্যক্তি সেই দেশের নাগরিক হয়ে যায় না। তেমনি, শরিয়া হুকুম মতে ব্যবসায়ীর কেনাবেচার সিস্টেম অনুসরণ করলে একটি ব্যাংকও কোনদিন ব্যবসা হয়ে যায় না। এবার চিন্তা করে দেখুন, সুদি ব্যাংক যদি ‘সামান্য’ টেকনিক্যাল হেরফের করেই মুসলিমদের কোটি টাকা ব্যাংকে এনে ফেলতে পারে, তাহলে তারা কেন এই ‘ইসলামি ভাব’ ধরবে না? তাইতো আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের হর্তাকর্তারা এই কাজে এগিয়ে আসেন আর মুসলিম উম্মাহর আর কোনো উপকার করতে পারুক বা না পারুক, ওআইসি মহীরুহের মতো বড় ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) গঠন করে ফেলে। এটি তার বই’র ৩৩-৩৪ পৃষ্ঠা থেকে উদ্ধৃত করলাম।

সুদ বিষয়ে গত পর্বে বিস্তারিত বলেছি, আজ ব্যবসার রীতি পদ্ধতির বিষয়ে বলবো। আল্লাহ তাআলা সূরা আল-বাকারাহর ২৭৫ আয়াতে বলেছেন, “وَاَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَحَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ আল্লাহ বাইয়াকে হালাল করেছেন, আর রিবাকে করেছেন হারাম।” এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ এক শাশ্বত ও চিরন্তন প্রাকৃতিক সত্যের ঘোষণা দিয়েছেন। বাই হচ্ছে মানব জাতির জন্য অত্যাবশ্যকীয় ও কল্যাণকর; তাই প্রকৃতিগত ভাবেই তা হালাল। আর রিবা হচ্ছে মানুষের জন্য অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর; এজন্যই প্রকৃতিগত ভাবেই তা হারাম।

বাই ও রিবার পার্থক্য আলোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে আশা করা যায়। ‘বাইয়া’ এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়। মিলটন কাওয়ান বাই অর্থ লিখেছেন, “বিক্রয় করা, ক্রয়-বিক্রয় করা, ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি করা, বিক্রয়ের জন্য পেশ করা, বিক্রয়ের শর্তে সম্মত হওয়া, ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করা।” (Cowan, John Milton (ed): A Dictionary of Modern Written Arabic, Third Printing, Macdonald & Evans Ltd., London) “বাই এমন একটি শব্দ যার দু’টি বিপরীতমুখী অর্থ রয়েছে, অর্থাৎ যথাক্রমে ক্রয় এবং বিক্রয়, বিক্রয় এবং ক্রয়।” “বাই (পণ্যদ্রব্য) ক্রয় করা; বিক্রয় করা।” সুতরাং ‘বাইয়া’ অর্থ হচ্ছে ক্রয়-বিক্রয়। ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমেই করা হয় ব্যবসা, আর ব্যবসা থেকে আসে লাভ বা মুনাফা। এজন্য কোন কোন অনুবাদক বাই-এর অর্থ করেছেন ব্যবসা; কেউ কেউ আবার এর তরজমা করেছেন মুনাফা। প্রকৃতপক্ষে ক্রয় বিক্রয় যত ব্যাপক ব্যবসা ও মুনাফা তত ব্যাপক নয়। সুতরাং বাইকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করাই উত্তম।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ফকীহগণ বিভিন্ন ভাষায় ক্রয়-বিক্রয়ের সংজ্ঞা দিয়েছেন। তার কয়েকটি সংজ্ঞা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
ক) বাইয়া হচ্ছে প্রস্তাব (ঈজাব) ও সম্মতি (কবুল) এর মাধ্যমে মালিকানা স্বত্ব হস্তান্তর/ বিনিময় করা। ঈজাব ও কবুল উভয়টি অতীত কালের শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হলে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হয়।
খ) বাইয়া হচ্ছে, “কোন কিছুর সমতুল্য বিনিময়/ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক এর মালিকানা গ্রহণ করা।
গ) “বাইয়া শব্দটি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এক পণ্যের সাথে অপর পণ্যের বিনিময়কে বুঝায় অথবা বাই হচ্ছে সমমূল্যের বিনিময়ে কোন পণ্যের মালিকানা হস্তান্তর করা।”
ঘ) ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে সমান সমান মূল্যের পারস্পরিক বিনিময়।
(সুত্রঃ ইসলামী ব্যাংকিং-অধ্যাপক শরীফ হুসাইন)

আরও দেখুন:
✓ মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ৮ম পর্ব

ক্রয়-বিক্রয়ের মৌলিক শর্ত হচ্ছে ২টি:
ক. মূল্যের সমতা: ক্রয়-বিক্রয়ে দু’টি পক্ষ-বিক্রেতা ও ক্রেতা। বিক্রেতার কাছে কোন পণ্য, সেবা (Service) অথবা মুদ্রা থাকে। অনুরূপভাবে ক্রেতার নিকটও থাকে কোন পণ্য, সেবা বা মুদ্রা। উভয় পক্ষের পণ্য, সেবা বা মুদ্রা একই জাতের হতে পারে অথবা সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন জাতেরও হতে পারে। পণ্য, সেবা বা মুদ্রা যাই থাকুক এবং এগুলো সমজাতের হোক বা অসমজাতের হোক, পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করতে হলে প্রথমেই উভয় পক্ষের পণ্য, সেবা বা মুদ্রার মূল্য সমান সমান করে নিতে হবে। একটি হতে হবে অপরটির কাউন্টার ভ্যালু। ইনসাফ বা সুবিচারের এটাই দাবী। কাউন্টার ভ্যালু বলতে মূল্যের সমতাকেই বুঝায়।

ড. উমর চাপরা বলেন, “সুবিচার কেবল তখনই সম্ভব হয় যখন দাঁড়ির উভয় পাল্লায় একই সমান (মূল্যের) মাল-সম্পদ তোলা হয়।” তিনি বলেছেন, “সকল লেনদেনে মূল্য এবং এর প্রতিমূল্য ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।

খ. পারস্পরিক বিনিময় (Reciprocal Exchange): ক্রয়-বিক্রয়ে দেওয়া ও নেওয়া উভয়টাই হয় পারস্পরিক (Reciprocal)। বিক্রেতা জিনিস দেয়, মূল্য নেয়; আর ক্রেতা মূল্য দেয়, জিনিস নেয়। আধুনিক পরিভাষায় একেই বলা হয় Reciprocal Exchange; কেউ কেউ আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে “Commutative Contract; অথবা Synallagmatic Contract’|

ড. নাজাতুল্লাহ সিদ্দিকী Equivalence ও Reciprocity কে ক্রয়-বিক্রয়ে সুবিচারের যমজ মানদণ্ড (Twin Norms of Justice) আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, “(মূল্যের) সমতা এবং পারস্পরিক বিনিময়ের ওপরই সুবিচার (Justice) নির্ভর করে। নগদ-বাকি সকল ক্রয়-বিক্রয়ে এ দুটি মৌলিক শর্ত অবশ্যই প্রযোজ্য।

রাসূলুল্লাহ (সা:) ক্রয়-বিক্রয়ে দুটি মূল্য সমান সমান বা কাউন্টার ভ্যালু নির্ধারণ এবং তা পরস্পর বিনিময় করার বিধান নির্দেশ করেছেন। স্কলারগণ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সামনে নিয়ে বিভিন্নভাবে ক্রয়-বিক্রয়ের শ্রেণী-বিন্যাস করেছেন। তবে স্বয়ং আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা:) ক্রয়-বিক্রয়ের শ্রেণী-বিন্যাস করার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন আমাদের আলোচনার জন্য সেটিই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক এবং ক্রয়-বিক্রয় ও রিবা বুঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূরা বাকারার ২৮২ আয়াতে আল্লাহ তাআলা যাবতীয় ক্রয়-বিক্রয়কে বাকি ও নগদ এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন।
(সুত্রঃ ড. এম., উমর চাপরা, The Nature of Riba, Journal of Islamic Banking and Finance)

এদিকে উবাদা ইবনে সামিত থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ক্রয়-বিক্রয়কে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন: সমজাতের পণ্য, মুদ্রা ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় যেমন, সোনার বদলে সোনা ইত্যাদি এবং ভিন্ন ভিন্ন জাতের পণ্য, মুদ্রা ও সেবা ক্রয়-বিক্রয় যেমন, সোনার বিনিময়ে রূপা, গমের বিনিময়ে খেজুর ইত্যাদি। সুতরাং আল-কুরআন ও হাদীসের মর্ম অনুসারে সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয়কে নিম্নোল্লেখিত চার প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়:

১. সমজাতের পণ্য, সেবা বা মুদ্রা নগদ ক্রয়-বিক্রয়: যেমন, সোনার বদলে সোনা, টাকার বদলে টাকা, খেজুরের বদলে খেজুর ইত্যাদি নগদ তাৎক্ষণিক বিনিময় করা।
২. সমজাতের পণ্য, সেবা ও মুদ্রা বাকি ক্রয়-বিক্রয়: যেমন, আজ সোনা দিয়ে এক মাস পর সোনা নেওয়া, আজ টাকা দিয়ে এক মাস পর টাকা নেওয়া, আজ খেজুর দিয়ে এক মাস পর খেজুর নেওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে আসলে ঋণ বা ধার; কারণ, ঋণ হচ্ছে কোন ফান্‌জিবল পণ্য একই জাতের পণ্যের বিনিময়ে বাকিতে বিক্রয় করা।
৩. অসমজাতের পণ্য, সেবা ও মুদ্রা নগদ ক্রয়-বিক্রয়: যেমন, সোনার বদলে রূপা, টাকার বদলে ডলার অথবা খেজুরের বদলে গম ইত্যাদি নগদ তাৎক্ষণিক বিনিময় করা ।
৪. অসমজাতের পণ্য, সেবা ও মুদ্রা বাকি ক্রয়-বিক্রয়: যেমন, আজ সোনা দিয়ে এক মাস পর রূপা নেওয়া, আজ টাকা দিয়ে এক মাস পর টাকা নেওয়া, আজ টাকা দিয়ে এক মাস পর ডলার নেওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের বাকি ক্রয়-বিক্রয়ে যে কাউন্টার ভ্যালু প্রদান স্থগিত রাখা হয়, তাকেই বলা হয় দাইন বা দেনা।

ক্রয়-বিক্রয়ে প্রথমে ভ্যালু ও এর কাউন্টার ভ্যালু নির্ধারণ করতে হয়; অতঃপর কাউন্টার ভ্যালু দু’টি লেনদেন বা পারস্পরিক বিনিময় করতে হয়। কাউন্টার ভ্যালু নির্ধারণের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সমজাতের পণ্য, অর্থ বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ে ২টি এবং অসমজাতের বস্তু ক্রয়-বিক্রয়ে ১টি বিধান নির্দেশ করেছেন; আর বিনিময়ের জন্য উভয় প্রকার ক্রয়-বিক্রয়ে একই বিধান দিয়েছেন।

সমজাতের বস্তু ক্রয়-বিক্রয়ে কাউন্টার ভ্যালু নির্ধারণের বিধান ২টি হচ্ছে:
১. মিসলান বিমিসলিন (Like for Like) বা আইনান বিআইনিন (এটা যেমন সেটা তেমন) উভয় বস্তুর মানগত সমতা (Qualitative Equality) বিধান করা;
২. সাওয়ায়ান বিসাওয়ায়িন (Equal for Equal): উভয় বস্তুর পরিমাণ সমান (Quantitative Equality) করা।
বিনিময়ের বিধানটি হচ্ছে: ইয়াদান বিইয়াদিন (From Hand to Hand) বা পারস্পরিক বিনিময় (Reciprocal Exchange) করা।

ভিন্ন ভিন্ন জাতের বস্তু ক্রয়-বিক্রয়ে কাউন্টার ভ্যালু নির্ধারণের বিধানটি হচ্ছে: পারস্পরিক সম্মতি বা “ফাবিয়ূ কাইফা শি’তুম”- যে কোন মূল্য বা পারস্পরিক সম্মতিতে (Mutual Consent) নির্ধারিত যে কোন মূল্যে বিক্রি করা বৈধ। আর বিনিময়ের বিধানটি হচ্ছে: ইয়াদান বিইয়াদিন (From Hand to Hand) বা পারস্পরিক বিনিময় করা।

প্রায় সকল মাযহাবেই বাকি ক্রয়-বিক্রয়কে অনুমোদন করা হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা ও মালিকী ফক্বীহদের একটা অংশ স্পেসিফিকেশন ছাড়া হলেও বাকি ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ বলেছেন। মালিকী মাযহাবের অধিকাংশ ফক্বীহ অবশ্য মালের স্পেসিফিকেশন করা হলে বাকি ক্রয়-বিক্রয় বৈধ বলে রায় দিয়েছেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম ইবনে হাযম এর সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। আল-কাসানি বলেছেন, নিষিদ্ধ জিনিস হচ্ছে মূল্যের ওপর বাড়তি যা আল-ফদল হিসেবে পরিচিত।

ঋণের ক্ষেত্রে ঋণদাতা ঋণ প্রদানকালেই চুক্তির মাধ্যমে আসলের ওপর অতিরিক্ত (ফদল) ধার্য করার অধিকার সৃষ্টি করে। কিন্তু স্বাভাবিক ক্রয়-বিক্রয়ে কোন পক্ষের বস্ত হস্তান্তর স্থগিত (deferred) করা হলে এতে অতিরিক্ত (ফদল) থাকে না; সুতরাং সুনির্দিষ্ট (specification / standard) মান ও পরিমাণের কোন পণ্য বাকিতে বিক্রয় করলে এতে কোন রিবা হয় না। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ফক্বীহগণ একমত যে, সমস্যা ক্রয়-বিক্রয়ে নয়; বরং সমস্যার প্রকৃত কারণ হচ্ছে আসল পরিমাণের ওপর অতিরিক্তের (ফদল) উপস্থিতি। এ কারণে উমর বিন আবদুল আযীয বলেছেন, সুনির্দিষ্ট মানের (standardized) কোন পণ্য একই জাতের পণ্যের বিনিময়ে বাকিতে বিক্রয় করা হলে এতে সুদ হয় না। আল-কুরআন সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয়কে অনুমোদন করেছে। আল-কুরআনের এই সাধারণ বিধান থেকেই উক্ত বিধান বের করা হয়েছে। ইবনুল কায়্যিম এ পর্যন্ত বলেছেন যে, “আইনের ব্যতিক্রম হিসেবে নয়, বরং নীতিগত বিধান হিসেবেই বাকি ক্রয়-বিক্রয়কে অনুমোদন করা হয়েছে।

ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক সম্মতিতে মূল্য নির্ধারণ করার জন্য শরীয়তে আরও কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে যা পরিপালন না করলে পারস্পরিক সম্মতিতে নির্ধারিত মূল্য বৈধ হয় না। শর্তগুলো হচ্ছে:
১. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক ও বুদ্ধিমান হতে হবে (Age of puberty, sound mind and intelligence) যাতে তারা চুক্তির ফলাফল ও পরিণতি উপলব্ধি করতে পারে।
২. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই পূর্ণ স্বাধীন হতে হবে যাতে তারা স্বেচ্ছায় প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে পারে; অর্থাৎ এমন কোন চাপ, বাধ্যবাধকতা, জবরদস্তি থাকবে না যাতে ক্রেতা-বিক্রেতার কেউ বা উভয়েই প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করতে বাধ্য হয়।
৩. কোন প্রকার মিথ্যা, ধোকা-প্রতারণা, জালিয়াতি বা চালাকি না থাকা। এবং
৪. কোন প্রকার গারার বা অস্পষ্টতা, দ্ব্যর্থবোধকতা ও অজ্ঞতা না থাকা।

এছাড়া বাজারে চাহিদা ও যোগান যাতে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকে, সকল প্রকার বিকৃতি ও কলুষতামুক্ত হয় এবং মানুষ কেবল স্বাভাবিক চাহিদা-যোগানের দ্বারা নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে সেজন্য ইসলাম আরও কতিপয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেগুলো হচ্ছে: ১. সুদ নিষিদ্ধ করা; ২. জুয়া নিষিদ্ধ করা; ৩. সকল প্রকার অন্যায় ভক্ষণ নিষিদ্ধ করা; ৪. মজুদদারী, চোরাকারবারী নিষিদ্ধ করা; এবং ৫. বাই-আল মুততার বা জরুরী প্রয়োজনের সুযোগে চড়া দাম হাঁকা ইত্যাদি।
[সুত্রঃ Dr. Nazat U. Siddiquee RIBA, Bank interest & the Rationale of its Prohibition (IDB)] ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ লাভের বিষয় আগামী পর্বে ইনশাআল্লাহ।

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button