ইসলামী ব্যাংকিং

মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ৫ম পর্ব

মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ আরো কয়েক পর্বে ইসলামী ব্যাংকিং আলোচনা করার প্রত্যয় আমার। এটি মোহাইমিনের বই’র সমালোচনা উদ্দেশ্য নয় বরং প্রায় লক্ষের কাছাকাছি নবীন ইসলামী ব্যাংকারদের কাছে ইসলামী ব্যাংকের মোড ম্যাকানিজম এবং এর আভ্যন্তরীন সৌন্দর্য তুলে ধরা। অনেকেই আমাকে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো মোহাইমিনের প্রচ্ছদটি অশালীন, তা বর্জন করা। তদুপরি সমালোচনার বদলে তা উল্টা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণে পরোক্ষ সহযোগীতা করছি কিনা? ইত্যাদি সিরিয়াসই বটে।

যদিও আমার ব্যাখ্যা ভিন্ন। প্রথমতঃ আপনি কারো বই সমালোচনা লিখতে গেলে তার বই’র মূল প্রচ্ছদই ব্যবহার করা একটি শিষ্টাচার। প্রচ্ছদটি আমি দেখলাম ধ্রুব এষ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান পেশাদার প্রচ্ছদশিল্পী। তাকে লেখক যেভাবে চেয়েছেন তিনি সেভাবেই প্রচ্ছদ করেছেন। তবে প্রচ্ছদ পূরো বই’র বিষয়বস্তর মুখচ্ছবি, তাই অনেক সময় কভার ডিজাইনে সে ছাপ থাকে। আর কভার লেখকের রুচিবোধেরও পরিচায়ক। কিন্ত কনটেন্টের মতোই কভারটিও যাচ্ছে তাই।

আমি কোন লেখকের ব্যক্তিগত রুচিবোধের অথবা মনের নিয়তের উপর হামলার বিপক্ষে। এটা অন্তর্যামীর কাজ, তিনিই উত্তম বলতে পারবেন কম্যুনিষ্ট পসন্দ লাল রংয়ের সাথে কা’বার কালোর সংমিশ্রনে লেখক কি বুঝাতে চেয়েছেন? এমনিতে “জিপার খোলা” বাংলা সাহিত্য কেউ কখনো তাদের কোন বই’র কভার করেছিলেন কিনা, জানা নেই! হতে পারে মানুষের মনে কোন নেতিবাচক কিছু ভেসে উঠে বলে। অভিধানে “জিপার খোলা” নিয়ে যা পেয়েছি তার তাৎপর্য এমন-

“জিপার হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস যা কাপড় এবং ব্যাগের দুই পাশের অংশগুলি খুলতে এবং বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়। জিপারে দুই সারি ধাতব বা প্লাস্টিকের দাঁত রয়েছে এবং ছোট একটি হুক রয়েছে যা টানলে কাপড় বা ব্যাগের দুই প্রান্ত পৃথক বা আলাদা করা যায়।”

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

কেউ জিপারের অর্থ করেছেন-জিপার পোষাক তৈরির ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জিপার মূলত পোশাকের বিশেষ অংশকে খোলা ও বন্ধ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। গার্মেন্টস এর মধ্যে কিছু কিছু পোশাক রয়েছে যেমন, প্যান্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট, স্কার্ট, মোবাইল প্যান্ট ইত্যাদিতে জিপার অবশ্যই ব্যবহার করতে হয়।

আরও দেখুন:
✓ মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ৪র্থ পর্ব

এখানে একটি পেশাগত (Banking) পুস্তকের, হোক তা হ্যাংলামো সমালোচনা, জিপার খুলে কিছু বস্ত তিনি অনাবৃত করতে চেয়েছেন। আপাততঃ এটুকু অর্থ নিলে আর পাঠকদের বুঝতে বাকী থাকেনা। এর উপর আবার তা এডজেকটিভ যুক্ত হয়েছে-শুভংকরের ফাঁকি শিরোনামে। তার মানে লেখক যা কিছু তার ব্যাগ থেকে জিপার খুলে বের করবেন, তা ইসলামী হলেও আসলে আবর্জনা বৈ কিছু নয়। শুভংকরের ফাঁকির সেই গণিত শিখানোর ব্যাখ্যা আজ আর নাই করলাম।

আমার চতুর্থ পর্বের পর একটি পরামর্শ ছিলো, পাঠকের সামনে আর লাল কালো বর্ণ আর জিপারের প্রচ্ছদটি না এনে যেনো বরং আলোচনা করা হয়। আগেই বলেছি, এটি আমি চাইনি। তবুও আমার লেখার সবচেয়ে বড় সমঝদার পাঠকগণের আর্জি সম্মানের সাথে বিবেচনা করাও শিষ্টাচার এবং তার জন্য লেখকের দায়বদ্ধতাও আছে। এ শিষ্টাচার পরিপালন একান্ত কঠিন কিছু নয়। তদুপরি সমালোচনার চেয়ে অনেক বড় উদ্দেশ্য নিয়ে এই লেখার অবতারনা। আমার টার্গেট মোহাইমিন নয়। ইসলামী ব্যাংক চল্লিশ বছরের বাস্তব প্রতিষ্ঠান। আর এর ধারনাকাল ধরলে আরো চল্লিশ বছর যোগ হবে। এখন পর্যন্ত এগারোটি পূর্ণ শরিয়াভিত্তিক ও কয়েকটি পার্সিয়াল সহ ব্যাংকগুলোর জনশক্তিই আমাদের আগামীদিনের বড় সম্পদ।

সন্দেহ নেই, এখন ইসলামী ব্যাংকিংসহ ইসলামী অর্থনীতি ও ফিন্যান্স জানার জন্য বহু লিটারেচার বাজারে রয়েছে। আছে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে পাঠদান ব্যবস্থাও। আমাদের সময়ে আন্তর্জাতিক মানে কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা অর্জনও ছিলো স্বপ্নের অতীত। আর এখন মাশাআল্লাহ! এন্তার সিডিসিএস, একামস এবং আরো কতো। তার মানে এখনকার ব্যাংকারগণ অনেক বেশী পড়ুয়া, অন্ততঃ ডিগ্রী তুলতে আগ্রহী। আমি একজন নগন্য অগ্রজ এইসব প্রাণবন্ত উজ্জ্বল ও স্বমহিমায় ভাস্বর অনুজদের জন্য কিছু রেখে যেতে পারলেই শান্তি পাবো। আমাকে আল্লাহ তাআলা যেটুকু ইলম দিয়েছেন, পার্থিব ও দ্বীনি, তার ব্যবহার দুনিয়াতে না করে যদি ঔজ্জ্বল্য ও চাকচিক্য বিনষ্ট হবার ভয়ে সিন্দুকে তালাবদ্ধ রাখি তবুও তা ক্ষয়ে যাবে। সুতরাং, জেনে রাখো হে কন্জুস আত্মা আমার! আখেরাত ইলম ও আমলের জায়গা নয়। সেখানে শুধুই পুরস্কার আর পুরস্কার।

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button