বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার

ঋণ শ্রেণীকরণ এবং প্রভিশনিং সংক্রান্ত সার্কুলার

খেলাপি ঋণ নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২১ এপ্রিল, রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ঋণ শ্রেণীকরণ এবং প্রভিশনিং এর একটি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক সমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইংরেজিতে এই সার্কুলারটি জারি করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩০ জুন থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকিং খাতে এখন তীব্র তারল্য সংকট বিরাজ করছে। খেলাপি ঋণকেই এর প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্তমানে কোনও ঋণের কিস্তি তিন মাস অনাদায়ী হলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড, ছয় মাস অনাদায়ী হলে সন্দেহজনক এবং ৯ মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে মন্দমানের খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকরণ করা হয়। নতুন নীতিমালায় খেলাপি ঋণ হিসাবে গণ্য এ তিনটি ক্ষেত্রেই সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

এই সার্কুলার অনুযায়ী, সব ধরনের চলতি ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, ফিক্সড টার্ম লোন অথবা যে কোনও ঋণের কিস্তি তিন মাসের বেশি, কিন্তু ৯ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ হিসেবে গণ্য করা হবে। আগে তিন মাসের বেশি অনাদায়ী থাকলে সাব-স্ট্যান্ডার্ড গণনা করা হতো।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

৯ মাসের বেশি কিন্তু ১২ মাসের কম অনাদায়ী থাকলে তা ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ হবে। আগে ৬ মাসের বেশি ৯ মাসের কম অনাদায়ী ঋণকে ডাউটফুল লোন বা সন্দেহজনক ঋণ বলা হতো।

আর ১২ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ ব্যাড ডেট বা মন্দ ঋণ হবে। আগে ৯ মাসের বেশি অনাদায়ী ঋণ মন্দ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হতো। তবে সার্কুলারে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের একটা অংশ খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা হতো না।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনও লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে একদিকে ঋণ খেলাপিরা বাড়তি সুবিধা পাবে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলো প্রভিশন রাখতে বাড়তি সময় পাবে।

আপনাদের সুবিধার জন্য সম্পূর্ণ সার্কুলারটি বাংলায় তুলে ধরা হলো-

প্রিয় মহোদয়,

ঋণ শ্রেণীকরণ এবং প্রভিশনিং

শিরোনাম বিষয়ক বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৪ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২, বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৯ তারিখ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২ ও বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৮ তারিখ ০২ আগস্ট, ২০১৫ দেখুন।

২. বিদ্যমান ব্যবসা পরিবেশ সহজতর করার জন্য এবং অর্থনৈতিক চক্রের সাথে একত্রীকরণের উদ্দেশ্যে, নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী মানদণ্ডের অধীনে ঋণ শ্রেণীকরণে অনুসরণ করতে হবে।

২.১. কোনও ক্রমাগত ঋণ যদি পরিশোধের জন্য নির্ধারিত মেয়াদের শেষ তারিখের মধ্যে পূনঃপরিশোধিত/পুনর্নবীকরণ না করে বা ব্যাংকের চাহিদা অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে ডিউ/ওভারডিউ হিসাবে বিবেচিত হবে। কোনও ডিমান্ড ঋণ যদি পরিশোধের জন্য নির্ধারিত মেয়াদের শেষ তারিখের মধ্যে পূনঃপরিশোধিত না করে বা ব্যাংকের চাহিদা অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দিন থেকে ডিউ/ওভারডিউ হিসাবে বিবেচিত হবে। যদি কোন স্থায়ী টার্ম লোনের কোনও কিস্তি বা কিস্তির অংশ ফেরত দেওয়া হয় না তবে নির্ধারিত মেয়াদপূর্তির তারিখের ছয় মাস পরে ডিউ/ওভারডিউ হিসাবে বিবেচিত হবে।

২.২. একটি ক্রমাগত ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, স্থায়ী টার্ম ঋণ বা স্থায়ী টার্ম ঋণের কোনও কিস্তি/কিস্তির অংশ যা ০৩ (তিন) মাস বা তারও বেশি সময়কালের জন্য ডিউ/ওভারডিউ থাকে কিন্তু ০৯ (নয়) মাস এর চেয়ে কম, তাহলে সম্পূর্ণ ঋণটিকে “সাব-স্ট্যান্ডার্ড (SS)” হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

২.৩. একটি ক্রমাগত ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, স্থায়ী টার্ম ঋণ বা স্থায়ী টার্ম ঋণের কোনও কিস্তি/কিস্তির অংশ যা ০৯ (নয়) মাস বা তারও বেশি সময়কালের জন্য ডিউ/ওভারডিউ থাকে কিন্তু ১২ (বারো) মাস এর চেয়ে কম, তাহলে সম্পূর্ণ ঋণটিকে “সন্দেহজনক (DF)” হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

২.৪. একটি ক্রমাগত ঋণ, ডিমান্ড ঋণ, স্থায়ী টার্ম ঋণ বা স্থায়ী টার্ম ঋণের কোনও কিস্তি/কিস্তির অংশ যা ১২ (বারো) মাস বা তারও বেশি সময়কালের জন্য ডিউ/ওভারডিউ থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ ঋণটিকে “খারাপ/ক্ষতি (B/L)” হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

২.৫. ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্ট, ১৯৯১ এর ধারা ৫(গগ) অনুসারে ঋণগুলিকে ডিফল্ট ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং ০২ আগস্ট ২০১৫ তারিখের বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৮ প্রদত্ত বিন্যাস অনুযায়ী রিপোর্ট করা উচিত। এই বিষয়ে, “সাব-স্ট্যান্ডার্ড (SS)” ঋণ ডিফল্ট ঋণ হিসাবে রিপোর্ট করা হবে।

৩. ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখের বিআরপিডি সার্কুলার নং-১৪ এর অন্যান্য নির্দেশাবলী এবং এর পরবর্তী পরিবর্তনগুলি অপরিবর্তিত থাকবে। ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখের বিআরপিডি সার্কুলার নং ১৯, এভাবে এই সার্কুলারটির দ্বারা রহিত করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ৩০ জুন থেকে এই সার্কুলারটি কার্যকর হবে।

আপনাদের বিশ্বস্ত

(এ.কে.এম আমজাদ হুসাইন)
মহাব্যবস্থাপক
ফোন-৯৫৩০২৫২

• সার্কুলারটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে
• এ সংক্রান্ত বিআরপিডি সার্কুলার ১৪, তারিখঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২ দেখতে ক্লিক করুন এখানে
• এ সংক্রান্ত বিআরপিডি সার্কুলার ১৯, তারিখঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০১২ দেখতে ক্লিক করুন এখানে
• এ সংক্রান্ত বিআরপিডি সার্কুলার ০৮, তারিখঃ ০২ আগস্ট, ২০১৫ দেখতে ক্লিক করুন এখানে

সূত্রঃ ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক
বিআরপিডি সার্কুলার নং-০৩, তারিখঃ ২১ এপ্রিল, ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button