ইসলামী ব্যাংকিং

ইসলামী ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং

একজন বক্তা তার পীরের মুরিদানদের সুদ থেকে বাঁচার উপায় বাতলে দিতে গিয়ে বললেনঃ “সুদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্ট খুলবেন। এ ধরণের একাউন্ট থেকে বছরে কমিশন হিসেবে একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট কেটে নেওয়া হয়। আর সেভিংস একাউন্ট খুললে ফরমে লিখে দিবেন “নো ইন্টেস্ট” (শুদ্ধরূপ ইন্টারেস্ট)।

বক্তা আরো বললেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হলো ন্যাশনাল ব্যাংক আরো অন্যান্য ব্যাংক যেমন ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক হলো সিডিউল ব্যাংক। এই সমস্ত ব্যাংক তাদের পুঁজির একটা বড় অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখে। ওখান থেকে যে সুদ পায় তা দিয়ে ব্যাংকগুলো চলে। আমরা আমাদের পীর ভাইদেরকে সুদ থেকে বাঁচাতে চাই। আপনারা বাঁচতে রাজি আছেন তো”?

ইসলামী জীবন ব্যবস্থার রয়েছে একটি পরিপূর্ণ অর্থনীতি যা ‘ইসলামী অর্থনীতি’ নামে পরিচিত। আত্নভোলা মুসলমান জাতি অজ্ঞতার দরুণ এই বিষয়ে অন্ধকারে থাকলেও সমাজতন্ত্রী ও পুঁজিবাদীরা ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে পুরো ওয়াকিবহাল রয়েছে এবং তারা আরো ওয়াকিবহাল রয়েছে যে, ইসলামী অর্থনীতি তাদের মানব রচিত অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। ইসলামী ব্যাংকিং, এটা তো শরিয়তের একটি মৌলিক বিধান এবং ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। এটা অস্বীকারকারী কাফের এবং তরককারী ফাসিক সাব্যস্ত হবে নিঃসন্দেহ। কোনও কোনও ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে তাই বলে তো সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ছুড়ে ফেলা যাবে না।

মহাগ্রন্থ আল-কোরআন বলছেঃ هل يستوي الذين يعلمون والذين لا يعلمون
অর্থাৎ যারা জানে আর যারা জানে না তারা সমান নয়।
রাসুল সাঃ বলেছেনঃ كفى بالمرء كذبا أن يحدث بكل ما سمع
অর্থাৎ যা শুনে তা-ই বলে বেড়ায়, মিথ্যাবাদি হওয়ার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।
পবিত্র আল কোরআন আরো বলেছেঃ ان جاءكم فاسق بنبأ فتبينوا
অর্থাৎ অনির্ভরযোগ্য ব্যক্তি তোমাদেরকে কোন তথ্য দিলে তা গ্রহণ করার পূর্বে খুব যাচাইবাছাই করবে।
প্রসিদ্ধ উক্তিঃ لكل فن رجال অর্থাৎ বিষয় ভিন্ন তো ব্যক্তি ভিন্ন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ইলম তথা জ্ঞানের কোনও বিকল্প নেই। যেই বিষয়ে যার সচ্ছ জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে তার বক্তব্য দেওয়ার অধিকার নেই। কোনো বিষয়/ তথ্য শোনার পর পরখ করে তার আসল রূপ নিশ্চিত না হয়ে এখানে সেখানে বলে বেড়ানো মিথ্যাবাদির কাজ। কারো পক্ষে দুনিয়ার সব বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব নয়। অনেক বিষয়ে কম কম জানবে আর কম কম বিষয়ে অনেক বেশি জানবে; এটাই নিখুঁত জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য।

যার যত বিদ্যা বেশি সে ততবেশি স্থির। এ জন্যই বলা হয়, অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী (Empty vessels sound much)। তবে এর ব্যতিক্রম শুধু আমাদের দেশে বিশেষত বক্তাদের মধ্যে। বক্তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জানলেও বলেন আবার না জানলেও বলেন।

এই বক্তা Conventional Banks (প্রচলিত ব্যাংক) এবং Islami Banks এর মধ্যে কোনও পার্থক্য দেখেন না। দেখবেন কিভাবে? বই-পুস্তক পড়ে জানা আর বাপ দাদার মুখ থেকে শুনে জানার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইসলামী রূপ মুসলিম ও অমুসলিম সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত একটি বিষয়। ‘ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক’ নামে একটি বড় মাপের ব্যাংক আছে যার হেড অফিস জেদ্দায় অবস্থিত। সারা দুনিয়ার তাবৎ ইসলামী ব্যাংকগুলোর রয়েছে এই ব্যাংকের সাথে নিবিড় সম্পর্ক। যে সকল দেশে ইসলামী ব্যাংক চালু আছে সে সকল দেশে ইসলামী ব্যাংকিং নীতিমালা অধ্যাদেশ জারি রয়েছে। অতএব গায়ের জোরে, আবেগের ঠ্যালায়, না জেনে ও হিংসার বশবর্তী হয়ে কিছু বললে তা তো ভুল হিসেবে সাব্যস্ত হবেই।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

কারেন্ট একাউন্টে এমনিতেই সুদ দেওয়া হয় না আর সেভিংস একাউন্টে নো ইন্টারেস্ট শর্ত জুড়ে দেওয়া হলে সুদ দেওয়া হয় না। এরূপ করে তো সুদের পাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। আপনি সুদ নেন অথবা না-ই নেন আপনার অর্থ দ্বারা সুদী কারবার করা হবেই। আপনি সুদ না নিলে এ সুদ চলে যাবে ব্যাংকের মালিকদের পকেটে। এতে আপনার ডবল পাপ হবে।
ক) সুদী কারবারে অংশগ্রহণ;
খ) প্রাপ্তসুদ হকদার তথা গরীব কে না দিয়ে ধনীকে দেওয়া। আর যদি সুদ তুলে এনে সওয়াবের আশা বাদে গরীব মিসকীনকে দেন, তাহলে আপনার সিঙ্গেল পাপ হবে। অবৈধ সম্পদ থেকে পবিত্র হওয়ার পন্থা বাতলে দেওয়া সম্পর্কিত হাদীসের উপর আমল করার জন্য।

হাদীসটির ভাষ্য: أن الله طيب لا يقبل إلا طيبا অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তায়ালা পবিত্র। তিনি শুধুই পবিত্র জিনিস কবুল করেন। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় المال المستفاد من طريق الحرام থেকে পবিত্র হওয়ার বিধান বলা হয়েছে। হারাম পন্থায় উপার্জিত সম্পদ গরীব মিসকীনকে দিতে হবে কোনও সওয়াবের আশা ছাড়াই। তাই ব্যাংক থেকে প্রাপ্তসুদ গ্রহণ করতে হবে তবে নিজে ভোগ করা যাবে না বরং গরীব মিসকীনকে দিতে হবে।

বানিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের পুঁজির একটা অংশ দুইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। সাধারণ ব্যাংকগুলোর জন্য টোটাল পুঁজির ১৮.৫০% যা নিম্নরূপে বিন্যস্তঃ
CRR (Cash Reserve Ratio তথা নগদ অর্থ) ১৩% + SLR (Statutory Liquidity Ratio তথা শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড) ৫.৫০% = ১৮.৫০%। সাধারণ ব্যাংকগুলো এরূপ গচ্ছিত অর্থের উপর ৪% হারে সুদ পায়। ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য টোটাল পুঁজির ১১% যা নিম্নরূপে বিন্যস্ত:
CRR = ৫.৫০% + SLR ৫.৫০ = ১১%।

ইসলামী ব্যাংকগুলো যেহেতু সুদী লেনদেন করে না সেহেতু এই গচ্ছিত অর্থের উপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনও লাভ অথবা সুদ কোনটাই পায় না। অথচ বক্তা অনর্গল বলে গেলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো এই রূপ গচ্ছিত অর্থের উপর সুদ পায় এবং তা দিয়ে সারা বছর চলে। মূর্খতার একটা সীমা থাকা উচিত।

ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি স্বতন্ত্র ইসলামী ব্যাংকিং সেল রয়েছে। এর অধীনে ইসলামী ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে। এই সেল ইসলামী ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। নুন থেকে চুন খসলেই রক্ষা নেই। এছাড়া প্রতিটি ইসলামী ব্যাংকের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ইসলামী শরিয়াহ বোর্ড। এই বোর্ডে দেশ সেরা অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, প্রথিতযশা আলেম ও আইনজ্ঞরা রয়েছেন। এরা প্রতিনিয়ত ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং এদের তত্ত্বাবধায়নে শরীয়া অডিট সম্পন্ন হয়ে থাকে। এত শত আয়োজনের অধীনে ইসলামী ব্যাংক তার কার্যক্রম পরিচালনা করার পরেও বক্তা ইসলামী ব্যাংক ও সাধারণ ব্যাংকগুলোকে একই পাল্লায় মাপলেন। এর দ্বারা তিনি মূলত জাকাতভিত্তিক ইসলামী অর্থব্যবস্থা অস্বীকার করলেন।

ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা পদ্ধতি
ইসলামী ব্যাংক পরিচালনা দেখতে অন্যান্য ব্যাংকের মত মনে হলেও উভয় ধরণের ব্যাংক ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে আকাশ পাতাল পার্থক্য। ইসলামী ব্যাংক মূলত একটি অতিবড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইসলামী শরিয়া অনুমোদিত পন্থা তথা مرابحة مضاربة مشاركة بيع المؤجل بيع السلم ও হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিলকসহ নানা পন্থায় অর্থ লগ্নী করে থাকে। এক কথায় ইসলামী ব্যাংক অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মত মাল কেনাবেচা করে এবং এখান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ একাউন্ট হোল্ডারদের মাঝে বণ্টন করে। পরিচালনা ব্যয় বাদে নিট প্রফিটের ৪০% সরকার নিয়ে যায়। বাকি ৬০% এর ৭০% একাউন্ট হোল্ডার এবং বাকি ৩০% ব্যাংকের মালিকগণ পেয়ে থাকেন। এ বিষয়গুলো এতটাই ওপেন, যে কেউ চাইলে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারে। অতএব যে কোনও বিষয় আগে জানতে হবে, পরে মানতে হবে এরপরে বলতে হবে।

কার্টেসিঃ সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button