ইসলামী ব্যাংকিং

ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাস পর্ব-১

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আজ আমরা জানব ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাস সম্পর্কে। এটি চার পর্বে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে। আশা করছি সবার কাজে লাগবে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন ১ম পর্বে।

রাসূলুল্লাহ স. এঁর আগমনের মধ্য দিয়ে আরবে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। জাহিলিয়্যাতের নানা প্রথা ও অন্যায় ত্যাগ করে ইসলাম নামক ইনসাফের ছায়াতলে আসে মানুষ।

রাসূলুল্লাহ স. শৈশব হতেই আল-আমীন বলে পরিচিত ছিলেন। মানুষ তাঁর কাছে সম্পদ জমা রাখত, এবং প্রয়োজনে উঠিয়ে নিয়ে যেত। রাসূল স. নিজে বিবাহপূর্ব সময়ে উম্মুল মু’মিনীন খাদিজা রা. এঁর সম্পদ মুদারাবার ভিত্তিতে গ্রহণ করেন এবং তা দিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা করে বিপুল মুনাফাসহ মূলধন ফিরিয়ে দেন।

আরবদের মাঝে মুদারাবা ছাড়াও মূলধনভিত্তিক অংশীদারি ব্যবসা প্রচলিত ছিল। রাসূল স. বাইয়ে সালামের অনুমোদন দেন, যা মূলত পণ্য বাকীতে প্রদানের একটি চুক্তি। তো, এ সবকিছুই ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন কার্যাবলীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর্চা ছিল।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সাহাবীদের যুগে হযরত যুবাইর বিন আওয়াম রা. এঁর কথা উল্লেখযোগ্য। মানুষ তাঁর কাছে অর্থ জমা রাখত। তিনি আমানত হিসেবে সেগুলো না নিয়ে ঋণ হিসেবে নিতেন, ফলে সেগুলো বিনিয়োগের সুযোগ থাকত। আবার প্রয়োজনে জমাকারীরা তা উত্তোলন করতে পারতেন। ইবনে আব্বাস রা. ও দিরহাম জমা গ্রহণ করে কুফায় তা ভাঙানোর স্বীকারপত্র লিখে দিতেন।

ইসলামের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রায় হাজার বছর ধরে ইসলামী অর্থনৈতিক চিন্তা ও কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে মুসলিমদের নেতৃত্ব অব্যাহত ছিল। ইমাম আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ আশ শাইবানী, আবু উবায়দ কাসিম ইবনে সাল্লাম, ইমাম গাযযালী, ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনে খালদুন ও শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ. এঁর অর্থনৈতিক চিন্তা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। [১]

আধুনিককালে ষাটের দশকে মুসলিম দেশগুলোর তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় মুসলিমদের হাতে প্রচুর ধনসম্পদ চলে আসে। তারা তাদের সম্পদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামের আলোকে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবেন। এছাড়া শত শত বছরের উপনিবেশবাদ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিম দেশগুলো ইসলামের আলোকে ভিন্ন অর্থনৈতিক চিন্তা শুরু করে। সত্তরের দশক থেকে মোটামুটি ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে থাকে।

এক নজরে ইসলামী ব্যাংকিং বিকাশের ইতিহাসঃ
ষাটের দশকঃ ১৯৬৩: মিট গামার লোকাল সেভিংস ব্যাংক, মিশর; মুসলিম পিলগ্রিমস সেভিং কর্পোরেশন, মালয়েশিয়া।

সত্তরের দশকঃ ১৯৭১: নাসের সোশাল ব্যাংক, মিশর। ১৯৭৫: ইসলামিক ডেলেভপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), জেদ্দা; দুবাই ইসলামী ব্যাংক, দুবাই। ১৯৭৭: ফয়সাল ইসলামী ব্যাংক, সুদান। ১৯৭৯: বাহরাইন ইসলামী ব্যাংক, বাহরাইন।

আশির দশকঃ ১৯৮২: আল বারাকা। ১৯৮৩: ব্যাংক ইসলাম মালয়েশিয়া; ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ; কাতার ইসলামী ব্যাংক। ১৯৮৪: দারুল মাল ইসলামিক ট্রাস্ট, জেনেভা। ১৯৮৯: এ.এন.জি গ্লোবাল ইসলামিক ফাইন্যান্স, ইউকে।

নব্বইয়ের দশকঃ ১৯৯১: বাহরাইনভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন মানদণ্ড (শরীয়াহ, হিসাব ও নিরীক্ষা) প্রণয়নকারী অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘আওফি’ প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৩: ইসলামিক ব্যাংক অব ব্রুনেই।

সমকালীনঃ ২০০৩: ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনকেন্দ্রিক মানদণ্ড প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বোর্ড (আই.এফ.এস.বি)’, মালয়েশিয়া। ২০০৬: ইসলামী অর্থনীতির আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইনসেইফ’। [২]

এছাড়া ১৯৭৮ সনে পাকিস্তান ও ১৯৭৯ সনে ইরান তাদের সমগ্র ব্যাংকব্যবস্থাকে ইসলামীকরণের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। [৩]

মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি বর্তমানে অনেক অমুসলিম দেশও ইসলামী ব্যাংকিয়ের দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৭-০৮ এর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থিতাবস্থা তাদেরকে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে উদ্বুদ্ধ করছে।

বর্তমানে ইসলামিক ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী মোট বাজার প্রায় ১.৫ ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। [৪]

২০১১ তে তা ছিল মাত্র ১.০৮৬ ট্রিলিয়ন ডলারের। ২০১৪ –র শেষ নাগাদ তা ১.৮ ট্রিলিয়নে পৌঁছুবে বলে আশা করা যায়। বাৎসরিক বৃদ্ধির হার প্রায় ৩০ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭৫টি দেশে হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান ইসলামী অর্থ ব্যবস্থাপনার কাজ করছে। [৫]

২০১০ এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ইউকে, জার্মানি, ফ্রান্স, মাল্টা, জাপান, সিঙ্গাপুর, হংকং ও সাউথ কোরিয়া ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার অনুকূলে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে, বা করেছে। তন্মধ্যে কোনো কোনো দেশ ইতোমধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করেছে। কোনোটি আইন পাশ করেছে। [৬]

চলবে……………………………………………………।

ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফিজ।

তথ্যসূত্রঃ
১. ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, পৃ: ২৫-৪৪
২. ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম – ইন্টারন্যাশনাল শারিয়াহ রিসার্চ অ্যাকাডেমি – পৃ:১১৬
৩. ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, পৃ: ৬৭-৬৮
৪. আইএফএন এশিয়া ফোরাম ২০১৩, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া, অক্টোবর ২০১৩
৫. আইএফএসবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ সেমিনারে ‘গ্লোবাল ইস্যুজ, অপরচ্যুনিটিস এ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক প্রেজেন্টেশন, দাউদ ভিকারী আব্দুল্লাহ, সেপ্টেম্বর ২০১৩
৬. ইসলামিক ফাইন্যান্স এ্যান্ড গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০১০, আই.এফ.এস.বি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button