সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রের ‘সুদ’, না ‘মুনাফা’

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে, বিনিময়ে সরকার যা দেয়, তা কি সুদ না মুনাফা? সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) রাখা টাকার বিপরীতে সরকারি কর্মচারীদেরই বা সরকার যে আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে, সেটারই বা নাম কী? মুনাফা না সুদ?

একবাক্যে এর কোনো সদুত্তর মিলছে না। ফলে বিভ্রান্তি আছেই। সরকারের দিক থেকে ভাবতে গেলে অবশ্য সবই সুদ। কিন্তু সুবিধাভোগীরা একে সুদ বলতে নারাজ। তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন মুনাফা বলতে। এটা ঠিক যে সরকারের হিসাবের খাতায় যা সুদ, বিনিয়োগকারীদের কাছে সেটাই হচ্ছে মুনাফা।

গ্রাহকেরা বলছেন, সুদ-মুনাফার বিভ্রান্তির জন্য সরকারই দায়ী। কারণ, সরকারি দপ্তরগুলো একেক জায়গায় বিষয়টিকে একেকভাবে লিখে রেখেছে। সঞ্চয়পত্র হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আর্থিক পণ্য। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বাংলায় সব জায়গায় বলা আছে মুনাফা, আর ইংরেজিতে বলা আছে ইন্টারেস্ট রেট বা সুদের হার। বাংলায় মুনাফা বললে ইংরেজিতে প্রফিট বা লভ্যাংশ লিখে রাখার কথা। কিন্তু অধিদপ্তর তা করছে না।

এখন পর্যন্ত সঞ্চয় অধিদপ্তর অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) অধীন একটি সংস্থা। আইআরডির কয়েক বছরের প্রজ্ঞাপন ঘেঁটে দেখা যায়, কখনো সুদ, কখনো মুনাফা বলা হচ্ছে। বাংলায় কখনো বলছে সুদের হার, কখনো মুনাফার হার। আর ইংরেজিতে বলা হচ্ছে রেট অব প্রফিট বা মুনাফার হার।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সুদ বলি আর মুনাফাই বলি, সঞ্চয়কারী ও বিনিয়োগকারীদের তা দেওয়া হয় সরকারি কোষাগার থেকে। অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে একেকবার একেক কথা বলেছে। বাজেটে এ বাবদ যে বরাদ্দ রাখা হয়, অর্থ বিভাগ তার নাম দিয়েছে সঞ্চয়পত্রের সুদ।

গত মাসে (নভেম্বর) বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও করোনা মোকাবিলায় সরকারের প্রণোদনা কার্যক্রম শীর্ষক ১১০ পৃষ্ঠার যে বই বের করেছে অর্থ বিভাগ, তাতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো যে মুনাফা দেয় তার চেয়ে বেশি মুনাফা দেওয়ার কারণে সরকারকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। আবার বলা হয়েছে, গ্রাহককে সঞ্চয়পত্রের সুদ ও মূল অর্থ নেওয়ার জন্য এখন আর ইস্যু অফিসে যেতে হবে না। অর্থাৎ একবার সুদ, আরেকবার মুনাফা বলেছে।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

নতুন জটিলতা
হতে পারে সুদ-মুনাফা একধরনের শব্দের মর্যাদার লড়াই। একে পাশ ফিরিয়ে রাখলেও নতুন করে অন্য জটিলতা দেখা দিয়েছে। সেটা পেনশনের টাকা তোলার ফরমের ক্ষেত্রে।

অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের গত ১৭ জুনের একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০-এর ২.০৫ (খ) নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ২.০৬ (ঘ) নম্বর অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী ইএলপিসিতে কর্মচারীর ভবিষ্য তহবিলের মুনাফাসহ জমা অন্তর্ভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবসরগামী কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিলের স্থিতি দেওয়ার বিষয়ে আদেশ জারি করতে বলা হয়েছে।

অথচ আগে জারি করা পেনশন সহজীকরণ আদেশ ২০০৯-এ ভবিষ্য তহবিলের ‘মুনাফা’র বদলে ‘সুদ’ উল্লেখ ছিল—এ কথাও চিঠিতে বলা হয়। বলা হয়, বর্তমানে ভবিষ্য তহবিলের সুদকে মুনাফা হিসেবে প্রতিস্থাপন করার কারণে বিদ্যমান ভবিষ্য তহবিলের হিসাব দেওয়াসংক্রান্ত ফরমে সুদের পরিবর্তে মুনাফা শব্দটি লিপিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।

চিঠিতে আরও বলা হয়, অর্থ বিভাগ ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড রুলস, ১৯৭৯–এ ‘সুদ’ শব্দের পরিবর্তে ‘সুদ অথবা ইনক্রিমেন্ট’ শব্দ প্রতিস্থাপন করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্য তহবিলের হিসাব দেওয়া সম্পর্কিত বিদ্যমান ফরমে ও তহবিলসংক্রান্ত সব ক্ষেত্রে ‘সুদ বা ইনক্রিমেন্ট’–এর পরিবর্তে ‘মুনাফা’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করতে হবে।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম বলেন, ‘সরকারের যে দপ্তর যে নামেই ডাকুক না কেন, আমরা গ্রাহকদের সুদ দিই না, মুনাফা দিই।’

অর্থ বিভাগের এ চিঠি গত ৯ জুলাই পেলেও হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ) তা নিয়ে বসে আছে সাড়ে ৫ মাস ধরে। বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদারকেও ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়। তাঁরাও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। লাখ লাখ বিনিয়োগকারী, পেনশনধারী ও সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে এই খামখেয়ালি বন্ধ করা দরকার বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তবে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘মারপ্যাঁচ করে কেউ মুনাফা বললে বলতেই পারেন। কিন্তু এটা সুদ। সরকার জনগণের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে দরকারি খরচ মেটাচ্ছে, বিনিময়ে বেশি হারে জনগণকে তা ফেরত দিচ্ছে। এমন নয় যে সরকার কোনো ব্যবসায়ে খাঁটিয়ে মুনাফা করে তার একটা অংশ জনগণকে ফেরত দিচ্ছে। ফলে কোনো বিবেচনাতেই তা মুনাফা হতে পারে না’।

সোর্সঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button