ব্যাংকার

ব্যাংকের চাকরিতে নারীদের আগ্রহ বাড়ছে

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকে ১৯৯৮ সালে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করেন ইয়াছমিন বেগম। বর্তমানে তিনি একই ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি যখন যোগদান করেন তখন ব্যাংকটিতে নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। এখন ব্যাংকটিতে নারী কর্মীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে ব্যাংকটিতে ২০ জন মহাব্যবস্থাপকের মধ্যে ছয়জনই নারী। শুধু রূপালী ব্যাংকই নয়, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বিডিবিএল ও বেসিক ব্যাংকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মী কাজ করছেন।

গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ছয় ব্যাংকের কর্মরত নারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৩৯ জন, যা ব্যাংকগুলোতে কর্মরত মোট জনবলের ১৮ শতাংশেরও বেশি। তবে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। এই খাতের ৪১টি ব্যাংকে বর্তমানে কর্মরত নারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৯৫ জন, যা ব্যাংকগুলোতে কর্মরত মোট জনবলের প্রায় সাড়ে ১৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ব্যাংকের চাকরিতে নারী কর্মীদের অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে।

বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট জনবলের প্রায় ১৮ শতাংশের বেশি নারী। সূচনা থেকে উচ্চ—সব পর্যায়েই নারী কর্মীদের সরব উপস্থিতি। এমনকি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছে নারীদের অংশগ্রহণ।

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ইয়াছমিন বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাংকের চাকরিতে বেশ কমফোর্ট ফিল করি। আমরা পুরুষ কর্মীদের মতোই সমান সুযোগ-সুবিধা পাই। আগে যাদের এমডি হিসেবে পেয়েছি এবং বর্তমানে যিনি এমডি হিসেবে আছেন, তাঁরা কখনো কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করেননি। ব্যাংকের কর্মপরিবেশ খুবই ভালো। শুধু আমাদের ব্যাংকই নয়, সার্বিক ব্যাংকিং খাতে কর্মপরিবেশ অনেক ভালো। আর এ কারণেই ব্যাংকের চাকরিতে নারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

দেশের তফসিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লিঙ্গসমতা নিয়ে প্রতি ছয় মাস পর পর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ ২০২০ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ৫৯টি ব্যাংকে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জন। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৩৭৮ জন। অর্থাৎ ব্যাংকে নারী কর্মীর অংশগ্রহণ এখন ১৮.৩২ শতাংশ। সেখানে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকে নারী কর্মীর হার ছিল ১৭.৪৫ শতাংশ।

এ সময়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে মোট জনবল ছিল ৫০ হাজার ১৬ জন। এর মধ্যে নারী সাত হাজার ৬৩৯ জন। অর্থাৎ নারী কর্মীর অনুপাত ১৮.০৩ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তিনটি বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নারী কর্মীর অনুপাত ১৬.০৭ শতাংশ। এই ব্যাংক তিনটিতে পুরুষ কর্মী ১১ হাজার ৮০০ এবং নারী কর্মীর সংখ্যা এক হাজার ৮৯৬ জন।

বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকে নারী কর্মীর অনুপাত ১৮.৩১ শতাংশ। এই খাতের ব্যাংকগুলোয় পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ৭৩৭ এবং নারী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৮৯৫ জন। তবে নারী কর্মীর অনুপাতের দিক থেকে এগিয়ে আছে বিদেশি ব্যাংকগুলো। এই খাতের ৯টি ব্যাংকে নারী কর্মী বর্তমান ৩২.৫৩ শতাংশ। এই ব্যাংকগুলোয় পুরুষ কর্মী দুই হাজার ৯১৪ এবং নারী কর্মী ছিল ৯৪৮ জন।

প্রতিবেদনে ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে পদক্রম ও বয়সভেদে নারী কর্মীদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, সূচনা পর্যায়ে নারী কর্মী অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। গত বছর পর্যন্ত এই হার ১৫.৯১ শতাংশ। মধ্যবর্তী পর্যায়ে নারী আছেন ১৫.৩৭ শতাংশ। আর উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন ৯.১৬ শতাংশ।

বেসরকারি সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিয়া জুনায়েদ বলেন, ব্যাংকের চাকরি খুবই কমফোর্টাবল। তাই সারা জীবন এই চাকরিতেই রয়েছি। আমার মতে, এই পেশাই নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।’

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, ব্যাংকগুলোয় ৩০ বছরের কম বয়সী যেসব কর্মী রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ২০.৬২ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে নারীর হার ১৫.৭৬ শতাংশ। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই হার ৮.৪০ শতাংশ। ব্যাংকের পর্ষদে ১২.২০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button