ব্যাংক গ্রাহক

ঈদ মওসুমে ব্যাংকে প্রতারকচক্র সক্রিয়

ব্যাংক থেকে উঠানো টাকা কিংবা ব্যাংকে জমা দেয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা টাকা খোয়া যাবার ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে। বিশেষত: ঈদ মওসুমে গ্রামের সহজ সরল মানু্ষই বেশী স্বীকার হন সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, ব্যাংকে লেনদেন করতে এসে যারা প্রতারিত হন তাদের অধিকাংশই সচেতনতা এবং সাবধানতার অভাবে। আবার সব ঘটনা যে ব্যাংকের ভেতরেই ঘটে তাও কিন্তু নয়। ক্ষণিকের ঘনিষ্টতায় টাকা উঠানোর তথ্য সংগ্রহ করে অনেক সময় বাইরে কাবু করে প্রতারকরা।

তদুপরি কিছু প্রতারণার ধরণ হয় নিম্নরূপ
১) টাকা উঠাতে/ জমা দিতে সহযোগিতার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। প্রথমে ভাব-ঘনিষ্টতায় জমা বই/ চেক পাতা লিখে দেয়ার সহযোগিতাটা করে অনেকটা গায়ে পড়েই এগিয়ে যায় প্রতারক। সরল বিশ্বাসে এসব প্রতারকের সহযোগিতা নেয়া মানেই নিজের বিপদ ডেকে আনা!
২) ব্যাংক থেকে উঠানো টাকা গুনে দেয়ার নাম করেও টাকা নিয়ে কেটে পড়ে প্রতারকচক্র। গুনতে গুনতে কোন টাকা বের করে বলবে এটা অচল/ছেঁড়া। কাউন্টার থেকে বদলে আনুন। গ্রাহক যেই টাকা বদলাতে যায় অমনি প্রতারক কেটে পড়ে। আবার গুনতে গুনতে গ্রাহকের অমনোযোগিতার সুযোগে আংশিক টাকা সরানো কিংবা বান্ডেলে বড় নোটের বদলে ছোট মানের নোট ঢুকিয়েও প্রতারণা করে।

৩) খুচরা বদল করাও প্রতারণার বহুল প্রচলিত কৌশল। এই পদ্ধতিতে কোন সাধারণ গ্রাহকের হাতে ছোটা টাকার নোট দেখে তাকে বড় নোট বিনিময়ের প্রস্তাব দেয়। সরল বিশ্বাসে গ্রাহক রাজি হলেই সর্বনাশ! ভুলিয়ে ভালিয়ে গোঁজামিলের মা্ধ্যমে এই পদ্ধতিতে টাকা হাতিয়ে নেয় কৌশলী প্রতারক।
৪) কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো কোন জমাকারি কাউন্টারের সামনে সবে টাকা রেখেছেন এমন গ্রাহকের পায়ের কাছে প্রথমে কিছু ৫০০/ ১০০০ টাকার নোট ছড়িয়ে দেয়। তারপর বিনয়ের সাথে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেই পড়ে থাকা টাকার প্রতি। যেই না গ্রাহক সেই পড়ে থাকা টাকার প্রতি নজর দিলেন তৎক্ষণাৎ কাউন্টারের উপর রাখা টাকা সরিয়ে সটকে পড়ে চতুর প্রতারক।

৫) প্রতারকরা বৈদেশিক রেমিটেন্সের টাকা নিতে আসা গ্রাহকদের টার্গেট করে অনেক সময় বাড়ি থেকেই। কে বিদেশ থাকে, কোথায় থাকে এমন সব তথ্য সংগ্রহে থাকে তাদের। যেদিন বৃদ্ধ বাবা/ মা অথবা অন্য কেউ ব্যাংকে আসবেন সেদিন সেও চলে আসে। আগে থেকেই ব্যাংকে অবস্থান করে টাকা নিতে আসা লোকটির সাথে ঘনিষ্টতা তৈরী করে নানাভাবে। যেমন- কখনো বলে আমি আপনার ছেলের সাথেই বিদেশে থাকি। ক’দিন আগেই দেশে এলাম। আমার নিজের কিছু টাকা উঠাতে হবে। তাছাড়া আপনার ছেলেও আমাকে ফোনে আপনার নামে টাকা পাঠানোর কথা জানিয়েছে আজ সকালেই। দিন না আমার কাজের সাথে আপনারটা আমিই করে দিচ্ছি। ছেলের সাথে যোগাযোগের নাম করে এ সময় মোবাইলটাও নিয়ে নেয় প্রতারকের কব্জায়। এবার গ্রাহকেকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে হাত থেকে চেক/ পিন নিয়ে কাউন্টার থেকে টাকা উঠিয়ে নিয়ে চলে যায় সেই প্রতারক।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

৬) মহিলা গ্রাহকদের প্রতারিত করে মহিলা প্রতারকচক্র। এক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক পরিচয় ঘনিষ্টতা কৌশল যেমন কাজে লাগায়; কাজে লাগায় পূর্ব সংগৃহীত তথ্যও। টাকা উঠাবেন/ উঠিয়েছেন এমন কাউকে সে তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম/ পাড়ার লোক বলে পরিচয় দেয়। জানায় সেও বেশ কিছু টাকা উঠিয়েছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে সেও তার সাথে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এখানে সরল বিশ্বাসে একসাথে ব্যাংক থেকে বের হওয়া মানেই টাকা খোয়ানো। একটু নিরিবিলি জায়গায় গিয়েই সদলবলে হাজির হয়ে প্রতারকচক্র টাকা হাতিয়ে নেয়।
৭) নারীদের ভ্যানিটি ব্যাগে রাখা টাকা নারী প্রতারক সহজেই হাতিয়ে নেয়।

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম
প্রতারণা আশ্রিত এসব দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজন গ্রাহকের সচেতনতা এবং সাবধানতা। কারণ প্রতারকরা গ্রাহকের সাথে এমনভাবে মিশে যে বাহ্যত তাদেরকে সন্দেহ করা কঠিন হয়। বিশেষত: যেসব ব্যাংক শাখায় লোক সমাগম বেশী। তাই সম্মানিত গ্রাহকগণ নিম্নোক্ত বিষয়ে সচেতন হলে অনেক দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। যেমন-
ক) টাকা উত্তোলন এবং জমার কাজে অল্প পরিচিতি/ অপরিচিত কোন লোকের সাহায্য না নেয়া।
খ) অপরিচিত কোন লোকের কাছে নিজের লেনদেনের তথ্য না জানানো।
গ) উত্তোলিত/ জমার টাকা গুনতে অপরিচিত/অল্পপরিচিত কারো সাহায্য না নেয়া।
ঘ) ব্যাংকের কাউন্টার ব্যতীত অন্য কারো সাথে খুচরা বিনিময় না করা।

ঙ) টাকা উঠানোর পর অপরিচত/ অযাচিত সঙ্গী হওয়া কারো সাথে একই যানবাহনে না চড়া।
চ) টাকা উঠানোর পর বিশেষ পরিস্থিতিতে নিজেকে অনিরাপদ মনে হলে ব্যাংক শাখা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা। প্রয়োজনে পুলিশী নিরাপত্তা গ্রহণ করা।
ছ) কাউন্টারের সামনে টাকা নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ মেঝেতে পড়ে থাকা কোন টাকার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আগে নিজের টাকার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। আর অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে সেই জাতীয় লোককে শাখা কর্তৃপক্ষের নিকট ধরিয়ে দেয়া।
জ) ব্যাংকে অবস্থানকালে কেউ তাকে ফলো করছে/ গায়েপড়ে সাহায্য করতে চাইছে/ ভাঙতি বদল করতে চেয়েছে এমন লোকদের ব্যাপারে শাখা ব্যবস্থাপক/ সেকেন্ড অফিসার অথবা নিদেন পক্ষে সিকিউরিটি গার্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা।
ঞ) ভ্যানিটি ব্যাগে রক্ষিত টাকার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সর্তক থাকা।

মোট কথা প্রতারক অন্য দশজনের মতই মানুষ। তাদের আলাদা কোন রং নেই যে তাদেরকে আগেভাগেই চিহ্নিত করা যায়। তাই তাদের অপতৎপরতার ব্যাপারে কার্যত: গ্রাহক সচেতনতাই পারে প্রতরণা প্রতিহত করতে। সুতরাং, সাবধান হোক, নিরাপদ থাকুন এবং নিজের অর্থকে নিরাপদ রাখুন।

লেখকঃ মোসলেহ উদ্দিন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

আরও দেখুন:
◾ অর্থ ব্যবস্থাপনার পাঁচ পরামর্শ
◾ ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ জরুরি
◾ অর্থনৈতিক লেনদেনে ধোঁকা ও প্রতারণা
◾ নিম্ন সুদহার নীতি আর উচ্চ সুদহার ঝুঁকির চক্রে ব্যাংক
◾ বিধ্বংসী পুঁজিবাদের বিকল্প কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button