শেয়ার বাজার

শেয়ার ব্যবসা করতে চান তাহলে প্রয়োজনীয় তথ্য কিছু জেনে নিন

অনেকেই শেয়ার ব্যবসা করতে চান। কিন্তু কোনো ধরনের ধারণা না থাকায় আর শুরু করা হয় না। শেয়ার ব্যবসা করতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে কী জানতে হবে এবং কীভাবে ব্যবসা শুরু করতে হবে তার একটি প্রাথমিক ধারণা আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো-

বিও অ্যাকাউন্ট খোলা
❏ প্রথমে বিও অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। একক বা যৌথ একাউন্ট খোলা যায়
❏ বয়স ১৮ বছর হতে হয়
❏ নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হয়

বিও অ্যাকাউন্ট খোলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো হলো-
❏ জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, নিজের ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নমিনির ১ কপি ছবি, ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট
❏ জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও উল্লিখিত কাগজ ও ছবি জমা দিতে হবে
❏ বিও অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য মাত্র ৫০০ টাকা চার্জ দিতে হয়।

শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে
শুরুতে শেয়ার বেচা-কেনার ক্ষেত্রে যেসকল বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়-
প্রথমে দেখতে হবে কোম্পনিটির মৌলভিত্তি কেমন অথবা কোম্পানিটি কোন ক্যাটারগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানিগুলোর জন্য ৪টি ক্যাটাগরি রয়েছে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- A, B, N ও Z

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ক্যাটাগরি A
যে সকল কোম্পানি প্রত্যেক বছর নিয়মিতভাবে এজিএম করে ও ১০% বা ১০% এর বেশি লভ্যাংশ দিয়ে থাকে।

ক্যাটাগরি B
যে সকল কোম্পানি প্রত্যেক বছর নিয়মিতভাবে এজিএম করে ও ১০% এর কম লভ্যাংশ দিয়ে থাকে।

ক্যাটাগরি Z
যেসব কোম্পানি এক বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় না, কোম্পানীকে Z ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই কোম্পানীর শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজগুলো মার্জিন একাউন্টের বিপরীতে কোন লোন সুবিধা প্রদান করে না। এই কোম্পানীর শেয়ারগুলো ক্রয়ের ৯ কার্যদিবস পর বিক্রি করতে হয়।

ক্যাটাগরি N
বাজারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুন কোম্পানিগুলোর এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন কোম্পানিগুলো N ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে।

কোম্পানির ইপিএস (আর্নিং পার শেয়ার) কত?
প্রত্যেক কোম্পানি বছরে ৪টি কোয়ার্টারে ইপিএস দিয়ে থাকে। ইপিএস হলো শেয়ার প্রতি আয়। কোনো কোম্পানি একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ লাভ করে সেই লভ্যাংশকে মার্কেটের মোট শেয়ারে ভাগ করে দিলে যা আসে তাই হলো ইপিএস।

কোম্পানির শেয়ারের পিই (প্রফিট আর্নি রেশিও) কত?
যে কোম্পানির পিই যত বেশি সে কোম্পানি তত বেশি অতি মূল্যায়িত। বাংলাদেশের শেয়ার মার্কেটের কোম্পানিগুলোর পিই ২৫ এর বেশি হলে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

প্রাইমারি মার্কেট ও সেকেন্ডারি মার্কেট কী?
দেশের শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে গেলে আপনি দুইভাবে করতে পারেন। এক প্রাইমারি শেয়ারের মাধ্যমে এবং দুই সেকেন্ডারি শেয়ারের মাধ্যমে।

প্রাইমারি শেয়ার
বাজারে কোনো কোম্পানি প্রথমে প্রাইমারি শেয়ারের মাধ্যমে প্রবেশ করে। অর্থাৎ নতুন কোনো কোম্পানিকে বাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে তাকে প্রথমে প্রাইমারি শেয়ার ছাড়তে হবে। শোনা যায় সবাই বলে প্রাইমারি শেয়ারে কোন লস নাই। সেকেন্ডারি শেয়ারে প্রচুর রিস্ক। এরকম কথা তারা কেন বলে আসুন জেনে নেই। প্রতিটি কম্পানির শেয়ারের একটা ফেস ভ্যালু থাকে। কোম্পানি যখন তার শেয়ারটি মার্কেটে ছাড়তে চায় তখন সে ফেস ভ্যালুর সাথে প্রিমিয়াম যোগ করে একটি নির্দিষ্ট টাকায় শেয়ারটি অফার করে। এসইসি (সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন) যদি অনুমোদন দেয় তবে তারা তাদের শেয়ার কেনার জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে। যাকে আমরা IPO/আইপিও বা ইনিশিয়াল পাবলিক অফার বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বলে থাকি।

ধরা যাক কোনো কম্পানির ফেস ভ্যালু ১০ টাকা এবং তারা ৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ শেয়ারের দাম নির্ধারণ করল ১৫ টাকা। এখন আপনি যদি ওই শেয়ার IPO এর মাধ্যমে পেয়ে থাকেন তবে আপনার প্রতি শেয়ারে দাম পরে ১৫ টাকা। আপনি এখন ইচ্ছা করলে এই শেয়ার সেকেন্ডারি মার্কেটে বিক্রি করতে পারবেন। সাধারণত দেখা যায় প্রাইমারি শেয়ারের যে দাম তার তুলনায় সেকেন্ডারি মার্কেটে এর দাম বেশি হয়ে থাকে। আপনার শেয়ারটি যদি সেকেন্ডারি মার্কেটে ২৫ টাকায় ওপেন হয় তবে আপনি তখন বিক্রি করলে প্রতি শেয়ারে ১০ টাকা লাভ পেয়ে যাবেন। আপনি যদি মনে করেন এই কম্পানি সামনে আরও ভালো করবে তবে প্রাইমারিতে প্রাপ্ত শেয়ার আপনি অনেক দিন ধরেও রাখতে পারেন পরবর্তীকালে বেশি দামে বিক্রির জন্য। আবার ধরুন আপনি যে কম্পানির প্রাইমারি শেয়ার কিনতে চাচ্ছেন তার প্রিমিয়াম অনেক বেশি। তাহলে সেকেন্ডারি মার্কেটে আপনি যে দামে শেয়ার কিনেছেন তার তুলনায় দাম কমেও ওপেন হতে পারে। তাই প্রাইমারি শেয়ার মানেই লাভ না মনে করে কম্পানিটি কী দামে শেয়ার ছাড়ছে এবং কম্পানির আয় কেমন অর্থাৎ কম্পানিটি ভালো কি না তা যাচাই করে কিনুন।

সেকেন্ডারি শেয়ার
প্রাইমারি শেয়ার যখন কেউ বিক্রি করে দেয় তখন তা সেকেন্ডারি শেয়ারে পরিণত হয়। সেকেন্ডারি শেয়ার বাজারে ব্যবসা করতে হলে আপনার শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। অর্থাৎ, আপনাকে ব্যবসা করার জন্য ফান্ডামেন্টাল প্লাস টেকনিক্যাল এনালাইসিস সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এ ধারণা অর্জন করতে পারলে শেয়ার ব্যবসায় আপনি ভালো লাভ করতে পারবেন। আর আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারে ব্যবসা করেন এবং একে পেশা বা বাড়তি ইনকামের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করতে চান তবে সেকেন্ডারি মার্কেট খুবই উত্তম জায়গা।

তবে কেউ যদি মনে করেন শেয়ার ব্যবসার মাধ্যমে রাতারাতি ধনী হয়ে যাবেন তাদের এ ব্যবসায় আসা উচিত নয়। কারণ, প্রতি ব্যবসাতেই লাভ লস থাকে এবং পরিশ্রমের দরকার হয়। তাই যথেষ্ট মেধা ও বুদ্ধি খাটিয়ে ধীরেধীরে আপনি শেয়ার মার্কেটে অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো প্রফিট করতে পারবেন এ আশ্বাস আমরা দিতে পারি।

শেয়ার লেনদেন
সরকারি ছুটি ছাড়া রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৩০ টা থেকে বেলা ২.৩০ টা পর্যন্ত লেনদেন হয়ে থাকে। ক্রয়কৃত শেয়ার A, B, N এর ক্ষেত্রে ২ কার্যদিবস পরে এবং Z এর ক্ষেত্রে ৯ কার্যদিবস পরে বিক্রি করা যায়। শেয়ার বিক্রির ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে সাধারণত অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক প্রদান করা হয়। অ্যাকাউন্টের টাকার মেয়াদ পাওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩ দিন পূর্বে রিকুইজিশন দিতে হয়। আইপিও শেয়ার বিক্রির জন্য প্রদত্ত আইপিও এর ওয়্যারেন্ট পত্র ব্রোকারেজ হাউজে জমা দিতে হয়।

ক্রেডিটঃ অর্থসূচক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button