আয়কর

করযোগ্য আয় বের করবেন যেভাবে

নিয়মানুযায়ী যাদের বেসিক ১৬,০০০ টাকা বা তদুর্ধ্ব তাদের সবাইকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে যে রিটার্ন দাখিল করা আর ইনকাম ট্যাক্স বা আয়কর পরিশোধ করা দুটি এক জিনিস নয়। উপরোক্ত বেসিক এর আওতাধীন সবাইকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে এটা সত্য কিন্তু তাদের আয় যদি করসীমা অতিক্রম না করে তাহলে আয়ের উপর আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে না, শুধুমাত্র রিটার্ন দাখিল করলেই চলবে। আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে তাহলেই কেবল আয়কর দিতে হবে। আর এই করযোগ্য আয় কিভাবে বের করবেন সেই বিষয়েই আজকের এই লেখা। চলুন জেনে নেই কিভাবে করযোগ্য আয় বের করতে হয়।

আয়কর হিসাব করার ৫টি সহজ ধাপ
১) সমুদয় আয়ের উপর কর দিতে হয়না, কাজেই ১ম ধাপে আমরা করযোগ্য আয় বের করা শিখবো;
২) ২য় ধাপে উক্ত করযোগ্য আয়ের উপর কত টাকা আয়কর আসবে (প্রাথমিক হিসাব) তা বের করবো;
৩) ৩য় ধাপে সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে, তা বের করবো;
৪) ৪র্থ ধাপে উক্ত সর্বনিম্ন পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলে কত টাকা আয়কর রেয়াত পাবেন, তা বের করবো; এবং
৫) ৫ম ধাপে প্রাথমিক আয়কর হিসাব হতে রেয়াত বাদ দিয়ে চুড়ান্ত প্রদেয় আয়কর বের করবো।

১ম ধাপঃ ১ম ধাপে করযোগ্য আয় বের করবেন কিভাবে তা জেনে নেই
১) Basic Salary: পুরোটাই করযোগ্য আয়;
২) Bonus (Eid Bonus/Incentive Bonus): পুরোটাই করযোগ্য আয়;
৩) বাসা ভাড়া: Basic Salary এর ৫০% বা বছরে ৩ লক্ষ টাকা- এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম, সেই পরিমাণ অর্থের উপর কর দিতে হবেনা। কাজেই করযোগ্য আয় নিরূপনের সময় আমার প্রাপ্ত বাসা ভাড়া থেকে সেই পরিমাণ অর্থ (অর্থাৎ Basic Salary এর ৫০% বা বছরে ৩ লক্ষ টাকা- এই দুইয়ের মধ্যে যেটি কম) বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে;
৪) চিকিৎসা ভাতা: Basic Salary এর সর্বোচ্চ ১০% বা বাৎসরিক ১,২০,০০০ টাকা – এই দুয়ের মধ্যে যেটি কম, তা আমার প্রাপ্ত চিকিৎসা ভাতা থেকে বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করতে হবে;
৫) যাতায়াত ভাতা (যারা গাড়ী সুবিধা পান না): বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত অর্থাৎ আমার প্রাপ্ত যাতায়াত ভাতা হতে ৩০,০০০ টাকা বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তা আমার করযোগ্য আয়;
৬) যাতায়াত ভাতা (যারা গাড়ী সুবিধা পান): আমি যেই পরিমাণ অর্থই পাইনা কেন, আমার বেসিক স্যালারীর ৫% অথবা বাৎসরিক ৬০,০০০ টাকা – এ দুইয়ের মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ- তা আমার করযোগ্য আয় হসেবে বিবেচিত হবে;
৭) প্রভিডেন্ড ফান্ড (যদি অনুমোদিত হয়): শুধুমাত্র নিয়োগকর্তার অংশ করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করতে হবে;
৮) উপরোক্ত আয়ের বাইরে অন্য যেকোন আয়: যেমন- বিনোদন ভাতা, বাৎসরিক ছুটির সাথে প্রাপ্য ভাতা, ওভার টাইম, হাউজ মেইনটেন্যান্স ভাতা, সুদ আয়, ইত্যাদি আয় ১০০% করযোগ্য আয়।

২য় ধাপঃ করযোগ্য আয়ের উপর কত টাকা আয়কর আসবে (আমি কোনো বিনিয়োগ করিনি ধরে)
ক) প্রথমেই আসি আমার করমুক্ত আয়সীমা কত অর্থাৎ আমার করযোগ্য আয় কত টাকার কম হলে আমাকে কোনো করই দিতে হবে না;
খ) যদি আমি ৬৫ বছরের কম বয়সী পুরুষ করদাতা হই, তাহলে আমার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৩.০০ লক্ষ টাকা;
গ) যদি আমি মহিলা করদাতা বা আমার বয়স ৬৫ বছর বা তদূর্ধ (নারী, পুরুষ নির্বিশেষে), হয়, তাহলে আমার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৩.৫০ লক্ষ টাকা;
ঘ) যদি আমি প্রতিবন্ধী হই, তাহলে আমার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৪.৫০ লক্ষ টাকা;
ঙ) যদি আমি গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হই, তাহলে আমার জন্য করমুক্ত আয় সীমা ৪.৭৫ লক্ষ টাকা;
চ) যদি আমার কোনো প্রতিবন্ধী সন্তান থাকে বা আমি কোনো প্রতিবন্ধী সন্তানের অভিভাবক হই, তাহলে আমার করমুক্ত আয়সীমা উপরের চার ক্যটাগরীর যে ক্যাটাগরিতে আমি পড়ি, তার চেয়ে আরো ৫০,০০০ টাকা বেশী হবে। যদি আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই করদাতা হই, তাহলে আমরা যেকোন একজন এই সুবিধা নিতে পারবো। অর্থাৎ উপরের পাঁচ ক্যটাগরীর যে ক্যাটাগরিতেই আমি পড়ি, আমার করযোগ্য আয়, করমুক্ত সীমার কম হলে আমাকে কোনো আয়কর দিতে হবেনা।
ছ) আবার যদি আমার করযোগ্য আয়, করমুক্ত সীমার বেশী হয়, তাহলে আমার জন্য প্রযোজ্য যে করমুক্ত সীমা, তার উপরও আমাকে কোনো কর দিতে হবেনা। আমাকে শুধুমাত্র কর দিতে হবে, করমুক্ত সীমার উপর অতিরিক্ত যে করযোগ্য আয় আমার আছে তার উপর।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সে করের হার নিম্নরূপ
i) করমুক্ত সীমা ৩.০০ লক্ষ টাকা;
ii) করমুক্ত সীমা পরবর্তী ১.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিবো ৫% হারে;
iii) পরবর্তী ৩.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিবো ১০% হারে;
iv) পরবর্তী ৪.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিবো ১৫% হারে;
v)পরবর্তী ৫.০০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের উপর কর দিবো ২০% হারে; এবং
vi) অবশিষ্ট আয়ের উপর কর দিবো ২৫% হারে।

ধরা যাক, আমি একজন ত্রিশ বছর বয়সী পুরুষ এবং আমার করযোগ্য আয় ৫৬ লক্ষ টাকা, তাহলে-
ক) ১ম ৩.০০ লক্ষ টাকার উপর কর আসবে শুন্য টাকা;
খ) পরবর্তী ১.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিবো ৫% হারে ৫,০০০ টাকা;
গ) পরবর্তী ৩.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিবো ১০% হারে ৩০,০০০ টাকা;
ঘ) পরবর্তী ৪.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিবো ১৫% হারে ৬০,০০০ টাকা;
ঙ) পরবর্তী ৫.০০ লক্ষ টাকার উপর কর দিবো ২০% হারে ১,০০,০০০ টাকা; এবং
চ) অবশিষ্ট ৪০.০০ লক্ষ টাকা (৫৬ লক্ষ – ৩.০০ লক্ষ – ১ লক্ষ – ৩ লক্ষ – ৪ লক্ষ – ৫ লক্ষ) আয়ের উপর কর দিবো ২৫% হারে ১০,০০,০০০ টাকা। অর্থাৎ ৫৬ লক্ষ টাকা করযোগ্য আয়ের বিপরীতে আমাকে আয়কর দিতে হবে মোট ১১,৯৫,০০০ টাকা (যদি আমি কোন বিনিয়োগ করে না থাকি)।

উপরে একটি জায়গায় আমরা লিখেছি শর্ত প্রযোজ্য। শর্তটি কি? শর্তটি হচ্ছে, আমার যদি করযোগ্য আয় থাকে, তাহলে আমি যে ক্যাটাগরিতে পরি, সেই ক্যাটাগরিতে আমার আয়কর হিসাব করার পর যদি দেখা যায়, আমার আয়কর মিনিমাম প্রদেয় আয়করের চেয়ে কম এসেছে, তাহলে আমাকে মিনিমাম আয়করটা দিতেই হবে। এখন তাহলে দেখে নেই, মিনিমাম আয়কর কত?
১) যদি আমার বসবাস ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তাহলে ৫০০০ টাকা;
২) যদি আমার বসবাস বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তাহলে ৪০০০ টাকা;
৩) যদি আমার বসবাস সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে হয়, তাহলে ৩০০০ টাকা।

একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করি
ধরি আমি একজন ৬৫ বছরের কম বয়সী পুরুষ, আমার বসবাস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এবং এই আয় বছরে আমার করযোগ্য আয় হয়েছে ৩,২৮,০০০ টাকা। তাহলে আমার করমুক্ত আয় সীমা ৩,০০,০০০ টাকা হবার কারণে আমাকে প্রথম ৩,০০,০০০ টাকার উপর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী ২৮,০০০ টাকার (৩,২৮,০০০ টাকা মাইনাস ৩,০০,০০০ টাকা) উপর ৫% হারে আমার কর আসবে ১,৪০০ টাকা। কিন্তু যেহেতু আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাস করি, আমাকে মিনিমাম ৫,০০০ টাকা কর দিতেই হবে। তবে আবার বলছি যদি আমার করযোগ্য আয়, করমুক্ত আয়সীমার কম হয়, তাহলে আমাকে কোনো করই দিতে হবেনা। আবার যদি আমি মিনিমাম আয়করদাতা হই, তাহলে আমি বিনিয়োগজনিত কোন আয়কর রেয়াত সুবিধা পাবো না।

৩য় ধাপঃ সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে
আমি কত টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাবো, তা নির্ভর করে আমি সংশ্লিষ্ট অর্থবছরে কত টাকা নতুন বিনিয়োগ করেছি তার উপর। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি আনলিমিটেড বিনিয়োগ করলেই আনলিমিটেড কর মওকুফ বা রেয়াত সুবিধা পাবো। আমি আমার আয়ের সব টাকাই বিনিয়োগ করতে পারবো, চাই কি ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করতে পারবো (!!!), কিন্তু একটি নির্দিষ্ট অংকের বাইরে যত টাকাই বিনিয়োগ করিনা কেন, একটি নির্দিষ্ট অংকের বেশী কর রেয়াত সুবিধা আমি আর পাবো না। এজন্য এই ধাপটির নাম আমরা দিয়েছি-সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

এই নিয়মটি খুবই সহজ। আপনার করযোগ্য আয় হতে প্রভিডেন্ড ফান্ডে নিয়োগকর্তার অংশ (যদি প্রভিডেন্ড ফান্ডটি NBR কর্তৃক অনুমোদিত হয়) বাদ দিলে যা থাকবে, তার সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত যদি আপনি বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনি সর্বোচ্চ কর রেয়াত সুবিধা পাবেন। ধরুন, আপনার করযোগ্য আয় ২১.০০ লক্ষ টাকা যার মধ্যে প্রভিডেন্ড ফান্ডে নিয়োগকর্তার অংশ ১.০০ লক্ষ টাকা। তাহলে, আপনাকে সর্বোচ্চ কর রেয়াত সুবিধা পেতে হলে ৫.০০ লক্ষ টাকা [(২১.০০ লক্ষ টাকা – ১.০০ লক্ষ টাকা) X ২৫%] নতুন বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট আয় বছরে করতে হবে। [তবে আপনি ১.৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ইনকামের ২৫% হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবেন]।

৪র্থ ধাপঃ বিনিয়োগের উপর কত টাকা আয়কর রেয়াত পাবো
নিম্নলিখিত আয়ের ক্ষেত্রে অনুমোদিত বিনিয়োগের উপর কর রেয়াত পাবেন-
– আপনার ইনকাম যদি ১৫.০০ লক্ষ টাকা হয়, সেক্ষেত্রে ১৫% কর রেয়াত পাবেন।
– আর যদি আপনার ইনকাম ১৫.০০ লক্ষ টাকার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে ১০% কর রেয়াত পাবেন।

উদাহরণঃ
১) ধরা যাক সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত পেতে আমি বিনিয়োগ করেছি ৩.৭৫ লক্ষ টাকা, তাহলে, বিনিয়োগের বিপরীতে ১৫% হারে রেয়াত পাবো ৫৬,২৫০ টাকা [৩,৭৫,০০০ X ১৫%]। [যদি আপনার ইনকাম ১৫.০০ লক্ষ টাকা হয়]।
২) ধরা যাক সর্বোচ্চ আয়কর রেয়াত আমি বিনিয়োগ করেছি ৬.৫০ লক্ষ টাকা, তাহলে, বিনিয়োগের বিপরীতে ১০% হারে রেয়াত পাবো ৬৫,০০০ টাকা [৬,৫০,০০০ X ১০%]। [যদি ইনকাম ২৬.০০ লক্ষ টাকা হয়, অর্থাৎ ইনকাম ১৫.০০ লক্ষ টাকার উপরে হলে ১০% আয়কর রেয়াত পাবেন]।

৫ম ধাপঃ চুড়ান্ত প্রদেয় আয়কর বের করা
এই শেষ ধাপে আমরা ২য় ধাপে যে প্রাথমিক আয়কর বের করেছিলাম, তা থেকে ৪র্থ ধাপে বের করা আয়কর রেয়াত বাদ দিয়ে চূড়ান্ত প্রদেয় আয়কর বের করবো। আয়কর হিসাব করা শেষ।

আরো কিছু টুকিটাকি
প্রশ্নঃ আয়কর দিবো আবার সারচার্জও দিবো?
উত্তরঃ জী, আপনার নীট সম্পদের (মোট সম্পদ – মোট দায়) পরিমাণ যদি ৩ কোটি টাকার অধিক হয়, তাহলে আয়কর তো দিবেনই, সাথে সারচার্জও দিতে হবে। তবে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া স্বত্ত্বেও যদি আপনার করযোগ্য আয় না থাকে, তাহলে অবশ্য কোনো সারচার্জ দিতে হবেনা।

নীট সম্পদের পরিমাণ যত বেশী হবে, সারচার্জের পরিমানও শতকরা হিসাবে (আয়করের উপর) বাড়তে থাকবে।
১) নীট সম্পদ ৩.০০ কোটি পর্যন্ত –শূন্য;
২) নীট সম্পদ ৩.০০ কোটির বেশী কিন্তু ৫ কোটির বেশী নয় — ১০% (আয়করের উপর);
৩) নীট সম্পদ ৫ কোটির বেশী কিন্তু ১০ কোটির বেশী নয় — ১৫% (আয়করের উপর);
৪) নীট সম্পদ ১০ কোটির বেশী কিন্তু ১৫ কোটির বেশী নয় — ২০% (আয়করের উপর);
৫) নীট সম্পদ ১৫ কোটির বেশী কিন্তু ২০ কোটির বেশী নয় — ২৫% (আয়করের উপর);
৬) নীট সম্পদ ২০ কোটির উপর যেকোনো অংকের জন্য — ৩০% (আয়করের উপর)।

ধরা যাক, আপনার আয়কর এসেছে ৭৫ হাজার টাকা এবং আপনার নীট সম্পদের পরিমাণ ১১ কোটি টাকা। তাহলে ৭৫ হাজার আয়কর দিবেন, সাথে সারচার্জ দিবেন ১৫ হাজার টাকা (৭৫ হাজার টাকার ২০%)।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আপনার নীট সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা – ১০ কোটি টাকা হলে আপনার প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ ৩ হাজার টাকার কম হলেও আপনাকে নুন্যতম ৩ হাজার টাকা সারচার্জ দিতেই হবে। এছাড়া আপনার নীট সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা – ২০ কোটি টাকা হলে আপনার প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ ৫ হাজার টাকার কম হলেও আপনাকে নুন্যতম ৫ হাজার টাকা সারচার্জ দিতেই হবে।

প্রশ্নঃ আমার করযোগ্য আয় নেই, তাহলেও কি আমাকে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে হবে?
উত্তরঃ আয়কর অধ্যাদেশের ৮০ ধারা অনুযায়ী, আপনার করযোগ্য আয় না থাকলেও নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে হবেঃ
১) যদি আয় বছরের শেষ তারিখে আপনার মোট পরিসম্পদের (Gross Wealth) পরিমাণ ২৫ লক্ষ টাকার বেশী হয়;
২) যদি আয় বছরের শেষ তারিখে আপনি কোনো মোটর গাড়ির (জীপ বা মাইক্রোবাসসহ) মালিক হন;
৩) যদি আয় বছরে কোন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোন গৃহ-সম্পত্তি বা এপার্টমেন্টের মালিক হন বা গৃহ-সম্পত্তি বা এপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করে থাকেন।

তবে পরপর তিনবছর রিটার্ণ দাখিল করার পর ডেপুটি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস বরাবর আবেদন করে, রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেন।

প্রশ্নঃ ধরা যাক একজনের ই-টিন নেই। তার স্থায়ী ঠিকানা গাজীপুর, বর্তমান ঠিকানা অস্থায়ী ভিত্তিতে ঢাকা। তিনি ব্যাংকে চাকুরী করেন। তার প্রশ্ন হচ্ছে, তিনি স্থায়ী ঠিকানায় ইনকাম ট্যাক্স ফাইল করতে পারবেন কিনা?
উত্তরঃ ট্যাক্স কোন জোনে এবং সার্কেলে দিতে হবে, তা আপনার বর্তমান বা স্থায়ী ঠিকানার উপর নির্ভর করেনা। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে আপনি কি ধরণের পেশায় যুক্ত এবং আপনার কর্মস্থল কোথায় তার উপর। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এই অর্থ বছরের জন্য আয়কর দিতে হলে, আপনাকে ৩০ শে জুনের মধ্যেই E-TIN করতে হবে।

৯ মন্তব্য

    1. ১) যদি আমার বসবাস ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তাহলে ৫০০০ টাকা;
      ২) যদি আমার বসবাস বাংলাদেশের অন্য যেকোনো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হয়, তাহলে ৪০০০ টাকা;
      ৩) যদি আমার বসবাস সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাইরে হয়, তাহলে ৩০০০ টাকা।

  1. আমার আয় করসীমার নিচে কিন্তু আমার স্ত্রীর নামে একটি সি এন জি টেক্সি (মেট্রো) আছে যার ডকুমেন্ট আপডেট করার সময় আমার টিন সার্টিফিকেট নাম্বার ব্যবহার করেছি, আমি রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কি গাড়িটির হিসাব সহ জমা দিতে হবে।
    গাড়িটা থেকে বছরে ১২০০০০-১৫০০০০ টাকা আয় হয়।

Leave a Reply to Faruk Mohammad Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button