ব্যাংক আমানত কতটা সুরক্ষিত
ব্যাংক আমানত কতটা সুরক্ষিত- ব্যাংকে গ্রাহকদের রাখা মোট আমানতের ১৯ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। এর বাইরে প্রতিটি ব্যাংকের স্থায়ী ও তরল সম্পদ থাকে। ব্যাংক যে ঋণ বিতরণ করে, তাও ফেরত পাওয়া যায়। ফলে কোনো ব্যাংক অবসায়ন বা বন্ধ হয়ে গেলেও সেটির যত টাকা থাকবে, তা দিয়ে সমানুপাতিক হারে আমানতকারীদের দায় শোধ হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংক বন্ধ হলে আমানতকারীদের দায় পরিশোধের এটাই প্রচলিত বিধান।
এর বাইরে ব্যাংকের ছোট-বড় সব আমানতকারী বিমার আওতায় প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নিশ্চিত ১ লাখ টাকা করে পাবেন। যাঁর ১০ হাজার টাকা জমা আছে, তিনিও লাখ টাকা পাবেন। তবে বিমার অর্থ ১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও এই বিমার আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।
ফলে ব্যাংকে গ্রাহকের জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে আলোচনা ছড়িয়েছে, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। এতে বরং গ্রাহকেরা বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।
বাংলাদেশে এখনো কোনো ব্যাংক অবসায়ন বা বন্ধ হয়নি। অর্থাৎ ব্যাংক বন্ধ করে দেওয়ার কোনো অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। তবে সংকটে পড়ার কারণে ব্যাংকের নাম ও মালিকানা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য ২০১৯ সালের জুলাইয়ে পিপলস লিজিং নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন ঘটেছে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সাধারণত কোনো ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করে। এরপরও অবনতি ঘটলে প্রশাসক বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয়। তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত ও অধিগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। সবকিছু ব্যর্থ হলে আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষেই কেবল একটি ব্যাংকের অবসায়ন হতে পারে।
ব্যাংক খাত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব সম্পর্কে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমানতকারীদের ভয়ের কিছু নেই। একটি ব্যাংক বন্ধের আগে নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। বন্ধ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কিম করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেবে।
সে হিসাবে ব্যাংকটির সম্পদ, বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত টাকা, জমা আমানত ও আদায় হওয়া টাকা থেকে আনুপাতিক হারে গ্রাহকদের দায় শোধ হবে।’ তবে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খাতে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় বিচার না হওয়ায় মানুষ গুজবও বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।’
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এ ছাড়া বিমার আওতায় সব আমানতকারী ১ লাখ টাকা করে পাবেন। বাংলাদেশে এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করা প্রয়োজন। আর্থিক মন্দার পর আমেরিকাও তা বাড়িয়ে আড়াই লাখ ডলার করেছে।’
জানা গেছে, প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় কোম্পানি আইন অনুযায়ী। এরপরই তা অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যক্রম শুরু করে। আইন অনুযায়ী, সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে তবেই একটি প্রতিষ্ঠান অবসায়নের জন্য আদালতে আবেদন করতে হয়। আদালত অনুমোদন দিলে অবসায়নের জন্য অবসায়ক নিয়োগ দেয়। এরপর অবসায়ক আমানতকারীদের টাকা পরিশোধের লক্ষ্যে একটা স্কিম গঠনের পাশাপাশি ব্যাংকটির সম্পদের হিসাব চূড়ান্ত করেন।
প্রথমে ব্যক্তি আমানতকারী ও পরে প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের দায় শোধ করা হয়। আর সবার শেষে টাকা ফেরত পান শেয়ারহোল্ডাররা। এদিকে গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দিতে সরকার ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন ২০০০’ সংস্কার করে ‘আমানত সুরক্ষা আইন ২০২০’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করা হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে সব আমানতকারীকে ২ লাখ টাকা করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া আইনের সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুই বা ততধিকবার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে সে ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ প্রদান করবে।
এদিকে আমানত ফেরত পাওয়া নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ায় গতকাল সন্ধ্যায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যাংক অবসায়িত হলে সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে আমানতকারীদের প্রাপ্য টাকা আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল থেকে পরিশোধ করা হবে।
আর ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো ব্যাংক অবসায়িত হলে ওই ব্যাংকের সম্পদ থেকে সব আমানতকারীর পাওনা পরিশোধের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। এমতাবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জনগণকে বিভ্রান্ত বা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।