ইসলামী ব্যাংকিং

ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাস পর্ব-২

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। ১ম পর্ব নিশ্চয় আপনাদের ভাল লেগেছে। আজ আমরা জানব ইসলামী ব্যাংকিং এর ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ের ২য় পর্ব সম্পর্কে। আশা করছি সবার কাজে লাগবে। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন ২য় পর্বে।

এক নজরে ২০১৩ তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামিক ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাঃ
মালদিভসঃ ছোট দেশ। জনসংখ্যা চার লাখের কিছু বেশি। মুসলিম ৯৮.৪৪%। ২.৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠা পায় মালদিভস ইসলামী ব্যাংক। প্রথম সুকুক (বন্ডের শরয়ী বিকল্প) ইস্যু হওয়ার পথে। বলা যায়, ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

শ্রীলংকাঃ মোটা ব্যাংক ২৮টি। মোট আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৬টি। প্রথম ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পায় ২ বছর আগে। বড় ব্যাংকগুলো ইসলামিক উইন্ডো খুলছে।

ব্রুনাইঃ ওআইসির সবচেয়ে ছোট দেশ। ১৯৯০ এ ইসলামিক ফাইন্যান্সের শুরু। ৭টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি ইসলামিক। এবং এটাই সবচেয়ে বড়। ব্যাংক ইসলাম ব্রুনাই দারুস সালাম। ইসলামিক ফাইন্যান্সের বাজার ৩০ শতাংশের বেশি। প্রথম সুকুক ২০০৩ এ ইস্যু করা হয়। সরকার ইসলামিক ফাইন্যান্সের ওপর একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এবং ইসলামিক ফাইন্যান্স রেগুলেটরির জন্যও প্রতিষ্ঠান করেছে, পলিসি করেছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

মজার ব্যাপার হলো, অন্য দেশের মতো এখানে সরকারের সুকুক ইস্যু করার প্রয়োজন নেই। বরং সরকারের কাছে প্রচুর অতিরিক্ত ফান্ড রয়েছে, যা সঠিক খাতে বিনিয়োগের অপেক্ষায়।

তুরস্কঃ ৪৯ টি ব্যাংক। তন্মধ্যে কেবল ৪টি ইসলামিক। ইসলামিক ফাইন্যান্সের মার্কেট শেয়ার ৫%, আর ক্যাপিটাল শেয়ার ৪% মাত্র। ১৯৯০ এ ইসলামিক ব্যাংকিং শুরু হয়। সুকুক প্রথম ইস্যু হয় ২০১০ এ। এ পর্যন্ত মাত্র দশটির মত সুকুক ইস্যু হয়। উল্লেখ্য, তুরস্কে ইসলামী ব্যাংককে বলা হয় পার্টিসিপেটরি ব্যাংক বা অংশীদারি ব্যাংক।

জাপানঃ মূলত এনার্জি ইম্পোর্টের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। আর এসব তেল ও গ্যাস আসে ইসলামিক দেশসমূহ থেকে। কাজেই এখানে ইসলামিক প্রোজেক্ট ফাইন্যান্সের সুযোগ অনেক। সম্প্রতি ইজারা ও ইস্তিসনার ভিত্তিতে একটি ২৪২ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সুকুক ইস্যু করা হয়।

কাজাখিস্তানঃ একটি মাত্র ইসলামী ব্যাংক। আল হিলাল।

ইরানঃ মোট এ্যাসেট ৫০০+ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বিনিয়োগ মোডসমূহ: মুশারাকা ৩৯%, ইন্সট্রুমেন্ট সেল: ২৯% এবং কারদ: ৫%। ইরানের কিছু বৈশিষ্ট্য: সবগুলো ইসলামিক ব্যাংক; রিবামুক্ত ব্যাংকিং আইন ১৯৮৩; বাইয়ে দাইন নিষিদ্ধ (মালয়েশিয়ায় চলছে); একটি মাত্র শরীয়াহ বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে; তবে এখনো কোনো আন্তর্জাতিক শরীয়াহ মানদণ্ড অনুসরণ করা হয় না।

আফ্রিকাঃ আফ্রিকায় খুব ধীর গতিতে ইসলামিক ফাইন্যান্স আগাচ্ছে। মরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সাউথ আফ্রিকা, উগান্ডা প্রভৃতি দেশে আশা সঞ্চার করছে।

ইউরোপে ইসলামিক ফাইন্যান্সঃ ইউরোপের ছোট দেশ লুক্সেমবার্গ। ইউরোপে যাকে ইসলামিক ফাইন্যান্সের হাব বা চক্রকেন্দ্র বলা চলে। ১৯৭৮ এ প্রথম পশ্চিমা দেশ হিসেবে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখানে অনুমোদন পায়। ১৯৮৩ তে প্রথম ইউরোপিয়ান দেশ হিসেবে শরীয়াহ অনুসৃত ইনস্যুরেন্স (তাকাফুল) কোম্পানি প্রতিষ্ঠা পায়।

২০০২ এ প্রথমবার লুক্সেমবার্গ স্টক এক্সচেঞ্জে শরীয়াহ অনুসৃত সুকুক তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৯ এ প্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে লুক্সেমবার্গ সেন্ট্রাল ব্যাংক আইএফএসবি [১] এর সদস্য হয়। এরপর বর্তমান পর্যন্ত শরীয়াহ সুকুক ইস্যুকরণের গাইডলাইন প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে আরো সামনে এগিয়ে যায়। [২]

গত ২৯-৩১ অক্টোবর ২০১৩ লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরামের নবম আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। এই প্রথম মুসলিম বিশ্বের বাইরে ইউরোপে এটি অনুষ্ঠিত হয়। ফোরামে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন তার উদ্বোধনী বক্তব্যে দুবাই ও কুয়ালা লাম্পুরের পাশাপাশি লন্ডনকে ইসলামিক ফাইন্যান্সের অন্যতম রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি জানান, ব্রিটেনে ২৫ টি ল’ ফার্ম রয়েছে, যারা ইসলামিক ফাইন্যান্স সার্ভিস দিচ্ছে। ১৬টি ইউনিভার্সিটি বা বিজনেস স্কুল রয়েছে, যারা ইসলামিক ফাইন্যান্স বা সমমানের বিষয়ের ওপর এমবিএ করার সুবিধা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ইসলামিক ফাইন্যান্স যখন ট্র্যাডিশনাল (কনভেনশনাল) ফাইন্যান্স থেকে ৫০% বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট ২০১৪ তে যখন ১.৩ ট্রিলিয়ন পাউন্ড ছুঁতে যাচ্ছে, তখন আমরা চাই ব্রিটেনে এর একটি বড় অংশ ইনভেস্ট হোক।

তিনি জানান, মুসলিম বিশ্বের বাইরে এই প্রথম ব্রিটেন সোভরেইন সুকুক (সরকারী বন্ডের ইসলামী বিকল্প) ইস্যু করার ঘোষণা দিচ্ছে। ২০১৪ এর শুরুর দিকে পরিকল্পিত এই ইস্যুটির মোট মূল্য হবে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড (বা ৩২০ মিলিয়ন ডলার)। এছাড়া লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ ঘোষণা দিচ্ছে ইসলামিক মার্কেট ইনডেক্স চালু করার, যেন ইসলামিক ইনভেস্টররা সহজে জেনে নিতে পারে কোনটি ইসলাম অনুসৃত ইনভেস্টের জায়গা, কোনটি নয়। [৩]

চলবে……………………………………………………।

ভাল থাকবেন। আল্লাহ হাফিজ।

তথ্যসূত্র:
১. আইএফএসবি
২. ‘এক নজরে ২০১৩ তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামিক ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা’’ শিরোনামের অধীনে দেয়া এ পর্যন্ত সকল তথ্য: আই.এফ.এন এশিয়া ফোরাম ২০১৩, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া, অক্টোবর ২০১৩
৩. https://www.gov.uk/government/speeches/world-islamic-economic-forum-prime-ministers-speech

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button