বিশেষ কলামব্যাংকিং

গ্রিন ব্যাংকিং: টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি

সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’ ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো গ্রিন ব্যাংকিং তথা পরিবেশবান্ধব সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা ও টেকসই উন্নয়ন।

গ্রিন ব্যাংকিং তথা সবুজ ব্যাংকিং, এমন ব্যবস্থা যার মূল উদ্দেশ্য পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার। বিদ্যুৎ, পানি, কাগজের খরচ কমানোর উপযোগী প্রতিষ্ঠান ও কারখানা সবুজ শিল্প হিসেবে বিবেচিত। নিবন্ধটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বিডি ডটকম-এ। বিশ্বায়নের যুগে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির ধারণা থেকে ২০১১ সালে গ্রিন বা সবুজ ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে শুরুতেই ব্যাংকগুলোকে নিজেদের মধ্যে গ্রিন পরিবেশ তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পরিবেশ বিপর্যয় রোধকল্পে ও পৃথিবীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক নীতিবোধ এবং সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়নকল্পে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংক ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক শক্তিশালী ও টেকসই ব্যাংক ব্যবস্থার স্বার্থে বিশ্বমানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং নীতিমালা ২০১১ সালে প্রণয়ন করেছে। তিন পর্যায়ে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মূলত পরিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখেই এটি করা হয়েছে। বিশ্বের উন্নত সব দেশে এ সবুজকে ধরে রাখার মানসে ব্যাংকের এ বিষয়টি অনেক আগেই শুরু হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশে ব্যবসারত সব ব্যাংককে নিজেদের মধ্যে একটি পরিবেশবান্ধব বা সবুজ ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এ নীতিমালা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। পর্ষদের পরিচালকদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং নীতি, কৌশল ও কার্যক্রমের দেখভাল করবে। বাংলাদেশে ব্যবসারত বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রায় একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

নীতিমালা অনুসারে পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ব্যাংক স্বতন্ত্রভাবে একটি সবুজ ব্যাংকিং বিভাগ বা অনুশাখা স্থাপন করা হয়। এ অনুশাখা ব্যাংকের পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোকে অভ্যন্তরীণভাবে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে যথাসম্ভব কাগজের ব্যবহার সীমিত করে অনলাইন ইলেকট্রনিক পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি ব্যবহার করার এবং কম্পিউটার, এসিসহ বিভিন্ন যন্ত্র যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকিং কার্যক্রমে পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি বা প্রকল্প অর্থায়নে নজর বাড়ানোর কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব প্রকল্পের মধ্যে আছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পানি শোধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জৈব-গ্যাস, জৈব সার প্রভৃতি। বন্যা, খরা ও দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য নিয়মিত সুদের হারেই অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য একটি জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল গঠন করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া সবুজ বিপণন কর্মসূচি গ্রহণ, অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদার করা ও এ বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণীত এই নীতিমালার আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে পরিবেশ সংবেদনশীল বিভিন্ন খাতের বিষয়ে ব্যাংকের কৌশলগত নীতি প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে সেগুলো হলো- কৃষি, কৃষি বাণিজ্য, চামড়া, মৎস্য, বস্ত্র ও পোশাক, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কাগজ ও মণ্ড, চিনি, নির্মাণ, গৃহায়ন, প্রকৌশল, ধাতব পদার্থ, রসায়ন, রাবার ও প্লাস্টিক, ইট প্রস্তুত, জাহাজভাঙা প্রভৃতি। এই পর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সবুজ শাখা স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। যেসব শাখা সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক আলো-বাতাস, জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি ও পাখা, সীমিত পানি বিদ্যুৎ, পরিশোধিত পানি ব্যবহার করবে, সেগুলো সবুজ শাখা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বীকৃতি পাবে। তৃতীয় পর্যায়ে ব্যাংকগুলোকে পরিবেশবান্ধব পদক্ষেপ ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামগ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে এখন অনেক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা সৌরশক্তির আলোয় পরিচালিত হচ্ছে। গ্রিন শাখার স্বীকৃতি পেতে ব্যাংকগুলো সূর্যের আলোর পর্যাপ্ত ব্যবহারের উপযোগী জায়গায় নতুন শাখা স্থাপন করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বাতি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহারে জোর দিয়েছে। পানির স্বল্প ব্যবহার এবং ব্যবহৃত পানির পুনর্ব্যবহার, কাগজের ব্যবহার কমানোর মাধ্যমে গাছ বা বন রক্ষার মতো উদ্যোগে এগিয়ে এসেছে। এখন আর আগের মতো প্রধান কার্যালয় থেকে যে কোনো নির্দেশনার প্রিন্ট কপি ডাকে বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠানো হয় না। অধিকাংশ নির্দেশনা ই-মেইল বা ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। গ্রাহকরাও যেন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করেন, পেপারলেস ব্যাংকিং করতে পারেন, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে।

এখন বেশিরভাগ গ্রাহকের টাকা তোলার ভরসা এটিএম বুথ। যখন তখন টাকা তোলা কিংবা হাল আমলে স্থানান্তরের সুবিধা মেলে সেখানে। ব্যাংকের ভিড় এড়িয়ে বুথ ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টিও কাজ করে সবার মধ্যে। বুথে লেনদেন শেষে রিসিট প্রিন্টের আগে একটি বার্তা ভেসে ওঠে মনিটরে। এতে ব্যাংকভেদে যা-ই লেখা থাকুক, মূল বিষয় কাগজ বাঁচানো ও ভবিষ্যতের সবুজ বিশ্ব গড়ে তোলার আহ্বান। একটি রিসিটে যত অল্প কাগজ ব্যবহার হোক, সম্মিলিত গ্রাহকের কথা ভাবলে তা কিন্তু বিপুল। সবাই সাশ্রয়ী হলে কাগজ ব্যবহার কমবে, যাতে বেঁচে যাবে অনেক গাছ ও বাঁশ। সবুজের পথে হাঁটতে পরিবেশবান্ধব হতে ব্যাংকগুলোর অনেক পদক্ষেপের একটি ছোট্ট, কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ এটি।

শুধু এটিএম বুথে কাগজ বাঁচানো নয়, অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায়ও পেপারলেস হওয়ার যুগে অনেক আগেই প্রবেশ করেছে ব্যাংকগুলো। তেমনি বিদ্যুৎ সাশ্রয়েও এখন অনেক মনোযোগী সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংক। শুধু সবুজ শিল্পোদ্যোগ গড়ে তুলতে অর্থায়ন নয়, নিজেরাও সবুজবান্ধব হয়ে উঠছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলো এখন সবুজ চর্চার ওপর জোর দিয়েছে। নিজেদের পাশাপাশি অর্থায়নের ক্ষেতে পরিবেশের ক্ষতি করে না এমন গ্রিন প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়- এরকম কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করছে না।

সৌরবিদ্যুৎ তথা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পাশাপাশি সূর্যের আলোর অধিক ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংক ভবনগুলো সবুজ হয়ে উঠছে। বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উপযোগী করে তৈরি এসব ভবন গ্রিন তথা সবুজ ভবন হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পাচ্ছে। এসব ভবন এমনভাবে তৈরি, যেখানে দিনের বেলা সরাসরি সূর্যের আলোয় চলছে কার্যক্রম। আবার সৌর প্যানেল ব্যবহার করে নিজেদের বিদ্যুৎ নিজেরাই উৎপাদন করছে।

সবুজ অর্থায়ন ও ব্যাংকের অভ্যন্তরে সবুজচর্চায় সবগুলো ব্যাংকই কমবেশি তৎপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় ৫৭ বাণিজ্যিক ব্যাংক এরই মধ্যে গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা প্রণয়ন ও ইউনিট গঠন করেছে। জুন ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ৫৬৯ শাখা সৌরবিদ্যুতের আলোয় পরিচালিত হচ্ছে। ২০১২ সালে যেখানে মাত্র ১০১টি শাখা ছিল সৌরবিদ্যুতের আওতায়। তখন কোনো এটিএম বুথে সৌরশক্তির আলো ছিল না। বর্তমানে সব ব্যাংক মিলে ৭ হাজার ১৫ এটিএম বুথের মধ্যে ৯৫টি সৌরশক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

সবুজ ব্যাংকিংয়ের অন্যতম পদক্ষেপ পেপারলেস তথা অনলাইন ব্যাংকিং। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। জুন ২০১৯ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ১০ হাজার ৩৪২ শাখার মধ্যে অনলাইনের আওতায় এসেছে ৯ হাজার ২৫১টি, যা মোট শাখার ৮৯.৪৫ শতাংশ। অথচ নীতিমালা জারির পরের বছর ২০১২ সালেও ৭ হাজার ৯৯৮ শাখার মধ্যে অনলাইনের আওতায় ছিল মাত্র ৩ হাজার ৪২ শাখা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বেশ আগ থেকে অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধায় এগিয়ে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোরও।

২০১২ সাল শেষে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ৪৪২ শাখার মধ্যে মাত্র ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ শাখা অনলাইন সুবিধার আওতায় ছিল। জুন ২০১৯ শেষে ৩ হাজার ৭৬২ শাখার মধ্যে ৩ হাজার ৬৮৮টি তথা ৯৮ দশমিক ০৩ শতাংশ অনলাইনের আওতায় এসেছে। সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৪১৮ শাখার মধ্যে ৪০২টি তথা ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ অনলাইনের আওতায় এসেছে। ২০১২ সালে ১ হাজার ৪১৫ শাখার মাত্র ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ শাখা ছিল অনলাইনে।

এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৯৭ শাখার একটি ছাড়া বাকি সব এখন অনলাইনের আওতায়। ৩ হাজার ৭৮ শাখার মধ্যে ২ হাজার ৭৪১টি ছিল অনলাইন সুবিধার আওতায়। বিদেশি ব্যাংকগুলোয় আগের মতোই ৬৩ শাখার সবকটি অনলাইন সুবিধার আওতায় রয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সবুজ করার ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক এগিয়ে এসেছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম শাহ্?জালাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউতে ১৭তলা নিজস্ব আইকনিক গ্রিন ভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এ ভবন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসজিবিসির লিড গোল্ড সনদপ্রাপ্ত, যা দেশের ব্যাংক খাতের একমাত্র ভবন। অত্যাধুনিক নকশা ও প্রযুক্তিতে তৈরি ভবনটি ৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ও পানি সাশ্রয়ী। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ও খালি জায়গা। ভবনের ছাদ সাজানো হয়েছে বিভিন্ন গাছগাছালিতে।

অন্যদিকে রাজধানীর বাংলামোটরে নির্মিত মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমটিবি টাওয়ার পুরোপুরি সবুজ ভবন না হলেও অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। ব্যবহৃত পানি শোধন করে ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে এবং সৌরশক্তি বসানো হয়েছে। সবুজ ব্যাংকিংয়ে আরও এগিয়ে রয়েছে আল-আরাফাহ্? ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির ১৭৪ শাখার মধ্যে ৬৩টি চলছে সৌরশক্তির আলোয়।

অর্থায়ন বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের আংশিক পরিচালিত হচ্ছে সৌরশক্তির আলোয়। এছাড়া সারা দেশে বিদ্যমান ৩৬১ শাখার মধ্যে ৫৮টি চলছে সৌরবিদ্যুতের আলোয়। পানি, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ কমাতে প্রধান কার্যালয় থেকে সব শাখাকে ২৮ নির্দেশনা দিয়েছে এ ব্যাংক। বিশেষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় ২০১৮ সালে সারা দেশে ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস প্রকল্পের আওতায় এক কোটি গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতি বছর এ বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সরাসরি গ্রিন খাতে ব্যাংকটির বিনিয়োগ রয়েছে ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকার অধিক। এছাড়া অন্যসব বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশবান্ধব উপায়ে নির্মিত কি না, তা যাচাই-বাছাই করে অর্থায়ন করছে।

নিজেদের মধ্যে সবুজ ব্যাংকিংয়ের চর্চার পাশাপাশি এ খাতে অর্থায়ন বাড়াচ্ছে ব্যাংকগুলো। ২০১৩ থেকে ১৮ সাল পর্যন্ত সরাসরি গ্রিন প্রডাক্টে ২৯ হাজার ১৯৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছিল, যা জুন ২০১৯ পর্যন্ত ছয় মাসে বিতরণ করেছে আরও ৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।

প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোর সবুজ শিল্পোদ্যোগে অর্থায়ন বাড়ছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকগুলো আগের বছরের চেয়ে দ্বিগুণ ৯ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে এমন খাতে। ২০১৭ সালে সরাসরি গ্রিন প্রডাক্টে বিনিয়োগ ছিল ৪ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। নিবন্ধটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ-এ। ২০১৬ সালে যা ছিল ৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষের সোচ্চার ভূমিকার ফলে সবুজ কারখানা স্থাপনের সংখ্যা বাড়ছে। এতে বাড়ছে ঋণ চাহিদাও।

গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালার পর ব্যাংকগুলো শুধু বেশি মুনাফা কিংবা সময়মতো টাকা ফেরত আসার প্রস্তাব পেলেও ঋণ না দিয়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এভাবে বৈষয়িক উষ্ণতা রোধ, জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপযোগী কারখানা তৈরিতে উৎসাহিত করা ব্যাংকের লক্ষ্য। নিঃসন্দেহে সবুজ ব্যাংকিং আগামী দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতির জন্য টেকসই উন্নয়নের শক্ত ভিত্তি রচনা করবে।

লেখকঃ মো. জিল্লুর রহমান, ব্যাংকার ও ফ্রিল্যান্স লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button