আয়কর

আয়কর বিষয়ে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর

আয়কর বিশেষ অর্থে আয়ের উপর কর। সরকারি, বেসরকারি, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান এর কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের উপর সাধারণত আয়কর আরোপ করা হয় বিধিসম্মত নিয়মে। আয়কর হচ্ছে সরকারি রাজস্ব বা আয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আয়কর বিষয়ে সাধারণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন অনেকে। এনবিআরের ওয়েবসাইট থেকে তাদের জন্য কিছু তথ্য এখানে তুলে ধরা হলো-

আয়কর কাকে দিতে হবে
দেশের যেসব ব্যক্তি করদাতা, হিন্দু যৌথ পরিবার, অংশীদারি ফার্ম, ব্যক্তিসংঘ ও আইনের দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম ব্যক্তির আয় তিন লাখ টাকার বেশি, তাদের আয়কর দিতে হবে। নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক করদাতার আয় সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হলে কর দিতে হবে। প্রতিবন্ধীদের বেলায় আয়ের পরিমাণ চার লাখ টাকার বেশি হলে করের আওতায় আসবে। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার আয় সাড়ে চার লাখ টাকার বেশি হলে তিনি কর দেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

ন্যূনতম কর কী
করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম করলে করদাতাকে এলাকাভেদে নূ্যনতম যে কর পরিশোধ করতে হয়, তাকে নূ্যনতম কর বলা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নূ্যনতম কর পাঁচ হাজার টাকা। অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকায় চার হাজার এবং সিটি করপোরেশনের বাইরে নূ্যনতম কর তিন হাজার টাকা।

আয়কর নিবন্ধন কী
ব্যক্তি করদাতার আয় যদি করমুক্ত আয়ের বেশি হয়, তাহলে তাকে আয়কর নিবন্ধন নিতে হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত যে কোনো আয়কর কমিশনারেটের অধীন সার্কেল থেকে ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেওয়ার মাধ্যমে নিবন্ধন নিতে হয়। এ ছাড়া ২৬ ধরনের কার্যক্রম রয়েছে, যেখানে টিআইএন নিবন্ধন থাকা প্রয়োজন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ই-টিআইএন কী
ই-টিআইএন হচ্ছে ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর। যাকে আয়কর নিবন্ধনের আধুনিক সংস্করণ বলা হয়। করদাতা যাতে সহজে টিআইএন নিবন্ধন নিতে পারেন, সেজন্য এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
কোন কর অঞ্চলে নিবন্ধন করবেন

প্রত্যেক শ্রেণির করদাতার আয়কর অধিক্ষেত্র নির্ধারণের কিছু পদ্ধতি রয়েছে। করদাতার কর্মস্থল, করদাতার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, চাকরি বা ব্যবসার ধরন, মূল আয়ের উৎস ইত্যাদি বিবেচনায় কর অধিক্ষেত্র নির্বাচিত করা হয়ে থাকে। www.incometax.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে jurisdiction finder বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে করদাতার অধিক্ষেত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে। এ ছাড়া নতুন করদাতা অনলাইনে টিআইএনের আবেদন করলে টিআইএন সনদের সঙ্গে কর অঞ্চল ও কর সার্কেল উল্লেখ থাকবে।

টিআইএন সনদ কী
করদাতা কর দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো সার্কেলে আবেদন করলে সার্কেল থেকে উপকর কমিশনার করদাতাকে শনাক্ত করতে যে সনদ দিয়ে থাকেন, তাকে টিআইএন সনদ বলে।

আয়কর সনদ কী
করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিলে কর সার্কেল তা যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন শেষে করদাতাকে কর পরিশোধের একটি সনদ ওই সার্কেলের উপকর কমিশনার দিয়ে থাকেন। এ সনদই আয়কর সনদ।

কীভাবে ঠিকানা পরিবর্তন করবেন
বিষয়টি বেশ সহজ করা হয়েছে। www.incometax.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়। এই ওয়েবসাইটে লগইন করে চেঞ্জ কন্ট্রাক্ট মেন্যুতে ক্লিক করুন। স্ট্ক্রিনে নতুন ফরম চলে আসবে। প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে নিচে কেন তথ্য পরিবর্তন করলেন, তার কারণ ‘আপডেট বক্স’-এ লিখুন। এরপর সেভ বাটনে ক্লিক করলে আপনার তথ্য হালনাগাদ হয়ে যাবে।

কীভাবে নিবন্ধন বাতিল করা যাবে
কোনো কারণে করদাতার আয় করযোগ্য আয়ের নিচে নেমে যায় এবং নিকট ভবিষ্যতে তা আর করযোগ্য আয়ের মধ্যে আসার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে করদাতা নিজ সার্কেলের উপকর কমিশনার বরাবর নিবন্ধন বা টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারেন। উপকর কমিশনার তদন্ত বা শুনানির মাধ্যমে অথবা শুধু আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করদাতার টিআইএনের কার্যক্রম স্থগিত বা বাতিল করতে পারেন।

আগাম আয়কর কী
আগাম আয়কর বা এআইটি এক ধরনের কর, যা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আমদানি করা পণ্যের ওপর অর্পিত হয়। অনিবন্ধিত আমদানিকারকদের করের আওতায় আনতে ২০০৭ সালে এ কর চালু করা হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এআইটি একইভাবে উইথহোল্ডিং করের মতো গণ্য হবে।

কোন আয় করমুক্ত
সরকারি চাকরিজীবী যদি চাকরির দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো বিশেষ ভাতা, সুবিধা ও আনুতোষিক পান, তা করমুক্ত। পেনশন, অংশীদারি ফার্ম থেকে পাওয়া মূলধনি মুনাফার অংশ, আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি, স্বীকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে পাওয়া টাকা, শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেন্ট ফান্ড থেকে টাকা পেলে সেক্ষেত্রে কর দিতে হয় না। রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি জেলার আদিবাসীদের দ্বারা জেলাগুলোতে পরিচালিত আর্থিক কর্মকাণ্ড থেকে আয় করমুক্ত। কৃষি খামার, হাঁস-মুরগির খামার ও হ্যাচারি থেকে আয়ের একটি অংশ করমুক্ত।

কোন ধরনের দান রেয়াত পায়
যাকাত তহবিলে দান, এনবিআর অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতাল ও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দানে কর রেয়াত রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক, আহ্‌ছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল, আইসিডিডিআর,বি ও সিআরপি সাভারে দান কর রেয়াত পেয়ে থাকে। এ ছাড়া সরকার অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠান, জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান এবং এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশে দান করা অর্থ কর রেয়াত পায়। এসব ক্ষেত্রে করদাতার দানের পরিমাণ মোট আয়ের ৩০ শতাংশ বা দেড় লাখ টাকার মধ্যে যা কম, তার বেশি হতে পারবে না।

বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তির ক্ষেত্রে
বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি সন্তানদের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন হবে। সম্পত্তি সন্তানদের সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রমাণপত্র হিসেবে বণ্টননামা দলিল বা দানপত্র দলিল বা অন্য কোনো যৌক্তিক প্রমাণ থাকতে হবে। বাবার সম্পত্তি যেহেতু সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, সেজন্য এ সম্পত্তির ওপর কোনো কর ধার্য হবে না। এ ক্ষেত্রে উপকর কমিশনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাবার মৃত্যুর পর টিআইএনের কী হবে
বাবার মৃত্যুর পর টিআইএন বাতিল করার প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে তার উত্তরাধিকারদের ওপর। যদি এমন কোনো ব্যবসা বাবার নামে থাকে যে, টিআইএন বাতিল করলে ওই ব্যবসার সব কাগজ বাতিল করে নতুনভাবে করতে হবে বা বড় ধরনের জটিলতা দেখা দেবে, সেক্ষেত্রে টিআইএন বাতিল না করে উত্তরাধিকারীরা প্রতিবছর রিটার্ন দাখিল করে মূল্যায়ন করাতে পারবেন। যদি টিআইএন বাতিলে কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়, তাহলে উত্তরাধিকারীরা বাতিলের জন্য উপকর কমিশনারের কাছে আবেদন করতে পারবেন। উপকর কমিশনার তদন্ত বা শুনানি বা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল করতে পারেন।

আরও দেখুন:
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করবেন কিভাবে?
করযোগ্য আয় বের করবেন যেভাবে
আয়করের রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম

রিটার্ন দাখিল না করার শাস্তি কী
রিটার্ন দাখিল না করলে কর অঞ্চল খেলাপি করদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথমে নোটিশ করবে। পাশাপাশি সর্বশেষ পরিশোধ করা করের ১০ শতাংশ অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা করবে। এরপর রিটার্ন দাখিল না করার জন্য প্রতিদিন ৫০ টাকা করে জরিমানা আরোপ করা হবে। তবে কোনো ব্যক্তি করদাতা, যার আয়ের ওপর আগে কখনও কর ধার্য হয়নি, তিনি রিটার্ন দাখিল না করলে জরিমানা হবে। তবে সেই জরিমানার পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার বেশি হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button