ব্যাংক সার্ভিস

ফ্রন্ট ডেস্ক সার্ভিস

ফ্রন্ট ডেক্স থেকে যারা গ্রাহকদেরকে সার্ভিস দিয়ে থাকেন তাদের অভিজ্ঞতার ঘাটতি নেই৷ ব্যাংকিং সেক্টরে তাদের অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়ে থাকে৷

সকাল সকাল মাসিক ডিপিএস খুলতে এসেছিলেন এক দম্পতি। দুজনেই অল্প বয়েসী। মেয়েটার ভেজা চুলের সিঁথিতে টকটকে লাল সিঁদুর। আচার-আচরণ দেখলেই বোঝা যায়, রিসেন্টলি বিয়ে হয়েছে। একটু পরপরই স্বামী তার স্ত্রীর কাছে ঘেঁষে ফিসফিস করে শলা পরামর্শ করছে।

আমি বললাম— কত টাকার ডিপিএস খুলবেন? ছেলেটি বলে ফেললো দুই হাজার টাকা স্যার। বলেই আবার মেয়েটির দিকে তাকায়। মেয়েটি ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম কয় বছর মেয়াদী? ছেলেটি মেয়েটির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে। তিন বছর করেন স্যার। মেয়েটি আবার ছেলেটির কানের কাছে কি একটা বলতেই মুচকি হেসে ছেলেটি বলে— আগে হোক তো!

কি হবে, বুঝলাম। এই সময়ে একজন লম্বা জুব্বা, টুপি ও দাড়িওয়ালা লোক আমার সামনে এসেই লম্বা সালাম দিলো। লোকটির গায়ের আতরের গন্ধে পুরা ব্যাংক ভরে যাচ্ছিলো।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

প্রচন্ড ভিড়, কাজ করতে করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছিলো। আমার ব্যস্ততা দেখে লোকটি আফসোসের সুরে বলতে থাকে— বুঝলেন স্যার, এই দুনিয়ার কাম কোনো কামই না। আসল কাজতো আখিরাতের…

আমি ভাউচারে উনাকে সাইন দিতে বললাম। লোকটি হঠাৎ হিসেবি হয়ে উঠলেন— স্যারের বোধহয় ভুল হচ্ছে, তিন মাসের সুদ তো আরও আসার কথা! আমি উনাকে বুঝিয়ে দিলাম, ভ্যাট ট্যাক্সের ব্যাপার স্যাপার। লোকটি দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে আবার— এই দুনিয়ার কাম কাজ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে লাগলেন।

ফরেন রেমিটেন্স নিতে একজন লোক আসলেন। তাকে সেবা দিতে ছুটে গেলাম। এর মাঝেই একটা কাগজ নিয়ে এসে মধ্য বয়েসি মহিলা বললেন— একাউন্টটা সচল আছে কিনা দেখে দিতে হবে। আমি আবার ছুটি। দেখে বললাম— হ্যাঁ সচল আছে। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন— ঠিক তো, একাউন্ট বন্ধ হয় নাই? আমি নিশ্চিত করলাম, না না বন্ধ হয় নাই। মহিলাটি কি ভেবে চলে গেলেন।

লোন সেকশনে সেদিন একজন সত্তোর্ধ বৃদ্ধ এসেছেন। সাথে তাঁর ছেলে। আমি নাম ধাম জিজ্ঞেস করছিলাম। লোকটি কোনমতে উত্তর দিচ্ছিলেন, মাঝে মাঝে উনার ছেলেও সাহায্য করছিলো। চাচা কোন গ্রাম? বৃদ্ধ লোকটি দুইটা কাশির মাঝখানে উত্তর দিলেন— পাতিলাপাড়া। আপনার বাবার নাম? বললেন। আবার জিজ্ঞেস করলাম— আপনার স্ত্রী? লোকটি কিছুক্ষণ ভেবে ছেলেকে জিজ্ঞেস করে— কিরে আওলাদ তোর মায়ের নামডা জানি কী? আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। লজ্জা মুখে বৃদ্ধ নিজেই আবার সাফাই দিলেন—সেই কবেকার কথা…

সেদিনের সেই মহিলাটা আবার কাগজে নাম্বার লিখে এনেছেন। স্যার একাউন্টটা কী সচল? আমি দেখে বললাম, হ্যাঁ সচল আছে তো! আপনি না সেদিনও একাউন্টটা দেখতে আসছিলেন? মহিলা কিছু বলেন না। চুপচাপ চলে যায়।

কয়েকদিন পর আবার সেই মহিলা। হাতে কাগজ। একাউন্ট সচল আছে কীনা দেখবে। আমার সন্দেহ হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম, একাউন্টটা তো আপনার না। একাউন্টের মালিক আপনার কে হয়? মহিলা চুপ করে থাকে। আমি চরম বিরক্তি নিয়ে বললাম— সচল আছে তো চাচী। এইভাবে অন্যের একাউন্ট চেক করার নিয়ম নাই। বলেই আবার কাজে ডুব দিলাম।

সারাদিন পর ব্যাংক শেষ করে বের হচ্ছি। ব্যাংকের নিচে একটা বাটি হাতে করে সেই মহিলা। আমার সামনে এসে বললেন, একাউন্টটা আমার ছেলের স্যার। তিন মাস আগে এক্সিডেন্টে মারা গেছে। ছেলে তো আর নাই, কি করব স্যার! ওর কথা মনে হলে একাউন্টটা দেখতে আসি। যখন শুনি একাউন্টটা সচল আছে, মনে হয় আমার ছেলেটাও বেঁচে আছে। বলেই চোখ মুছতে মুছতে বাটিটা আমার হাতে দিয়ে বললেন—তেলের পিঠা স্যার। আমার ছেলেটার খুব পছন্দের ছিলো…

কার্টেসিঃ কামরুজ্জামান কাজল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button