ব্যাংকার

ফাঁকিবাজি মানে জুলুমবাজি

মনে করুন আপনার পাঁচ বিঘা ধান ক্ষেতে ধান পেকেছে। ধান আজই কাটা জরুরি। ধান কাটার জন্য কিছু কামলা লাগালেন চুক্তিভিত্তিক। শর্ত হলো আজই ধান কেটে শেষ করতে হবে। তার বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা তাদের দিবেন এবং তারা তা সমানভাবে ভাগ করে নিবে।

কামলারা ধান কাটা শুরু করলে সবাই যে সমান সংখ্যক আঁটি ধান কাটবে এমনটি নয়। কেউ দশ/বিশ আঁটি বেশি কাটবে আবার কেউ দশ/বিশ আঁটি কম কাটবে। কারণ সবার সামর্থ্য তো সমান নয়। এতে কোনো সমস্যা হয় না। কোনো কামলা দশ/বিশ আঁটি কম কাটলেও তার সহকর্মীরা মিলেমিশে ধান কেটে শেষ করে ফেলবে, তাতে তারা কেউ কিছু মনে করবে না।

কিন্তু একজন কামলা যদি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছেকৃতভাবে ফাঁকিবাজি করে অন্যান্য কামলাদের তুলনায় দুইশো/ তিনশো আঁটি ধান কম কাটে তাহলে কী মেনে নেওয়া যায়? যায় না। কারণ চুক্তি হলো আজই ধান কেটে শেষ করতে হবে। আর ধান কেটে শেষ করতে হলে ফাঁকিবাজ কামলা যতো আঁটি ধান কম কেটেছে তা অন্যান্য সব কামলা মিলে কাটতে হবে। এখন আপনিই বলেন, কোনো ফাঁকিবাজ কামলা যদি ইচ্ছেকৃতভাবে এমন ফাঁকিবাজি করে তাহলে সে কী কোনো নৈতিক কাজ করলো নাকি অনৈতিক কাজ করলো? সে কী তার অন্যান্য সহকর্মীদের উপর জুলুম করলো না?

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

আপনি একটি অফিসে চাকরি করেন। আপনার বস অফিস অর্ডার অনুযায়ী আপনাদেরকে কাজ ভাগ করে দিয়েছেন। কিন্তু আপনি ফাঁকিবাজি করেন। আপনাকে নিয়ে বস বড় বিপদে আছেন। তিনি আপনাকে যে কাজই দেন তা শেষ না করে আপনি তাইরে নাইরে করেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

১. আপনি কাজ রেখে অফিসের ফোন দিয়ে বউ-শালা-শালী ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সাথে গল্পে মেতে উঠেন।
২. আপনি অফিসের কাজ করবেন বলে অফিসের বাইরে গিয়ে নিজের জন্য জমি খুঁজছেন, বাড়ি খুঁজছেন। সুযোগ পেয়ে কিনছেন আবার বিক্রি করছেন। জমি বা বাড়ি কেনাবেচার দালালি করছেন অর্থাৎ দালালি করাকে আপনি দ্বিতীয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
৩. আপনি বিশাল অট্টালিকা গড়ছেন। অফিসে বসে রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, খোয়া কিনছেন। নির্মাণ শ্রমিকদেরকে অফিসে বসেই তদারকি করছেন, ধমক দিচ্ছেন।

৪. বাজারে আপনার দেনাপাওনা অনেক। পাওনা টাকা তোলার জন্য অফিসে বসে ফোনে ঝগড়া-ঝাটি করছেন অথবা কোনো পাওনাদার আপনার কাছে টাকা চাইলেই তার সাথে ঝগড়া করে সময় কাটা‌নো আপনার নিত্য নৈমিত্তিক কর্ম।
৫. দুপুরে লাঞ্চ করার পর কাইলুলা করা সুন্নত। তাই আপনি রেস্টরুমে অথবা স্টোর রুমে গিয়ে আধাঘন্টা বা একঘন্টা ঘুমান।
৬. ছয়টা পর্যন্ত অফিস টাইম হলেও আপনি নিয়মিত পাঁচটা বাজতে না বাজতেই অফিস ত্যাগ করেন আর বলতে থাকেন জীবনে অনেক কাজ করেছি আর কতো?

৭. প্রতি বৃহস্পতিবার আপনাকে গ্রামের বাড়ি অথবা শহরের বাড়ি কোথাও না কোথাও যেতেই হবে। তাই তিনটা বাজতে না বাজতেই আপনি বসকে বলে বের হয়ে পড়েন। আপনার অবশিষ্ট কিছু কাজ পাশের টেবিলের সহকর্মীকে করে দিতে বলেন।অথচ আপনি কোনোদিন তার কোনো কাজে সহযোগিতা করেন না।

৮. আপনাকে পনেরো দিন CL কাটাতেই হবে। আরে, CL না কাটিয়ে CL ফাঁকা রেখে লাভ কী! বছর শেষে তা তো পঁচেই যাবে! তাই আজ নিজের শরীরটা ম্যাসম্যাস করছে, কালকে বউয়ের পেটে ব্যথা, পরশু ছেলের দাঁতে ব্যথা তারপরদিন মেয়েটার জ্বর-সর্দি এসব বলে আপনি আপনার পনেরোদিন CL ভোগ করছেন গুনে গুনেই। ভালো কথা, গুনে গুনে আপনার CL/PL আরো অন্যান্য সুবিধা যা আছে তাতো ভোগ করছেন। কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠান আপনাকে যে দ্বায়িত্ব দিয়ে একটি ডেস্কে বসিয়েছে তা কি পুরোপুরি পালন করছেন?

উপরে উল্লেখিত ধান কাটার মতোই আপনার অফিসের দিনের কাজগুলো দিনেই শেষ করতে হয়। তারপরও আছে নানা unseen কাজ-যেগুলো ওইসব অফিসারদের চোখে পড়ে যারা কাজ করে, আপনার চোখে পড়ে না। আপনাকে বস যে কাজগুলো করতে বলেছেন তা আপনি করলেন না। বাধ্য হয়ে সে কাজটা অন্যকোনো সহকর্মীকে করতে হচ্ছে। তার নিজের কাজ শেষ করার পরও আপনার অবশিষ্ট কাজও তাকে করতে হয়। অনেক সময় বস বাধ্য হয়েই যারা কাজ করে তাদেরকেই আরো কাজ চাপিয়ে দেন। কারণ আপনার মতো ফাঁকিবাজদের দিলে কাজ শেষ হয় না, পেন্ডিং থেকে যায় দিনের পর দিন।

তাহলে আপনি বলুন আপনি ফাঁকিবাজি করে যে কাজটুকু করছেন না, তা কি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আপনার অন্য সহকর্মীদের ঘাড়ে চাপছে না? আর আপনার ফাঁকিবাজির ফলে তারা কি জুলুমের শিকার হচ্ছে না?

অবশ্যই, আপনি ফাঁকিবাজি করছেন বলে অন্য সহকর্মীরা জুলুমের শিকার হচ্ছেন। আর এ জুলুমের বিচার কিন্তু একদিন না একদিন হবেই। অতএব, আসুন ফাঁকিবাজি না করে যার যার দ্বায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করি যাতে করে অন্যান্য সহকর্মীদের জুলুমের শিকার হতে না হয়।

লেখকঃ বেলাল হোসেন ফকির, ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button