ব্যাংক হিসাব

হিসাব খোলার নতুন ফরম, ই-কেওয়াইসি ও প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ

বেশির ভাগ মানুষের কাছেই ব্যাংকিং মানে হচ্ছে ব্যাংকে একটি হিসাব থাকা। আর ব্যাংক হিসাবে এসব গ্রাহক মূল যে কয়েকটি সুবিধা খুঁজেন, তা হচ্ছে- নিজের টাকা জমা রাখা, অন্য ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আনা, বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা পাঠানো। তবে এই কয়েকটি সুবিধা বিকাশ, রকেট ও নগদের মত মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতারা যত সহজে ও দ্রুততার সাথে দিতে পারছে, তা প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে ছোট-বড় সব লেনদেনের জন্যই প্রায় একই নিয়মাচার অনুসরণ করতে হয়। এ কারণে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদির জনপ্রিয়তা, প্রসার, গ্রাহকের সংখ্যা ও সেবার ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। ছোট অংকের লেনদেনগুলো এখন তাদের দখলে চলে গেছে বললেই চলে। আর তাদের উত্থান ও প্রসারের মূল কারণ হচ্ছে- তারা প্রান্তিক আয়ের এবং অল্প শিক্ষিত এমনকি মূর্খ মানুষের আর্থিক অন্তর্ভূক্তি ও প্রবেশাধিকারকে সহজতর করেছে, যা নিয়মতান্ত্রিকতায় বন্দি ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখনো তেমনভাবে পারেনি। এর ফলে দিন দিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটলেও, ব্যাংকগুলো তাদের হিসাব খুলার প্রক্রিয়া সহজীকরণ না করতে পারার দরুন এবং মানুষের কিছুটা অজ্ঞতার কারণেও এখনো দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়ার কারণে ১০ টাকায় কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের ব্যাংক হিসাব খোলার বিধান ২০১০ সাল থেকে চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এসব গ্রাহকের হিসাবে প্রাথমিক জমায় ছাড় থাকলেও, হিসাব খোলার প্রক্রিয়া এবং কাগজপত্রের চাহিদায় তাদেরকে তেমন কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। তাদের জন্যও ১০-১৫ পাতার হিসাব ফরমে প্রায় ১৫০টি ঘর হাতে লিখে পূরণ করতে হয়। ফরমে লেখার পর একই তথ্যগুলো আবার ব্যাংকিং সফটওয়্যারে এন্ট্রি করে তারপর হিসাব খুলতে হয়। এতে করে একটি হিসাব খুলতে দ্বিগুণ সময় লেগে যায়, যা গড়ে প্রায় ৪৫ মিনিটের মত। গ্রাহকের ওয়েটিং টাইম বিবেচনা করলে এই সময়টাও দ্বিগুণ হয়ে দেড়-দুই ঘন্টায় পর্যবসিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই হিসাব চালু হতে সময় লেগে যায় আরো প্রায় সপ্তাহখানেক। সে কারণে অনেকেই ব্যাংকে হিসাব খুলতে উদ্বুদ্ধ হন না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা এবং কার্যক্রম চলার পরও আর্থিক অন্তর্ভূক্তির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।

এরই প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশক্রমে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক গেল ২৩ ফেব্রুয়ারির বিআরপিডি সার্কুলার নং-০২ এর মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি যাচিত কাগজপত্র ও জিজ্ঞাসিত তথ্যের সংখ্যা কমিয়ে হিসাব ফরম দুই পৃষ্ঠায় সীমিত করে এনেছে, যা জুন মাসের মধ্যেই প্রচলনের নির্দেশনা ছিল। ২০১৯ সালের ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বরে ‘দৈনিক শেয়ার বিজ’ পত্রিকায় ‘ব্যাংক খাতের তারল্যসংকট ও কিছু কৌশলগত প্রতিকার’ শিরোনামে প্রকাশিত হওয়া আমার লেখা নিবন্ধে আমি এমনটাই প্রস্তাব করেছিলাম। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একই উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ, গণমানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার প্রসার তথা ঘরে বসেই ব্যাংক হিসাব খুলা ও লেনদেনকে সম্ভব করতে চলতি বিছরের জানুয়ারি মাসে ডিজিটাল কেওয়াইসি/ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক নো ইওর কাস্টমার) পদ্ধতি চালুর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এবং তফসিলি ব্যাংকগুলোকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই তা বাস্তবায়নের সময়সীমা বেধে দিয়েছে।

নতুন নিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচয়দানের শর্তে শিথিলতা এনেছে। চার ধরনের হিসাবে শুধু ‘ব্যক্তিক হিসাব’ ও ‘স্থায়ী আমানত/সঞ্চয়ী স্কিম/বিশেষ স্কিম হিসাবে’ পরিচয়দানকারীর বিধান রাখা হয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে হিসাব খুললে পরিচয়দানকারীর প্রয়োজন হবে না। আর পরিচয়দানকারীর নিজের হিসাব থাকাও এখন আর বাধ্যতামূলক নয়। আমি মনে করি, এটাও খুবই যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক। কারণ, ব্যাংক যখন সুপ্রিতিষ্ঠিত একটি এমএফআই, যেমন আশা’র একটি হিসাব খুলবে তখন এখানে পরিচয়দানের প্রয়োজনীয়তা আছে কি? যদি থাকেই, তাহলে বরিশাল নিবাসী ম্যানেজার, কক্সবাজার নিবাসী মাঠ সহকারী দুইজন হিসাব পরিচালনাকারী হলে, আর কিশোরগঞ্জস্থ একটি ব্যাংকে যদি আশা’র বা কর্মকর্তাদ্বয়ের ব্যক্তিগত স্যালারি হিসাব খুলতে চায়, তাহলে পরিচয়দানকারী কোথায় পাবে? কোনো কিশোরগঞ্জ নিবাসী, যার সাথে হিসাব পরিচালনাকারীদের কোনো চেনাজানা নেই, তিনি কীভাবে তাদেরকে ব্যাংকের নিকট পরিচয় করিয়ে দিবেন? প্রত্যেক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংককেই স্থানীয় সোনালী ব্যাংকে হিসাব খুলতে হয়। অথবা, আন্তব্যাংক নগদ অর্থ রেমিট্যান্সের সুবিধার্থেও এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারে। এক্ষেত্রে পরিচয় প্রদানের প্রয়োজনীয়তা কী?

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

হিসাব খুলতে চাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলভুক্ত এসব ব্যাংকের সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন, মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেল অব এ্যাসোসিয়েশন, সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট অব বিজনেস, শাখা খুলার অনুমতিপত্র ইত্যাদি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? এসব ক্ষেত্রে হিসাব খুলতে চাওয়া প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন, প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদিত কর্মকর্তা কর্তৃক হিসাব পরিচালনাকারীদের সত্যায়িত জাতীয় পরিচয়পত্র, অফিস আইডি ও আলোকচিত্র নিলেই যথেষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠিত এমএফআই এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক রেগুলেটেড ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব খুলতে গিয়েও যদি হিসাব ফরমে বা কম্পিউটারে পরিচয়দানকারীর হিসাব নম্বরটি উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক হয়, তখনই বাধে বিপত্তি।বর্তমান সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়ন করতে ব্যাংক সেবায় সাধারণ মানুষের অন্তর্ভুক্তির বিকল্প নেই। কারণ, মানুষের পকেটে, মানি ব্যাগে, পারসে, মাটির ব্যাংকে, সিন্দুকে, বালিশের ভিতরে ও তোশকের নিচে পড়ে থাকা অর্থ আর ব্যবসায়ীর ক্যাশবাক্সের অলস অর্থ যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে না আনা যায়, তাহলে মোট আমানত সম্পর্কে যেমন সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না; ঠিক তেমনি, অর্থের প্রবাহ তথা হাত বদল না বাড়লে উন্নয়নে গতিশীলতা আসবে না। এ জন্য ব্যাংকিং সেবার সহজীকরণ এবং ডিজিটাইজেশনের বিকল্প নেই। দীর্ঘ হিসাব খোলার ফরম এবং কাগজপত্রের লম্বা ফর্দকে অনেকেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অন্তরায় হিসেবে সমালোচনা করে আসছিলেন। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ভিন্ন মাত্রা পাবে।

নতুন শাখা খুলার পর, প্রথম দিকে যে হিসাবগুলো খুলা হয়, সেগুলো নিশ্চয় ওই ব্যাংকেরই গ্রাহক কর্তৃক পরিচয়দান সম্ভব হয় না। অর্থ্যাৎ, গণ্যমান্য এবং এলাকার সুপরিচিত কাউকে দিয়েই পরিচয়প্রদান কার্য সম্পাদন করা হয়। এই সত্যিটা জানার পরও চলতি হিসাবে সঞ্চয়ী গ্রাহকগণকে পরিচয়দানকারী হিসেবে এ্যালাউ করেন না কেউ কেউ। অন্যদিকে পরিচয়দানকারী হিসেবে শুধু নিজের শাখার/ব্যাংকের সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাবধারী গ্রাহককে ছাড়া অন্য গ্রাহককে (যেমন স্কিম হিসাবধারী গ্রাহকগণ বা অন্য ব্যাংকের গ্রাহক) বা হিসাবধারী ব্যতীত অন্য ব্যক্তিকে অনুমোদন না করার কারণে হিসাব খুলতে আসা সাধারণ অনেক মানুষকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। কারণ, অনেকেই পরিচয়দানকারী হিসাবে হিসাবধারী কাউকে ম্যানেজ করতে পারেন না, আবার পারলেও দেখা যায় প্রস্তাবিত ওই পরিচয়দানকারী গ্রাহকের কোনো সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাব নেই, এফডিআর বা স্কিম হিসাব আছে। নতুন নিয়মে এসব কড়াকড়ি থেকে রেহাই পাবেন গ্রাহকগণ।

হিসাব খুলার সময় হিসাবধারী গ্রাহকের একটি ডিজিটাল ইউনিক কাস্টমার আইডি (কাস্টমার ইনফরমেশন ফরম- সিআইএফ) তৈরি করতে হয়, যেখানে গ্রাহকের ব্যক্তি সংক্রান্ত সকল তথ্যাদি, যেমন- নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম, পিতা ও মাতার নাম, এনআইডি নম্বর, টিআইএন নম্বর, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি সন্নিবেশিত থাকে। অর্থাৎ, বিদ্যমান প্রত্যেক গ্রাহকেরই একটি তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করে ব্যাংক। কিন্তু এই বিদ্যমান গ্রাহকের কেউই যখন ব্যাংকে ২য় বা ৩য় আরেকটি হিসাব খুলতে আসেন, তার কাছে ব্যাংকাররা আবার পরিচয়পত্র, ছবি, পুরণকৃত হিসাব ফরম, পরিচয়দানকারী চান। কিন্তু সিআইএফ-এ ওই গ্রাহকের সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও এবং নতুন খুলতে চাওয়া হিসাবে আগের নমিনিকেই বহাল রাখতে চাইলে, সে হিসাবে ব্যক্তি এবং নমিনি সংক্রান্ত তথ্য পূরণ করা, পুণরায় এনআইডি, ছবি ইত্যাদি চাওয়াটা গ্রাহকের জন্য যেমন বিড়ম্বনা, ব্যাংকারের জন্যও বাড়তি কাজ ও সেবায় কালক্ষেপণ।

কারণ, বিদ্যমান কোনো গ্রাহক পরবর্তীতে অন্য কোনো হিসাব, যেমন- এফডি বা স্কিম হিসাব খুলতে গেলে তার বিদ্যমান সিআইএফ ব্যবহার করেই তা করতে হয়। তাহলে নতুন হিসাবের জন্য পূণরায় হিসাব ফরম কেন পূরণ, এনআইডি ও ছবি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। গ্রাহকদের কাছে এসব চাইলে তারাও বলেন, ‘এগুলোতো আগের হিসাবেই দেয়া আছে, আবার চাইছেন কেন’; এবং আমার মতে, তাদের এ জিজ্ঞাসাটা অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ, এক্ষেত্রে বিদ্যমান সিআইএফ ব্যবহার করে শুধু হিসাবের শর্ত ও বৈশিষ্ট্যসংবলিত তথ্যাদির (জমাকৃত টাকা, সুদের হার, মেয়াদ ইত্যাদি) পাতাটি পূরণ করে গ্রাহকের স্বাক্ষর নিয়ে নিলেই হয়। ব্যক্তিসংক্রান্ত ও অন্যান্য তথ্যে মৌলিক কোনো পরিবর্তন থাকলে তা হালনাগাদ করে নিলেই হবে। এতে সময় বাঁচবে, গ্রাহক সেবা গতি পাবে। এ বিষয়টি আমাদের ব্যাংকগুলো ভেবে দেখবেন নিশ্চয়।

হিসাব খুলার পর ব্যাংকের আরেক করণীয় হচ্ছে গ্রাহকের ঠিকানায় ‘থ্যাংকস লেটার’ পাঠিয়ে তার ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া। এ নিয়মাচার পালন ব্যাংকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা খুব একটা। আবার অনেক গ্রাহকই আছেন, যিনি চান না তার বাড়ির কেউ জানুক যে, তার কোনো ব্যাংক এ্যাকাউন্ট আছে। কারণ এক্ষেত্রে গ্রাহকের ব্যক্তিগত ও আর্থিক গোপনীয়তা নষ্ট হয়, অনেক সময় পারিবারিক সন্দেহ বা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। কারণ, কারো কারো ভাবনায়, ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট থাকা মানেই যেন লাখ লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালান্স থাকা বোঝায়! তাই ব্যাংক এ্যাকাউন্টের কথা জানাজানি হলে গ্রাহকদের বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয় কখনো কখনো।

গ্রাহক লেনদেনে আরেক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নাম ট্রানজেকশন প্রোফাইল (টিপি) বা লেনদেনের অনুমিত মাত্রা। এর ফলে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার এবং নির্দিষ্ট অংকের বাইরে লেনদেন করতে পারেন না গ্রাহক। তবে যদি টিপির সীমা অতিক্রম করে তাহলে টিপি পরিবর্তন করে নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু এতেই বাধছে বিপত্তি। গ্রাহক দেশের বাইরে, কিন্তু তার হিসাবের চেক নিয়ে ব্যাংকে এসে সে অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী- টিপি লংঘিত হচ্ছে বলে। আর টিপি আপডেট করলে হিসাবধারী গ্রাহকের স্বাক্ষর লাগবে, যা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না; কারণ, হিসাবধারী গ্রাহক যে দেশের বাইরে!

একইভাবে আন্তব্যাংক লেনদেনেও (আরটিজিএস, বিইএফটিএন) বড় বাধা এই টিপি। যেমন, বিইএফটিএনের আওতায় অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হয়ে আসা গ্রাহকের প্রবাসী স্বজনের পাঠানো টাকা টিপির কারণে ফেরত চলে যাচ্ছে, যা প্রবাসীদের হয়রানিতে ফেলছে। কারণ, টাকা ক্রেডিট করছে প্রধান কার্যালয়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট হিসাবটি হচ্ছে কোনো না কোনো শাখার নিয়ন্ত্রণাধীন। টিপি হালনাগাদের ক্ষমতা শুধু শাখার, যার ফলে প্রধান কার্যালয় টিপি লংঘিত জমা ফেরত পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও দেখুন:
কারেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
সঞ্চয়ী হিসাব খোলার নিয়ম
শর্ট টার্ম ডিপোজিট (এসটিডি) একাউন্ট খোলার নিয়ম

তবে নতুন নিয়মে নির্দিষ্ট সময় পর পর গ্রাহকের অতীত লেনদেন (বিগত ৬/১২ মাসের) পর্যবেক্ষণ করে টিপি হালনাগাদ করে দিতে বলা হয়েছে ব্যাংককে, যেখানে গ্রাহকের ঘোষণা ও স্বাক্ষরের বিধান তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তি নিশ্চয় কমবে। কিন্তু নিয়মিত প্রতিটি চেকিং একাউন্টের টিপি স্টাডি করে তা হালনাগাদ করা ব্যাংকারের জন্য কষ্টসাধ্য বিষয়। বর্তমানে যেহেতু পজিটিভ পে ইনস্ট্রাকশন নিয়ে চেকের পেমেন্টের বিধান আছে, তাই ব্যাংকিং সফটওয়্যারে টিপির বিধানকে তুলে দেওয়া যেতে পারে, অথবা আরও সহজ করা যেতে পারে। যেমন, যে জমা/উত্তোলন বিগত ৬/১২ মাসের লেনদেনের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে, তা ব্যাংকিং সফটওয়্যারের স্বয়ংক্রিয় ইন্টেলিজেন্স প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে সনাক্ত করে, সে জমা বা উত্তোলনের আগে গ্রাহকের সম্মতি নিলেই বিষয়টি সহজ হয়ে যায় বোধহয়। আর খুব বেশি অসংগতি হলে, লেনদেনের প্রামাণিক দলিল বা কাগজপত্র আগের মত করেই ব্যাংক গ্রাহকের কাছে চাইতে পারে, অথবা সন্দেহের যথেষ্ট কারণ থাকলে সন্দেহজনক লেনদেন বা সন্দেহজনক কার্যক্রম হিসেবে রিপোর্ট করতে পারে।

লেখকঃ মোশারফ হোসেন
শাখা ব্যবস্থাপক, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ও কলামিস্ট

২ মন্তব্য

  1. ধন্যবাদ স্যার, তবে আমার মনে হয় আমরা কাস্টমারের সকল তথ্য সফটওয়্যার এ দেই, এর সাথেই যদি আমরা সেটা প্রিন্ট দিয়ে বের করে কাস্টমারের সাইন নিয়ে ফাইলে রাখি তাহলে ভাল হয়না কি? তাহলে আরো সময় কম লাগবে একাউন্ট খুলতে, আর ফরম পুরনের ও ঝামেলা থাকলো না। সাথে সাথেই আপডেট হয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button