সাম্প্রতিক ব্যাংক নিউজ

সবাই হা-হুতাশ করি যে ব্যাংকের বেতনের টাকায় বরকত নেই, কিন্তু কেন নেই?

আমার চাকরির বয়স তখন ৩ বছর। ব্যাচেলর লাইফ। বেতনও খারাপ না। টেক হোম প্রায় অর্ধ লক্ষ। বছরে ৫/৬ টা বোনাস পাই তা থেকেও ভালো টাকা পেতাম। কিন্তু কোন গচ্ছিত টাকা নেই। ডিপিএসও নেই। ভাবতাম টাকা জমিয়ে কি লাভ। যা আয় করি তা ব্যয় করবো এটাই শান্তি। আমার এক কলিগেরও একই অবস্থা। হঠাৎ দেখি একদিন আমার কলিগ ডিপিএস এর ফর্ম পূরণ করছে। তার স্ত্রী নাকি বলেছে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাতে হবে।

এটা দেখে আমি ও আমার আরো এক কলিগ উৎসাহিত হলাম। আমরাও ভাবলাম একটা ডিপিএস করে ফেলি কয়দিন পর না হয় টাকার দরকার হলে আবার ভেংগে ফেলবো। এই ভাবনাতেই ৩ কলিগ ডিপিএস করে ফেললাম। আমি ৫০০০ টাকার ৫ বছর মেয়াদির টা করলাম। পরের বছর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। সে সময় কাছে কোন গচ্ছিত টাকা নেই। আবার ভাবছি আমি যেহেতু ব্যাংকার গ্রামে একটা প্রেস্টিজ আছে সেহেতু বিয়েতে বড় একটা প্রোগ্রাম, নতুন বৌ এর গহনা না দিলে গ্রামে ও শ্বশুর বাড়ি মান ইজ্জত কিছু থাকবেনা। এসব কথা ভেবে ধার দেনা করে টাকা পয়সা ম্যানেজ করে ধুমধামের সাথে বিয়ের প্রোগ্রাম করলাম।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

টাকা ধার করে হানিমুনে গেলাম দেশের বাহিরে। বিদ্যমান খরচের সাথে নতুন সংসারে খরচ যোগ হয়ে খরচ বেড়ে গেলো। অন্যদিকে ধার দেনা করে ফেলেছি। ডিপিএস চালানোর মত টাকা অবশিষ্ট থাকেনা। কয়েক মাস ডিপিএস এর কিস্তি বন্ধ রাখলাম। ভাবলাম ভেংগে ফেলি। তারপর ভালো করে চিন্তা করে দেখলাম যে যদি ভেংগে ফেলি তাহলে ধারের টাকা কিভাবে শোধ করবো। তাই যত কস্ট হোক এটা চালাতে থাকি। পরে এলএফ এর টাকা দিয়ে বকেয়া কিস্তি পরিশোধ করে আবার নিয়মিত কিস্তি দিতে থাকি পাশাপাশি কিছু অপ্রয়োজনীয় খরচের লাগাম টানলাম। অবশেষে জীবনের প্রথম ডিপিএস এর মেয়াদ পূর্তি হলে সেটা দিয়ে আত্মীয় স্বজনের (ভাই-বোন) ধার শোধ করি। ডিপিএস না থাকলে আমি মনে হয়না এত সহজে টাকা শোধ করতে পারতাম।

এখন বুঝতে পারি কেন আমাদের বেতনের টাকায় বরকত নেই-
১) সামর্থ্যের বাহিরে খরচের প্রবনতা।
২) সবাই আয় করে পরে ব্যয় করে। আর ব্যাংকাররা আগে ব্যয় করে, পরে আয় করে। লোন করে খরচ করে পরে কিস্তি শোধ করি আমরা।
৩) অপ্রয়োজনীয় খরচ বেশি করি।
৪) সোস্যাল স্ট্যাটাস দেখাতে যাই বা নিজেকে বড়াই করে বেশি খরচ করি।
৫) সেভিংসের প্রবনতা কম।
৬) ক্রেডিট কার্ডের অধিক ব্যবহার। মার্কেটে গেলে একটা জিনিস পছন্দ হয়ে গেলেই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিনে নেওয়া।
৭) সুপার শপে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বাজার করা যেখানে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হয়ে থাকে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

উল্লেখিত জিনিস গুলো পরিহার করে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পার্সেন্টেজ ডিপিএস হিসাবে জমাতে পারলে বরকত চোখে দেখা যাবে। কারন একই সাথে চাকরি করে কারো প্রতিমাসে ধার করে চলতে হয় আবার কারো কয়েক লাখ টাকা এফডিআর এর সাথে আরো প্রতি মাসে ডিপিএস এ অনেক টাকা জমা হয়। এটা একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। নিজের জীবন থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। ধন্যবাদ সবাইকে।

লেখকঃ ডালিম হাসান, ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button