ব্যাংকার

সাড়ে ৫ টায় ঘরে ফিরেও তিনি বিশ্বের সেরা ব্যাংকার

অফিসের কর্তা সময়মতো বাড়ি যাবেন, এ যেন আমাদের দেশে স্বপ্নের ব্যাপার। অধিকাংশ দেশীয় প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায়, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তত রাত আটটার আগে বেরোতে পারেন না, যদিও অফিস ছুটি হয় সন্ধ্যা ছয়টায়। কর্তার এই অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ নিয়ে কর্মীরা রসিকতাও করেন: ‘স্যার তো বাসায় ধূমপান করতে পারেন না, তাই এখানেই সব করে যান’ অথবা ‘বাসায় গেলেই যে স্বাধীনতা শেষ, তাই যতক্ষণ পারেন অফিসেই সময় কাটান’।

এসব রসিকতার আড়ালে নির্মম সত্যটা হলো, অফিসে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কারণে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে যে আবার অফিসের খুব লাভ হচ্ছে, তা–ও নয়। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য না থাকলে মানুষের জীবনে শান্তি আসে না।

এত কিছু বলার পেছনের কারণ হলো, দ্য ইকোনমিস্ট সাময়িকীর গত সংখ্যায় যাঁকে পৃথিবীর সেরা ব্যাংকার হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, ভারতীয় ব্যাংক এইচডিএফসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদিত্য পুরি, সেই তিনি কিন্তু বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে অফিস ত্যাগ করতেন। এমনকি প্রায়ই দুপুরে পরিবারের সঙ্গে বাসায় মধ্যাহ্নভোজন করতেন। ইকোনমিস্ট–এর ভাষ্য, সম্ভবত সেটাই তাঁর সফলতার কারণ।

ব্যক্তিগত দিক থেকে এবার অর্থনীতি ও ব্যাংকিংয়ের ধূসর জগতে আসা যাক। দ্য ইকোনমিস্ট–এর ভাষ্যে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার বেলায় আদিত্য পুরি জগতের আর সব ব্যাংকারকে ছাড়িয়ে গেছেন। সাময়িকীটি বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি ব্যাংকের তুলনা করে দেখেছে, আদিত্য পুরি সবার সামনে। তাতে দেখা গেছে, ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এইচডিএফসি ব্যাংক শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর গত সিকি শতকে আদিত্য পুরির নেতৃত্বে এইচডিএফসি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের মোট ১৬ হাজার শতাংশ (কিমুলেটিভ) লভ্যাংশ দিয়েছে। আর এই সময়ে তিনি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মূল্য তৈরি করেছেন। এমনকি সেরা ব্যাংকার হিসেবে খ্যাত জেমি ডিমনের নেতৃত্বে জেপি মর্গানও এত লভ্যাংশ দিতে পারেননি।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

মালয়েশিয়াতে সিটি গ্রুপে বিপুল বেতনে চাকরি করতেন আদিত্য পুরি। সেখান থেকে অর্ধেক বেতনে নবপ্রতিষ্ঠিত ভারতীয় বেসরকারি ব্যাংক এইচডিএফসিতে চলে আসেন তিনি। কিন্তু ভারতের মতো লাইসেন্সরাজের দেশে বেসরকারি খাতের সামনে তখন বন্ধুর পথ। তবে ইকোনমিস্ট মনে করে, তিনটি কারণে আজ তাঁর এই সফলতা। প্রথমত, তাঁর ব্যবস্থাপনাগত দৃষ্টিভঙ্গি: তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্বচ্ছ, সবকিছু একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার অভ্যাস ছিল তাঁর, কথা বলতেন মুখের ওপর অলংকারহীন ভাষায়, আর প্রতিভা ধরে রাখার অভ্যাস ছিল তাঁর। পুরি কোম্পানির প্রতি এত নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন যে হৃদ্​যন্ত্রের অস্ত্রোপচারের বিল দেখে ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হলে চিকিৎসককে পাল্টাপ্রস্তাব দিয়ে বসেন, ‘এইচডিএফসি ব্যাংকের সঙ্গে বেশি বেশি লেনদেন করুন, তাহলে এই টাকা যদি কিছু উশুল হয়।’

সাড়ে পাঁচটায় ঘরে ফিরেও তিনি বিশ্বের সেরা ব্যাংকার
দ্বিতীয়ত, কৌশলগত শৃঙ্খলায় আদিত্য পুরি ছিলেন নিখুঁত। কখন কোথায় কী করতে হবে, সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভারতের ফার্ম ও ভোক্তা শ্রেণির উন্নতি হবে। বিদেশি ব্যাংকের মতো পরিশীলিত কায়দায় তিনি স্থানীয় খুচরা ও বাণিজ্যিক ক্রেতাদের ধরার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্য দিয়ে প্রচুর শাখা স্থাপন করেন তিনি, যার বেশির ভাগই ছিল শহরের বাইরে। তাঁদের এটিএম ও ক্রেডিট কার্ড নেটওয়ার্ক ভারতের বৃহত্তম।

তৃতীয়ত, আদিত্য পুরি বিদেশি উদ্যোগ ও ভারতের ঋণগ্রস্ত টাকার কুমিরকে ঋণ দেননি। ঋণ নয়, আমানতের মাধ্যমে তিনি এইচডিএফসির স্থিতিপত্র পরিপুষ্ট করেছেন, যদিও ২০০৪-০৭ সালে ভারতের ঋণের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। তাতে অনেক মন্দ ঋণও তৈরি হয়েছে। কিন্তু আদিত্য পুরি সে পথে পা বাড়াননি। ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনও ছিল, তাদের ভূমিকাও সহায়ক হয়েছে।

চতুর্থত, এইচডিএফসির প্রযুক্তিগত মনোভাব সাফল্যের ভিত গড়ে দিয়েছে বলে মনে করে ইকোনমিস্ট। তবে বলে রাখা দরকার, আদিত্য পুরি মুঠোফোন ব্যবহার করতেন না। এমনকি ব্যাংকটির সম্মেলনকক্ষে কম্পিউটারও থাকত না। কিন্তু অটোমেশনে বিপুল বিনিয়োগ করে খরচ কমিয়ে এনেছে এইচডিএফসি। ফলে ঋণের অনুমোদন দিতে আগের মতো কয়েক দিন সময় লাগে না, কয়েক সেকেন্ডেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এতে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি নয়।

তবে কিছু প্রশ্নও রেখে গেছেন তিনি। ২০১৮ সালে যাঁকে তাঁর উত্তরসূরি ভাবা হতো, সেই শশীধর জগদীশানের চলে যাওয়া বড় প্রশ্ন তৈরি করেছিল তাঁকে নিয়ে। আবার ব্যাংকটির বড় শেয়ারহোল্ডার হাউজিং ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই কানাঘুষা শোনা যায়, বিনিয়োগকারীরা এমনটাই চিন্তা করছেন।

মালয়েশিয়ায় সিটি গ্রুপের চাকরি ছেড়ে ভারতে আসার ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রীর বড় ভূমিকা ছিল। ফলে বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে অফিস ত্যাগ করা এবং এই সফলতার পেছনে যে ব্যক্তিজীবনের বড় ভূমিকা আছে, তা বলাই বাহুল্য। সে জন্য এই দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি।

সোর্সঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button